কাউছার আহমেদ, নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
সময় বহমান, আপন গতিতে ছুটে চলে অবিরাম। সময়ের মতো জীবনও থেমে থাকে না। সময়ের তালে তালে একটা অধ্যায় শেষ হয়ে যোগ হয় আরেকটা অধ্যায়ের। এই ছুটে চলার মাঝে সবার কাছে স্বর্ণালী মূহুর্ত বোধহয় ছাত্র জীবনে কাটানো সময়টুকুই। কিন্তু, এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় তা ফুরিয়ে যেতে কতক্ষণ। তাই বলে তো আর সব সময় দুঃখের জলে ভাসা যায় না। ছোট্ট জীবনে আনন্দই হলো জীবনের বড় স্বার্থকতা।
ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি, ঘোরাঘুরি, ক্লাস-অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষা নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে কখন যে জীবনের সেরা দিনগুলো শেষ হয়ে যায়, তা কেউ টেরই পায় না। হঠাৎ বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা। বিদায় নামক অপ্রিয় সত্যটি সবার জীবনেই আসে। ঠিক যেভাবে এসেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষা বিভাগের সদ্য শেষ স্নাতকোত্তর ( ১৪ তম ব্যাচ) দ্বৈরথের বিদায়।
সেদিন সোনালী রোদ্দুর ছিল। প্রকৃতিতে মিশে ছিল সকালের শীতল হওয়া। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সাজ সাজ রব। চলছে বর্ণিল পোশাক পরিহিত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। ছেলেদের পরনে পাঞ্জাবি, মেয়েদের পরনে শাড়ি। আবার অন্যদিকে চলছে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের আয়োজন। দেখে মনে হবে যেন বিদায়কে নতুন করে সাজাচ্ছে।
সাধারণত উৎসব ঘিরে থাকে আনন্দ, খুশি, উল্লাস। কিন্তু এই উৎসবে আনন্দের চেয়ে বেশি ছিল বেদনা। তাদের মন ভারাক্রান্ত, তারা জানেন, আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়কে এভাবে পাওয়া যাবে না।
'মানুষের জীবনের পুরোটা সময় বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত। একটা ধাপ পেরিয়ে আরেকটা ধাপে উঠতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। প্রতিটা ধাপের কষ্টগুলোকে অসহ্য মনে হয়, তবুও জীবনের কঠিন বাস্তবতায় সেগুলোকে মাড়িয়ে সামনের পথে এগিয়ে চলতে হয়। একজন শিক্ষার্থীর জীবনের শুরুর বাস্তবতাালেখার মাধ্যমে শুরু হয়। স্কুল-কলেজ শেষে যখন একজন শিক্ষার্থী ভার্সিটি লাইফে প্রবেশ করে, তখনই মূলত তার জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সুন্দর একটি ভবিষ্যতের আশায় চিন্তামগ্ন প্রতিটি শিক্ষার্থীর দেখতে দেখতে হারিয়ে যায় লাইফের অন্যতম সেরা সময়গুলো। যখন হুঁশ ফেরে তখন যেন গোধূলিলগ্ন, চাইলেও দিনের আলোকে তখন আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।' - এমন আবেগময় কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নোবিপ্রবি শিক্ষা বিভাগের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা।
বিদায় বেলায় প্রতিটি শিক্ষাগুরুর বক্তব্য শুনে নিজেদের অজান্তেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। প্রতিটি শিক্ষার্থী আজ মনের গভীর থেকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে এসব শিক্ষাগুরুর কাছে তাদের সব ভুলত্রম্নটির জন্য ক্ষমার চাহনীতে তাকিয়ে ছিল। উপস্থিতি সব শিক্ষকরাও যেন তাদের চাহনী বুঝতে পেরে আবেগময় হয়ে বড়ই দুষ্ঠু, বাউন্ডুলে, অনেক সময় কথার বিপরীতে চলা এসব মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ থেকে দুয়েক ফোঁটা জল বিসর্জন করছিল আর আশীর্বাদ করে বলছিল, আপনারা ভালো কিছু করেন এবং শিক্ষা বিভাগের সুনাম বয়ে আনেন। সব সময় আপনাদের পাশে আমাদের দোয়া থাকবে।
এমআই