কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি:
খুলনার কয়রা উপজেলার আওয়ামী লীগের ত্রাস সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: বাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার ঢাকার হজরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে তাকে পাইকগাছা থানায় আনা হয়। পাইকগাছা থানার মামলার আসামী হওয়ায় তাকে পাইকগাছা আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গন অভূর্থানে সরকার পতনের পর বাহারুল ইসলাম পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। ওই দিন তাঁর বাড়ি ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে জমি ও ঘের দখল, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন জানান, বাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে পাইকগাছা থানার একটি দল গতকাল রাতেই ঢাকায় রওনা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে থানায় আনা হয়েছে। উপজেলার আগড়ঘাটা এলাকায় ট্রলারে হামলার অভিযোগে গত ২৬ আগষ্ট ফসিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অনুনোমোদিত ২টি হাসপাতাল ও শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, হিন্দুদের জমি দখল ও দেশ ছাড়তে হুমকি, লাইসেন্সবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ সমিতির নামে সুদের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা, ইউনিয়ন পরিষদে নামমাত্র প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাট সহ মাদকাসক্ত ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অধ্যক্ষ, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, ও সাধারণ জনগণকে মারপিট, জিম্মি ও চাঁদা আদায়, জমি দখল ও টেন্ডারবাজি করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন।
২০১৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরাসরি কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বাহরুল। ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবি কাজে লাগিয়ে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। তবে তার পেটোয়া বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে চান না ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসী বলছে, সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ২০০৯ সালে বাহারুল ইসলাম কয়রা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েই উপজেলার ৬৫টি মৎস্য ঘের দখল করেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সশস্ত্র দলবল নিয়ে হামলা চালান কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাবে। সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে মেরে আহত করা হয়। ভয়ে তৎকালীন সময়ে কয়রার সাংবাদিকরা বাহারুল ইসলামের অপকর্মের খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। সেই থেকে বাহারুল যথেচ্ছা অপকর্মের মাধ্যমে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হন এবং কয়রা উপজেলাকে নিজের রাজ্য হিসেবে শোষণ শুরু করেন। শুরু করেন ভোট কেন্দ্র দখল, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে খুলনা শহরে কোটি টাকার জমি ক্রয়, গুলি ছোড়া, হিন্দুদের জমি দখল, ক্ষুদ্র ঋণের নামে কোটি কোটি টাকার সুদের কারবার এবং পদকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, অপকর্ম করে অর্থোপার্জন। বাহারুলের এসব অপকর্ম নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে প্রকাশ্যে মারধরের শিকার হতে হয়।
বাহারুল ইসলাম ২০০৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। টিনের ঘরে বাস করতো বাহারুল। বাবা ফজর আলী সানা আমিন হওয়ায় বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ জমির খবর রাখতেন। বাহারুল দলকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে জমি দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরির প্রলোভনে ৪০ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে কয়রা থানার সামনে নিজ নামে ৩ একর জমি কিনে অনুমোদনহীন শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুদের ভিপি তালিকাভুক্ত ৪০ বিঘা জমি ডিসিআর কাটে বাহারুলের বাবা। পরে ওই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে অসহায়-গরিবদের কাছে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা প্লট আকারে বিক্রি করেন। আবার কয়রা সদরে হিন্দুদের জমি দখল করে ১৭টি দোকান তৈরি ও ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বাহারুলের বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে কয়রায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে লবণ পানির ঘের বন্ধের নির্দেশ দিলে বাহারুল নোনাপানি উত্তোলনের পাইপ ভেঙে দেয়। আবার রাতের আঁধারে তাদের থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে নোনাপানি তুলে ঘের করার ব্যবস্থাও করে দেন। স্বাস্থ্যসেবার নামে ২টি অবৈধ লাইসেন্সবিহীন বহু তলা হাসপাতালের মালিক ও পরিচালক বাহারুল ইসলাম। কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সামনে ১৬ শতক জমির ওপর ৫ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন এবং চড়েন ২৫ লাখ টাকা দামের গাড়িতে।
তানহা আজমী