এহসান রানা, ফরিদপুর:
মামলা করলে বা পুলিশের সহযোগীতা চাইলে ফের হামলার শিকার হতে হবে- এমন শংকায় হামলার শিকার হয়েও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেনা ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বেড়াদী গ্রামের অনেক পরিবার। স্থানীয় বিএনপি নেতার অপতৎপরতা আর দলবাজির শিকার এসব মানুষের কেউ কেউ বাড়ীঘর ছেড়ে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হামলার শিকার পরিবারগুলো জানান, ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর থেকেই সাতৈর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জকির হোসেন টিআই ও তার সহযোগী স্থাণীয় প্রভাবশালী দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি ইদ্রিস মোল্লা, তারিকুল ইসলাম ও যুবদল নেতা বায়েজিদ মোল্লার সমন্বয়ে ৪০-৫০ জন জোট বেঁধে স্থানীয়ভাবে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর নানাভাবে অত্যাচার ও হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা দাবী করেন, ওই গ্রুপটি প্রতিপক্ষের লোকজনের নিকট টাকা দাবী করেন, তা পরিশোধ না করলে হামলা চালিয়ে বাড়ী ঘরে লুটপাট করা হয়। এরই মধ্যে তাদের হামলার শিকার হয়ে অনেকে আহত হলেও পঙ্গুত্ব বরনের পথে রয়েছেন একজন।
বেড়াদীর দলিল উদ্দিন শেখ জানান, গত ১৭ নভেম্বর সন্ধায় মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর পরই দেলোয়ার হোসেনের ভাতিজা যুবদল নেতা বায়েজিদ মোল্লার নেতৃত্বে ১০-১২ জন প্রথমে কিল ঘুষি ও পরে পিটিয় আহত করে। এসময় অনেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি ওদের ভয়ে।
মো. আবুল মল্লিক জানান, গত ২১ অক্টোবর মাগরিবের নামাজের পর একটি দোকানে চা খাওয়ার সময় ডেকে নিয়ে বেড়াদী বাজারের উপর ১৫-১৬ হামলা চালিয়ে হাতুড়ি পেটা ও লাঠি পেটা করে গুরুত্বর জখম করে। হামলায় পায়ের কয়েকটি স্থানে হাড় ভেঙ্গে যায়। পরে ২০-২৫ দিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টরে চিকিৎসা নেন তিনি। বর্তমানে তিনি হাটতে পারেন না, অর্থিক অসঙ্গতির কারণে বাড়ীতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়াও ওই গ্রামের ওলিয়ার রহমান, ওলিয়ার শেখ, শরিফুল মোল্লা, আক্কেল মোল্লা, উকিল শেখ ও নুর আলমসহ অন্তত আরো ১০ থেকে ১২ জন হামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবী স্থানীয়দের।
একই গ্রামের মজিবর শেখ জানান, রোববার সন্ধায় ২০-৩০ জন তার বাড়ীতে হামলা চালিয়ে স্ত্রীকে গোপন অঙ্গে হাতুরি দিয়ে অনেকবার আঘাত করে।
আর বড় ছেলে রুবেল শেখ (২৮) মনির মিয়া (২৫) ও ছোটো ছেলে রাকিবুল শেখকে ঘর থেকে বের করে এনে বেধড়ক মারপিট করা হয়। তিনি জানান, স্ত্রী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরলেও ছেলেরা বুধবার বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নিজ এলকায় আতংকে ফিরতে না পেরে বোনের বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ওই গ্রামের আসাদুজ্জমান জানান, টিআই ও দেলোয়ারের লোকজন ০৬ আগষ্ট দুইটি গরু নিয়ে গেলেও তা ফেরত পাননি। পরে ইউনিয়ন পরিষদে শালিস হলে ২০১৮ সালে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় লুটপাট করা হয়েছিলো দাবী করে সেই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গরু নেয়া হয়েছে জনিয়ে গরু ফেরত দেয়া হয়নি। এছাড়া তালু শেখ ও হালিম শেখের দুটি গরু নিয়ে গেলেও ফেরত পায়নি।
ওই গ্রামেরই মজিবর মোল্লার স্ত্রী আছিয়া বেগম জানান, নভেম্বরের ০৪ বা ০৫ তারিখে ১০ থেকে ১২ জন অতর্কিতে হামলা চালিয়ে একটি গরু নিয়ে যায়। ঘটনাটি পুলিশকে জানয়েও লাভ হয়নি, তাই পরবর্তীতে ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে মো. জাকির হোসেনের কাছ থেকে গরু ফিরিয়ে আনা হয়।
এদিকে ওই গ্রুপটি ০৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর ০৫ আগষ্টই সঙ্গবদ্ধ হয়ে এনামুল মোল্লার বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরে ০৬ নভেম্বরও ফের হামলা চালানো হয় বলে দাবী তাদের। তিনি জানান, হামলাকারীরা মামলা করলে বাড়ীঘর আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিবে বলে হুমকী দেয়ায় ভয়ে মামলা করতে পারিনি। জীবন বাঁচাতে তিনি বর্তমানে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন বলে জানান।
এছাড়া গত ০৯ আগষ্ট আক্কেল আলী, মনির মোল্লা, গাউজ মোল্লা ও হুমায়ুন মোল্লাসহ ৮-১০টি বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবী, হামলায় আহত ও লুটপাটের ঘটনায়, ভয়ে আইনের আম্রয় নিতে পারছেন না তারা। আইনের আশ্রয় নিলে ফের হামলা বা অঘটন ঘটতে পারে দাবী তাদের। তারা দাবী করেন, অনেক মানুষ এখনো ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা বাড়ীঘরে ফিরতে পারছেন না নিরাপত্তার অভাবে। এদিকে, অনেকে বাড়ী-ঘরে ফিরতে না পারায় জমিন চাষাবাদও করতে পারছেন না বলে জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে সাতৈর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জাকির হোসেন টিআইকে একাধিকবার মুঠোফোনে (০১৭১৩-৪৫৯৯৬৬) ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
আর দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি নিয়মিত ঢাকায় থাকেন। এলাকার কোনো বিষয় তার জানা নেই। কোনো ধরনের হামলা ও লুটপাটের সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেন তিনি।
অপরদিকে সাতৈর ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি এবং ইউপি সদস্য ইদ্রিস মোল্লা জানান, ইতিপুর্বে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান ও তার লোকজন আমাদের তিনটি দোকান ও একটি বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যপক ভাংচুর করে, এব্যপারে থানায় মামলা করে কোনো ফল পাইনি। তবে, প্রতিপক্ষের বাড়ী ঘরে হামলার বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম রসুল জানান, এসব বিষয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশকে কেউ কোনো কিছু অবহিত করেনি। তাই কোনো মামলা হয়নি।
সময় জার্নাল/এলআর