নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাষ্ট্র সংস্কারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসহ আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সৃষ্টি না করে চট করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে আন্দোলনের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এমন মন্তব্য করেছন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর টিআইবির পর্যবেক্ষণ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের সময়সীমাকে কেন্দ্র করে কিছু অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। এ নিয়ে জবাব দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ও নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়নি। আন্দোলন হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। নতুন বাংলাদেশ ও রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তা রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ। এসব কমিশন প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের ওপর বাস্তব সংস্কার সম্পূর্ণ করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারকেই বলতে হবে, নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, যাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা আছে, যারা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন, সরকারের উচিত এসব বিষয়ে উত্তর দেওয়া।
১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক ও রাষ্ট্র সংস্কারে উপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের ওপর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে যে কর্তৃত্ব বা ম্যান্ডেট আছে তার তুলনায় যে কাজ হয়েছে তা কোনো অংশে কম নয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, পুলিশের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হওয়ার কারণে সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পুলিশে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা আছে। এসব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, যতটুকু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল, ততটুকু হয়নি। কিন্তু সেটি নিয়ে শঙ্কা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক দিক হলো জুলাই-আগস্টে হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া। এছাড়া হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, গণভবনকে জাদুঘর করা, আর্থিক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে বাজার ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। এছাড়া শিক্ষাখাতেও সংস্কার প্রয়োজন।
ভারতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তারা এখনো কর্তৃত্ববাদীর সমর্থনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বাংলাদেশকে দেখছে। ভারত সম্পর্কে মানুষের যে লিবারেল ধারণা ছিল, সেই ভারত কিন্তু পরিবর্তিত বলে আমরা মনে করি। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যমেও বাংলাদেশ সম্পর্কে যেভাবে বলা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিব্রতকর। ভারতের জন্যও এটি বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। ভারত তার অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম। প্রতিবেদন তৈরিতে আরও যুক্ত ছিলেন মো. জুলকারনাইন, ফারহানা রহমান ও মো. মোস্তফা কামাল।
এসএম/এমকে