নিজস্ব প্রতিবেদক:
আপনি যদি ভাবেন যে কক্সবাজার কেবল সৈকত,মেরিন ড্রাইভ এবং খাবার সম্পর্কেই ছিল তবে আপনার ধারণায় একটু সংশোধন দরকার। স্থানীয় লোকজনের মতে, দরিয়ানগর কক্সবাজারের দক্ষিণ শহরতলির শহর যা প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং মনোরম। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কলাতলী মোড় থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে এই দরিয়ানগর।বোরোচোরার পক্ষগুলিতে অত্যন্ত সুন্দর প্যানোরামিক সবুজ দৃশ্য রয়েছে যা পশ্চাদপসরণের জন্য আদর্শ। এই বন ঘন বাঁশ গাছ, কোরাই, মহোগানি, চাপালিশ, সেগুনে পূর্ণ। বিভিন্ন ধরণের পাখি রয়েছে যা পাহাড় জুড়ে বাস করে। কিছু বুনো বানরের দল রয়েছে যারা ছোট বাচ্চাদের আকৃষ্ট করার জন্য খোলামেলা মনোভাব নিয়ে খালের জলে নেমে আসে।
কক্সবাজার শহরতলীর খুব নিকটেই দরিয়ানগর। সেখানেই দেখতে পাবেন শাহেনশাহ গুহা। গুহার পশ্চিমে বিশাল সমুদ্র সৈকত ও বঙ্গোপসাগর। পূর্বে উঁচু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ‘কক্সবাজার-টেকনাফ’ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই পথ ধরে কক্সবাজার শহর থেকে আট কিলোমিটার এগিয়ে গেলে নজরে পড়ে সবুজ শ্যামলে ভরা একটি গ্রাম বড়ছড়া। এই বড়ছড়ার উঁচুনিচু ৩৭ একরের বিশাল পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে পর্যটনের বিনোদন কেন্দ্র ‘দরিয়ানগর’।
ঘুরে আসতে পারেন দরিয়ানগর। রোমাঞ্চের স্বাদ পাবেন এখানেই। প্রকৃতি নিজের হাতেই সাজিয়ে ঘুচিয়ে রেখেছেন অফুরন্ত সম্পদ আর অকৃত্রিম সৌন্দর্য। যা দেখে বিমোহিত হয়ে পড়েন অসংখ্য পর্যটক।
দরিয়ানগরে উঁচু পাহাড়ের নিচে প্রকৃতি প্রায় আধ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে রেখেছেন। যার নাম শাহেনশাহ গুহা। এর একটু দক্ষিণে কিংবদন্তির ‘পরিমুড়া’, যাকে আমরা হিমছড়ি ঝরনা বলে জানি। কক্সবাজারের মানুষের মুখে ফেরে এ পরির গল্প। বানেছা পরির কন্যা হিমপরি নাকি সখীদের নিয়ে সমুদ্রস্নান সেরে এ পাহাড়ে আড্ডা দিতেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, হিমপরির সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার গল্পও শোনা যায় এই অঞ্চলের মানুষের কাছে।এক সময় এ নাকি আরবের একটি বাণিজ্যতরী ডুবে গিয়েছিল দরিয়া নগরে। সেই তরীতে ছিলেন শাহেনশাহ নামের একজন তরুণ। তিনি এখানে ঝরনার মিষ্টি পানি খেতে এসে বন্য প্রাণীর কবলে পড়েন। আশ্রয় নেন এক গুহায়। সেই গুহারই পরে নাম হয় শাহেনশাহ গুহা। এক পূর্ণিমা রাতে শাহেনশাহর সঙ্গে দেখা হয় হিমপরির। দুজনের ভালোবাসার সে-ই শুরু। পরি তাঁকে নিয়ে চলে যান নিজ পূর্ণিমা রাতে শাহেনশাহর দেশে। এখানে রয়ে যায় দরিয়ানগর আর শাহেনশাহ গুহা।
গুহার ওপরে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় ছন আর কাঠ দিয়ে তৈরি ‘চেরাংঘর’ বা ‘আড্ডাখানা’। এখানে বসে দেখা যায় দরিয়া বা সমুদ্রদর্শন। পাহাড় চূড়ায় দাঁড়ালে মনে হবে, যেন বঙ্গোপসাগরের নীল জলের ওপরই দাঁড়িয়ে আছেন। নজরে পড়বে দূরের সাগরের নৌকাগুলো। গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরা ট্রলারের সারি।
এই পাহাড়ের নিচে রাত যাপনের জন্য রয়েছে বাংলো বা রেস্টহাউস। বাংলোর সামনে সূর্যাস্ত দেখার জন্য রয়েছে ‘সানসেট ভিউ পার্ক’। পার্কের নিচে অর্থাৎ পাহাড়ের খাদে প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি করা হয় ১২টি কুঁড়েঘর। এখানে যে কেউ সপরিবারে রাত কাটাতে পারেন একেবারে নির্বিঘ্নে নিরাপদে। সেখানে রয়েছে একটি রেস্তোরাঁও, যাতে পাবেন নানা পদের মাছ,কাঁকড়া, জেলিফিশ।
ছেলেবেলায় পাখি হয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্ন আমাদের সকলেরই ছিল। আকাশের বুকে ডানা মেলে দিগন্তে হারিয়ে যাওয়ার এক অলীক স্বপ্ন। দরিয়া নগরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এই প্যারাসেইলিং। এখানে একটা প্যারাসুটে আপনাকে বেঁধে দেয়া হবে, একটি উচ্চগতি সম্পন্ন স্পীড-বোট আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে সমুদ্রে, আর সেই তীব্র গতিতে আপনি ঠিক একটা ঘুড়ির মতই উড়ে যেতে থাকবেন। সমুদ্রের উপর আকাশে উড়বার এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা আপনার স্মৃতির পাতায় থাকবে চিরকাল। এই অনন্য থ্রিলিং এর স্বাদ আপনি শুধুমাত্র এই সৈকতেই পাবেন।
কিভাবে যাবেন?
কক্সবাজারের যে কোন জায়গা থেকে দরিয়া নগর যেতে পারবেন খুব সহজেই। অটোরিক্সা/ইজিবাক বা সিএনজি দিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডের সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন কলাতলী বীচের মোড় থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের দরিয়ানগরে। লোকাল অটোরিক্সা ভাড়া ২০ টাকা। ইজিবাইক/অটোরিক্সা বা সিএনজি রিজার্ভ করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। দরিয়ানগর থেকে একটু আগালেই হিমছড়ি, আর এই রোড দিয়েই যেতে হয় ইনানী বীচ। তাই ভ্রমণ পরিকল্পনা করে নিতে পারেন সেইভাবেই। ইনানী বা হিমছড়ি যাওয়া বা আসার পথে একটু সময় কাটাতে পারেন দরিয়ানগরে। তবে দরিয়ানগরে সবচেয়ে ভালো হয় বিকেলের সময়টায় গেলে। সুন্দর সূযার্স্ত দেখার জন্যে অতুলনীয়।
কোথায় খাবেন?
মেরিন ড্রাইভ রোডের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। চাইলে এসব রেস্টুরেন্টের একটাতে উদরপূর্তি করে ফেলতে পারেন। আবার কক্সবাজারে সব ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছুর মত এখানে খাবারের দামও কম/বেশী হতে পারে।
তানহা আজমী