জেলা প্রতিনিধি,পঞ্চগড়:
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিটি মানুষ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। যে বাংলাদেশ হবে মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত। যেখানে দলমত-নির্বিশেষে সবাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হবে যুগোপযোগী। যে শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে এমনই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন দ্য ফিউচার বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব শিশির আসাদ। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর ভাবনা রয়েছে। তার ইউনিক ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন সময় জার্নাল পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি ।
শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে-
নতুন বাংলাদেশ মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত এমন একটা সমাজ হবে, যেখানে দলমত-নির্বিশেষে সবাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারবে। একই সঙ্গে আগামীর সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য টেকনোলজি ও গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষিত জাতি বিনির্মাণে মেধাবী ও মানবিক শিক্ষকদের প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং একই সঙ্গে গবেষণানির্ভর একটা শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা যায়, তাহলে দেশে টেকসই উন্নয়ন হবে। আগামী দিনে আমরা সমৃদ্ধিশালী জাতি হিসেবে নিজেদের পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
শক্তিশালী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে-
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে দুটি দিক। প্রথমত, এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মান। নতুন বাংলাদেশে আমি এমন এক দেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে একজন অতিসাধারণ মানুষ হিসেবে আমাকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে না। যে কেউ স্বাধীন ও নিরাপদভাবে এখানে কাজ করতে পারবেন। যে দেশে আমার যোগ্যতাই হবে সবচেয়ে বড় সাহস। এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা পাব, যেখানে নিজেকে দক্ষ এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার সুযোগ থাকবে। যাতে করে পড়াশোনা শেষ করে আমাকে ভাবতে হবে না, আমার কর্মসংস্থান কী হবে। আমাদের এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা হোক, যা শিক্ষার্থীদের সাহসী, দক্ষ এবং পারদর্শী করে তুলবে। পরে এই শিক্ষার্থীরাই দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সর্বোপরি একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে দেশ ও দেশের মানুষ নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করুক, এটাই চাওয়া।
দুর্নীতির বিনাশ হলেই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ-
স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার সোনার বাংলাদেশকে আমি দলমত-নির্বিশেষে শান্ত ও স্বাধীনভাবে দেখতে চাই। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে যে দুর্নীতির খুঁটি গেঁথে আছে, যেটা ছাত্রসমাজের দ্বারাই কেবল এগুলো দূরীকরণ সম্ভব। পাসপোর্ট বাংলাদেশের মানুষের অধিকার। পাসপোর্ট করতে যে হয়রানি এবং দালালের দৌরাত্ম্য, সেটার স্থায়ী সমাধান চাই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন বিভাগে দালালচক্রের হাতে বিদেশগামী সাধারণ যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি, শিক্ষা বোর্ড অফিসগুলোয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সংশোধন এবং সমস্যা সমাধান করতে হয়রানি বন্ধ হোক। বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ব্যাংকের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে টাকা লেনদেনের সিস্টেম অনতিবিলম্বে চালু হোক। ব্যবসায়ীদের ওপর চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট বন্ধ হোক। ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সেবা পরিচালনার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর মূল চাবিকাঠিই এখন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা।
বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই-
ছাত্র-জনতার বহু আত্মত্যাগ, আন্দোলনের ফলস্বরূপ অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। তবে এই স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করা তখনই সম্ভব হবে, যখন ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সবার চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবে। বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক সংস্কৃতির দেশ। যেখানে চারটি প্রধান ধর্মসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে। প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু চাহিদা।
তাই এমন একটি দেশ চাই, যেখানে প্রতিটি জাতি-বর্ণ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নির্বিঘ্নে পালন করতে পারবে। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে। তবে সে জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সুষ্ঠু আইন ও বিচারব্যবস্থা। একটি দেশ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন, সে দেশের নাগরিক এবং সরকারের যৌথ সদিচ্ছা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এগিয়ে যাওয়ার মূল স্তম্ভ এটাই। তাই দেশের সব নাগরিককে সরকার প্রণীত নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
তানহা আজমী