মোঃ ইকবাল হোসাইন,কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি:
এবার খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষক হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণির ছাত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী ফারিয়া তাবাসসুম। শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ২টায় “কয়রা উপজেলা” নামক এক ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষক হুমায়ুন কবির কর্তৃক ৫ম শ্রেণির ছাত্রীদের ধর্ষণের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ওই শিক্ষার্থী।
ফেসবুক পোস্টে বেদকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফারিয়া তাবাসসুম লেখেন-
গত কয়েকদিন রাজনৈতিকভাবে স্যারকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আমি কোনোমতে পঞ্চম শ্রেণি পাশ দরিদ্র ঘরের মেয়ে। রাজনীতি অতো বুঝি না। গতদিন লাইভের একটা ভিডিও দেখলাম!! আপনি সেখানে বলছিলেন " এতটাই কি অপরাধ?
স্যার মাফ করবেন। আমাকে আপনার বক্তব্য শুনে পিছনের স্মৃতি কোনো ভাবেই স্মৃতি থেকে ডিলিট করতে পারছি না।
শুধু আপনার কাছে জানতে চাই , "৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণ করা কি অপরাধ নয়?" অবশ্যই আমি শুধু আপনাকে অপরাধী করছি না। আপনার সহযোগী আরও দুইজন আছে।
আজ শ্বশুর বাড়িতে স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই আছি। কিন্তু আমার মেয়ের স্কুলে দেওয়ার কথা ভাবলেই শিউরে উঠি। মনে পড়ে যায় সেদিনের স্মৃতি! কিভাবে ভুলি বলেন স্যার! গিয়েছিলাম শিক্ষা নিতে আর আপনারা আমাদের জীবনটায় নষ্ট করে দিলেন। আপনি কি অপরাধ করেছেন সেটা বলতে পারবো না। শুধু এতো টুকু বলবো, যে পঞ্চম শ্রেণির বাচ্চাও আপনার ছোবল থেকে রক্ষা পায় নি।
পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার সাথে সাথেই এনাদের টার্গেটে পড়তে হয় সদ্য বালেগ হওয়া মেয়েগুলোর। দেখতে একটু সুন্দর হলে তো কথাই নেই। হায়েনাও হয়তো এতো নির্মম হয় না।
নানান কৌশলে, কখনও বোর্ডিং থাকতে বাধ্য করে, আবার কখনও দরিদ্র পিতার প্রশ্ন ফি মাপ করে কিংবা একসেট গাইড কিনে দিয়ে নিজের কব্জায় বন্দি করেন তারা। স্কুল ছুটির পর স্কুলের দ্বিতীয় তলা যখন পিনপতন নীরবতা তখনই স্বস্তি ফিরে পেতেন পিতার বয়সী এই শিক্ষক। স্কুলে বোর্ডিং এ সব ছেলে মেযেরা পড়া শেষে ঘুমিয়ে পড়তো। চার দিকে নেমে আসতো জনমানবশূন্য নীরবতা। ঠিক তখনই শিক্ষক নামের এই নরপশু হায়নার মতো মাতাল হয়ে উঠতো। স্কুলের দ্বিতীয় তলার ছোট্ট রুমটা থেকে ভেসে আসতো চাপা কান্নার শব্দ। এভাবেই কত ছাত্রীর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হওয়ার পরিবর্তে ভার্জিনিটি বিলিয়ে দিতে হয়েছে, তার হিসাব এই নরপশুই জানে। যাওয়ার পথে দ্বিতীয় তলার ছোট রুমটা চোখে পড়লেই আজও শিউরে উঠি।
ছাদের উপরের সিড়ি রুমের সামনে বসে বকুল গাছের আড়ালে পূর্নিমার চাঁদের অসাধারণ দৃশ্য কাকে না মুগ্ধ করে, কোলে যদি থাকে মেয়ে সমতুল্য ক্ষণিক প্রিয়তমা। এমন রোমান্টিক মূহুর্ত হয়তো একমাত্র এই শিক্ষকতা পেশাতেই পাওয়া সম্ভব।
আমি শুধু এই স্যার কে দোষী করছি না। গত কয়েক বছরে প্রাইমারি স্কুলে যে পরিমাণ ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছে তার সাক্ষী হয়তো হাশরের মাঠে স্কুলের সাইক্লোন সেন্টারই দিবে।
কিন্তু এনার বিষয়ে কি বেদকাশীর মানুষ ভুলে গেছে? বেদকাশীর মানুষ কি এভাবে অপরাধীদের বাহবা দিবে?
বেদকাশীতে কি অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরার মতো কোনো মানুষ নেই?
সালটা ২০১১, ৫ম শ্রেণির বিদায় লগ্নে বোর্ডিং এর সবাই সকালের পড়া শেষে স্কুলের মাঠে খেলেছিল। ঠিক এসময় দ্বিতীয় তলার প্রথম রুমের জানালা প্রায় সবগুলো আটকানো। এর মধ্যে "অশ্রু সিক্ত দু'টি কথা" পাঠ করানো শিখানোর নামে চলছিল অপকর্ম! সহপাঠীরা টিফিনবক্স আনতে গিয়ে দেখে ফেলেন নগ্ন অবস্থায়। সেদিন বেদকাশীর মানুষ অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বিষয়টাকে ধামাচাপা দিয়েছিল।
এরপরের বছরেও সেম ঘটনা ঘটাইছে। বেদকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পোস্টিং হওয়ার পরে নবরূপে সজ্জিত হন তিনি। ফিরে পান নতুন যৌবন। হাতে হাত রাখেন একই মাইন্ডের কলিগ। এবার কে আটকায়, বাধা দিবার সাধ্য কার? স্কুল টাইমে তৈরি করেন জিরাফের মূর্তি। অন্যদিকে ছুটির পরে শুরু হয় তার পশুরূপী কুকর্ম।
আবার কখনও তার ভাগ্নির বাড়িতে, ভাগ্নির পাহারায় চলছে এসব অপকর্ম। আগে জানতাম স্যারেরা বউয়ের ঝগড়া করে স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের পিটাতো কিংবা নম্বর কম দিতো। কিন্তু এখন দেখি ছাত্রীদের দিয়ে কৌশলে বউয়ের চাহিদা মেটানো হয়।
বেদকাশীর মানুষের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনারা কি এই স্যারের কুকর্ম ভুলে গেছেন? আপনাদের- আপনার মেয়ে হলে কি ভুলে যেতে পারতেন এতো সহজে? সদ্য বালেগ হওয়া একটা মেয়ের জীবনের মূল্য এতই তুচ্ছ আপনাদের কাছে?
১০ বছরের সহপাঠীরা যখন দেখে তার সহপাঠীকে রেপ হতে এটা কি আপনাদের বিবেগকে নাড়া দেয় না? এই স্যার এত টাকা ঋণ নিয়ে কি করেছে? কারও কি জানতে ইচ্ছে হয় না? বেদকাশীর মানুষ যদি এই সমস্ত কুলাঙ্গারকে এখনো মাথায় তুলে নৃত্য করেন তাহলে অচিরেই আপনাদের বিবেগ আপনাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। ধ্বংস হয়ে যাবেন সদ্য বালেগ হওয়া সেই সব ছাত্রীদের দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করা আর্তনাদে।
ধন্যবাদ আপনাদের মতো কুলাঙ্গার শিক্ষকদের!!
যদি কোনোদিন ওমর (রা:) মতো শাসক পাই। সেই দিন মন খুলে বিচার দিবো। আর না হয় দেখা হবে, হাশরের মাঠে ইনশাআল্লাহ।
তানহা আজমী