সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী,বাকৃবি প্রতিনিধি:
স্বল্পমেয়াদি, উচ্চফলনশীল ও ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট প্রতিরোধী আমন ধানের জাত বিনা ধান২৬ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একদল বিজ্ঞানী। এই জাতটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া এলাকায় কয়েকজন কৃষকের জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক সোহেল মিয়া ৩৩ শতাংশ জমিতে প্রাথমিকভাবে এই স্বল্পমেয়াদি বিনা ধান২৬ রোপণ করেছেন।
কৃষক সোহেল মিয়া জানান, "উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমি বিনা ধান২৬ জমিতে রোপণ করেছিলাম, আশানুরূপ ফলন পেয়েছি। স্বল্পমেয়াদী হওয়ায় আমরা আমন ধান তোলার পরপরই একই জমিতে বিনা সরিষা চাষ করতে পারছি।"
স্থানীয় আরেক কৃষক মোশাররফও ৩৩ শতাংশ জমিতে এই জাতের ধান রোপণ করেছেন। ধান কর্তনের পর তিনি বলেন, "এই জাতের ধানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর শীষ সহজে হেলে পড়ে না। হেক্টর প্রতি প্রায় ৬ টন বা তার অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।"
রবিবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে বিনার একদল বিজ্ঞানী বিনা ধান ২৬-এর শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস আয়োজন উপলক্ষে গফরগাঁওয়ের ওই এলাকায় যান। শস্য কর্তন শেষে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন তারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন 'বিনা ধান ২৬'-এর উদ্ভাবক দলের প্রধান ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ড. শামছুন্নাহার বেগম এবং বিনার ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান ও পিএসও ড. শামীমা বেগম।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু। বিশেষ অতিথি হিসেবে ড. শামীমা বেগম এবং গফরগাঁওয়ের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নীও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ‘বিনা ধান ২৬’-এর উদ্ভাবক দলের প্রধান ড. শামছুন্নাহার বেগম।
বিনা ধান ২৬’-এর উদ্ভাবক দলের প্রধান ড. শামছুন্নাহার বেগম জানান, ‘বিনা ধান ২৬ জাতটি অ্যামাইলোজের পরিমাণে অন্য ধান থেকে বেশি—প্রায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ অ্যামাইলোজ ও ৯ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল রোপা আমন, যা দেশের সব রোপা আমন অঞ্চলে চাষোপযোগী। এর চাষাবাদ পদ্ধতিও অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতো সহজ ও সুবিধাজনক। সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। ফলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দেয়।’
তানহা আজমী