জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতাঃ:
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়ে বেশ সোচ্চার। অক্টোবরে সুপারশপ এবং নভেম্বর থেকে বাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি।পলিথিন ব্যবহারে নিষিদ্ধের ঘোষনার পরেও ফুলবাড়ী উপজেলার হাটবাজারগুলোতে বিভিন্ন অজুহাতে পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের বড় অংশই সরকারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও প্রশাসনের নজরদারি, সহজলভ্যতা এবং বিকল্পের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন তারা। সরকারের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কলাপাতার ঠোঙ্গায় লবণ বিক্রি করচ্ছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
সরেজমিনে গত (১৮ নভেম্বর)সোমবার বিকালে
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এই প্রথম সমসের আলী (৬২) নামের এক ব্যবসায়ী কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো প্যাকেট তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে লবন বিক্রি করছেন। তার এই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং দোকানসহ তার ছবি সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে পোষ্ট দিচ্ছেন। তা দেখে পাশের দোকানদারের আগ্রহ বাড়ছে। লবণ ব্যবসায়ীর সমসের আলী (৬০) ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নাগদাহ এলাকার বাসিন্দা এবং তিনি খরিবাড়ী বাজারে প্রায় ১৫ বছর থেকে খোলা মার্কেটে লবণের দোকান করে আসছেন।
সমসের আলী জানান, পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদে দেখে জানতে পারি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গত দু সপ্তাহ থেকে নিজে উদ্যোগে কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো এক কেজি লবণের প্যাকেট বিক্রি করতে শুরু করি। কলা পাতায় লবণের প্যাকেট করায় বিক্রি কমছে কি না ,এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান,আমার এমন উদ্যোগ দেখে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়ে লবন ক্রয় করচ্ছেন ফলে বিক্রি অনেক বেড়েছে। আমাকে দেখে পাশের ব্যবসায়ীরাও এখন নিষিদ্ধ পলিথিনের বিকল্প হিসাবে কলাপাথা ব্যবহার শুরু করেছেন।
খরিবাড়ী বাজারে লবন ক্রেতা জোবেদ জানান, আসলেই কলার পাতায় মোড়ানো লবণের প্যাকেট অনেক দিন পর দেখে ভালো লাগলো। এমন ভাবে মোড়ানো হয়েছে ব্যাগে রাখলেও পড়বে না।
খরিবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে খরিবাড়ী বাজারে পলিথিনের বন্ধে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে কলার পাতায় লবণের প্যাকেট করে বিক্রি করছেন। তার অসাধারণ পদ্ধতি দেখে আরও একজন লবণ ব্যবসায়ী কলার পাতায় লবণ বিক্রি শুরু করছেন। এই পদ্ধতিতে ধরে রাখতে সবাই এগিয়ে আসলে ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমবে।
রাবাইতারী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল হক মনি জানান, সামাজিক যোগাযোগে ফেসবুকে কলাপাতার ঠোঙ্গায় লবন বিক্রি করতে দেখে অত্যন্ত ভালো লেগেছে। এই অসাধারণ দৃশ্যটি আজ ৪০ থেকে ৪৫ বছরে সব ব্যবসায়ী ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যবহার করতেন। এরপর আস্তে আস্তে এটি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। আজ হঠাৎ কলাপাতা মোড়ানো লবণের প্যাকেট দেখে অত্যন্ত ভালো লাগলো। এটি সত্যি পরিবেশ বান্ধব।
এমআই