শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বৈষম্যমূলক আয়কর দেশীয় বিড়ি শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
বৈষম্যমূলক আয়কর দেশীয় বিড়ি শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিড়ি প্রাচীন শ্রমঘন একটি শিল্প। দেশের প্রায় ১৮ লক্ষ হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিক বিকলাঙ্গ শ্রমিক বিড়ি কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্য কোন শিল্প কারখানা না থাকায় দরিদ্র, অশিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের ঠিকানা বিড়ি শিল্প।

শ্রমঘন দেশীয় কুটির শিল্প হিসেবে যেখানে বিড়ি আনুকূল্য পাবার দাবিদার, সেখানে বিড়িকে সম্মূখীন হতে হচ্ছে নানাবিধ প্রতিকূলতার। বিগত সরকারের কিছু অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তা এবং বিদেশী বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানীর ষড়যন্ত্রে বিড়ি শিল্পের উপর মাত্রাতিরিক্ত শুল্কারোপ এবং বিড়িতে অতিরিক্ত আয়কর ধার্য্য থাকায় প্রকৃত রাজস্ব প্রদানকারী বিড়ি মালিকরা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

বিড়ি শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা জানান, সিগারেট ও বিড়ি একই গোত্রভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও দুটোর মাঝে বৈষম্য বিরাজ করছে এবং বিড়িকে অসম প্রতিযোগিতায় বাধ্য করা হচ্ছে। বিড়ি শতভাগ দেশীয় প্রযুক্তি ও শ্রমিক নির্ভর শিল্প। এতে ব্যবহৃত সকল কাঁচামাল দেশেই উৎপাদিত। অন্যদিকে সিগারেট সম্পূর্ণ যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি করা হয় এবং এতে বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। অথচ বিড়িতে অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ আর সিগারেটে ৩ শতাংশ। বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রীম আয়করে যে পরিমাণ বৈষম্য রয়েছে তা দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। 

আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা- ১২৯ অনুযায়ী শুধুমাত্র বিড়ির কর হার ১০% (দশ শতাংশ)। ধারা-১৫২ অনুযায়ী সিগারেটের উপর কর হার ৩% (তিন শতাংশ)। বিড়ির কর ধারা-১২৯ কে ধারা-১৬৩ তে 'ন্যূনতম কর' হিসাবে গণ্য করা হয়েছে এবং সিগারেটের ধারা- ১৫২ কে ধারা-১৬৩ তে 'ন্যূনতম কর' হিসাবে গণ্য করা হয়নি।

আয়কর আইনের ১২৯ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনোরূপ যান্ত্রিক সহায়তা ব্যতিত প্রচলিত বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সিগারেট উৎপাদন অর্থাৎ বিড়ি প্রস্তুতকারকের কাছে ব্যান্ডরোল বিক্রির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, ব্যান্ডরোল বিক্রয়কালে, উক্তরূপ প্রস্তুতকারকের নিকট হইতে ব্যান্ডরোলের মোট মূল্যমানের ১০% (দশ শতাংশ) হারে কর সংগ্রহ করিবেন।

এছাড়া ধারা-১৫২ তে (১) সিগারেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে নিট বিক্রয়মূল্যের ৩% (তিন শতাংশ) হারে অগ্রিম কর পরিশোধ করিবে এবং (২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরিশোধিত অগ্রিম কর ধারা ১৫৫ এর অধীন পরিশোধযোগ্য অগ্রিম করের ত্রৈমাসিক কিস্তির বিপরীতে সমন্বয়যোগ্য হইবে।

বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি শ্রী বিজয় কৃষ্ণ দে জানান, বিড়ির উপর ১০ শতাংশ কর সমন্বয়যোগ্য নয়। কিন্তু সিগারেটের ৩ শতাংশ কর সমন্বয়যোগ্য। বিড়ির কর ‘ন্যূনতম কর’ কিন্তু সিগারেটের ক্ষেত্রে তা গণ্য হয়নি। সিগারেটের ন্যায় বিড়ির অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ নির্ধারণ পূর্বক আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা-১২৯ এবং ধারা-১৬৩ সংশোধন হওয়া আবশ্যক। সিগারেটের কর হার ৩ শতাংশ হওয়ায় যেমন রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি তেমনি বিড়ি শিল্পে অভিন্ন কর হার প্রয়োগ করা হলে নকল বিড়ি তৈরি বন্ধ হবে এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।  

তিনি আরও জানান, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের পরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে বৈষম্য দূর হয়েছে। কিন্তু বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রিম আয়করের বৈষম্য এখনো বিরাজ করছে। বিড়ি শিল্পের ওপর থেকে অগ্রিম আয়করের বৈষম্য দূর করা হলে গ্রামীন জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের পথ আরো সুদৃঢ় হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিড়ি কারখানার মালিকদের অবদান অপরিসীম। এই শিল্পের মালিকরা এ দেশে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তারা বিড়ি শিল্প থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অথচ কিছু দেশী ও বিদেশী এনজিও সংস্থা এবং বহুজাতিক কোম্পানী এই প্রাচীন শিল্পকে ধ্বংস করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই এনজিওগুলো সিগারেট কোম্পানীকে সরকারের আনুকূল্য পাইয়ে দিতে দেশীয় শিল্প ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সব সময় অবস্থান নেয় বলে বিড়ি শ্রমিকদের দাবি। বিড়িকে কুটির শিল্পের মর্যাদা প্রদান এবং আয়করের বৈষম্য প্রত্যাহার করা হলে দেশের প্রচীন শিল্প রক্ষা পাবে এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলে জানান শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, বিড়ি দেশের গরীব মানুষ তৈরি করে এবং গরীব মানুষ ধূমপান করে। এখানে শমিকের কর্মের সুযোগ রয়েছে। আর সিগারেট মেশিনে তৈরী হয় এবং ধনীরা ধূমপান হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রীম আয়কর চরম বৈষম্যমূলক। সকল বৈষম্য দূর করতে শ্রমিক, ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে স্বৈরাচার হটিয়েছি।

সুতরাং বিড়ি ওপর থেকে বৈষম্যমূলক আয়কর প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে কর প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল