নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, দেশের পলিসি মেকার ও একাডেমিয়ান উভয়ের মাঝে সহযোগীতামূলক সম্পর্ক সমাজের জন্য ইতিবাচক কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং গবেষকদের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে । এসময় তিনি আরও বলেন, এতে করে উন্নত দেশগুলোর প্রভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটবে। স্থায়ীত্বশীলতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যাই করিনা কেন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে করা উচিৎ।
নোবিপ্রবিতে দ্বিতীয় বারের মত আয়োজিত ‘মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক ২য় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার (০৮ নভেম্বর ২০২৪) নোবিপ্রবি একাডেমিক ভবন-২ এর ভিসি অন সেমিনার কক্ষে এর উদ্বোধন করেন নোবিপ্রবি ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই কনফারেন্সে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষকগণ অংশ নিয়েছেন। শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি সেই সকল ছাত্রজনতার প্রতি যাঁরা জুলাই বিপ্লবে আত্মদান করেছিলেন। সেই সাথে যাঁদের অঙ্গহানি হয়েছে এবং যাঁরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন তাঁরা সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এই কামনা করছি।
আজকের এই কনফারেন্সটি মূলত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং গবেষকসহ সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি ক্ষেত্র তৈরী করবে যেখানে তারা নিজেদের মধ্যে মত-বিনিময়, আলোচনা, উদ্ভাবন ইত্যাদির দ্বারা নিজেদের, সমাজের এবং সমাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাসহ উদীয়মান বিষয় উত্থাপন করতে পারবে। মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডাটা সায়েন্স এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করে যা আজ সকালেই শুরু হয়েছে এবং আমি মনে করি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রকার আলোচনা সমাজের জন্য একটা ভালো প্রভাব বয়ে আনবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমাদেও শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য এমনকি দেশের মানুষের জন্য বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্য মোটিভেশনের ক্ষেত্র তৈরী করবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে সমাজেকে পরিবর্তন করে। আমি বিশ্বাস করি এই কনফারেন্স নতুন কিছু পথ খুঁজে দিবে কিভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সীর মাধ্যমে উদ্ভাবনের সাথে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ। কিছু মানুষ নিত্য নতুন উদ্ভাবনকে ভয় পায় এটা ভেবে যে তাতে সফল হতে পারবে নাকি ব্যর্থ হবে। যখন সফল হতে পারে তখন সেটাকে ইতিবাচক বলে মনে করে, অন্যথায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে। মূলত উদ্ভাবনের কোন সীমারেখা নেই।
কনফারেন্স সেক্রেটারি মো. শাহরিয়ার সেতুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহামন ভূঞা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অর্গানাইজিং চেয়ার মো. ইফতেখারুল আলম ইফাত এবং তানজিনা ফাতেমা প্রভা।
কনফারেন্সে কী-নোট স্পিকার ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপক ও গবেষক প্রফেসর নিকোলা কাসাবভ, প্রফেসর মোহাম্মদ স্লিম আলুইনি, প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, প্রফেসর সোজো ইনু, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী মনি।
নোবিপ্রবির ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) ও পাঁচটি বিভাগ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসটিই), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) ও পরিসংখ্যান যৌথভাবে ৮-৯ নভেম্বর দুদিনব্যাপী কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। কনফারেন্সে বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের ২১৬ জন গবেষক ৪৬ টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ইভেন্টগুলোর মধ্যে ছিলো টেকনিক্যাল সেশন, কী-নোট সেশন, গ্রাজুয়েট ফোরাম। কনফারেন্সে টেকনিক্যার ট্র্যাকস হিসেবে ছিলেন এআই অ্যান্ড সফট কম্পিউটিং, স্মার্ট সেন্সিং অ্যান্ড সিকিউরিটি, ইমেজিং অ্যান্ড কম্পিউটার ভিশন।
এবার কনফারেন্সে মোট ১৬৪ টি পেপারের মধ্যে ৪৬ টি পেপার চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছে। পেপার গ্রহণযোগ্যতার হার ২৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সে উপস্থাপনকৃত সব পেপার মেশিন ইন্টেলিজেন্স এবং ইমার্জিং টেকনোলজিস নামে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রকাশনীর কার্যপ্রাণালী স্প্রিংগার এর স্কুপাস ইনডেক্সড লেকচার নোটস ইন নেটওয়ার্কস এবং সিস্টেমস এ প্রকাশিত হবে। এমআইইটি ২০২৪ এ ৪১ শতাংশ আন্তর্জাতিক এফিলিয়েটেড পেপার আছে যেখানে ১৪ টি দেশের বিভিন্ন গবেষকরা যুক্ত আছেন।
আগামীকাল শনিবার, কনফারেন্সের সমাপনী সেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
এমআই