বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া-নিয়ন্ত্রণ করছে যারা

সোমবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া-নিয়ন্ত্রণ করছে যারা

সময় জার্নাল ডেস্ক:

সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ২০১৬ সালে রুশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় আলেপ্পোয় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে শহরটি পুনরুদ্ধার করেছিল প্রেসিডেন্ট আসাদের বাহিনী। এর পর থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত ইরান, রাশিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সমর্থন নিয়ে আলেপ্পো নিয়ন্ত্রণ করেছে তারা। এ শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী সরকার–সমর্থক আধা সামরিক গোষ্ঠী ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সেস–এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে।

সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত কুর্দি-অধ্যুষিত গোষ্ঠী। এটি পূর্ব সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এইচটিএস হলো আল-নুসরা ফ্রন্টের নতুন সংস্করণ। এটি একসময় আল-কায়েদার প্রতি অনুগত ছিল। ২০১৬ সালে ফ্রন্টটি এ সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। পরে এইচটিএস অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে একীভূত হয়।

তুর্কি ও তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি উত্তর সিরিয়ার তুর্কি-সমর্থিত একটি বিদ্রোহী বাহিনী।

আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত হামলা চালানোর মাত্র তিন দিনের মধ্যে সিরিয়ার উত্তর–পশ্চিমের আলেপ্পো দখল করে নিয়েছেন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী যোদ্ধারা। তাঁরা এখন দক্ষিণে হামা শহরের দিকে এগোচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে এ আক্রমণ দেশটিতে ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সম্ভবত একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী গত শনিবার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো থেকে ‘অস্থায়ীভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের’ ঘোষণা দিয়েছে। সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পুনরায় সংগঠিত হবে।

সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে স্থানীয় চারটি প্রধান দল বা পক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এগুলো হলো আসাদের অনুগত সরকারি বাহিনী, সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস, এইচটিএস ও অন্যান্য সহযোগী বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং তুর্কি ও তুরস্ক-সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী।

বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক আক্রমণের শুরু যেভাবে
ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যেদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, সেদিন অর্থাৎ গত বুধবার এইচটিএস নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী তাদের উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের ঘাঁটি থেকে হামলা পরিচালনা করে।

এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী বলেছে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর হামলার প্রতিশোধ নিতেই তারা সাম্প্রতিক আক্রমণ শুরু করেছে। সম্প্রতি ইদলিবের আরিহা, সারমাদাসহ বিভিন্ন শহরে আসাদ অনুগত সরকারি বাহিনীর হামলায় শিশুসহ বেসামরিক অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া তাদের ঘাঁটিতে (বিদ্রোহী বাহিনীর) ভবিষ্যতে যেকোনো হামলা রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে ওই আক্রমণ (আলেপ্পোতে) চালানো হয়।

ইদলিবে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ২০২০ সালে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর এ অঞ্চলে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে এটিই (বুধবার শুরু করা বিদ্রোহীদের হামলা) প্রথম বড় কোনো অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওই মধ্যস্থতায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ এইচটিএসের যোদ্ধারা সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে আলেপ্পোর অন্তত ১৯ এলাকা দখল করে নেন। মাত্র তিন দিনে পুরো আলেপ্পো দখল করেন তাঁরা। এখন তাঁরা হামা প্রদেশের দিকে এগোচ্ছেন।

এদিকে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গোলাবর্ষণের মাধ্যমে এসব হামলার জবাব দিয়েছে সিরিয়ার সরকার। রাশিয়াও আসাদের পক্ষে আলেপ্পোতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিদ্রোহীরা আরও বেশি এলাকা দখলে নেন এবং পূর্ব ইদলিবের গ্রামগুলো থেকে সরকারি বাহিনীকে বিতাড়িত করেন। এরপর এমফাইভ মহাসড়ক ধরে সামনে এগোতে থাকেন। এটি একটি কৌশলগত সড়ক, যা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী দামেস্কের দিকে চলে গেছে।

সিরিয়া যুদ্ধের পর্যবেক্ষক ও যোদ্ধাদের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের মধ্যে বিদ্রোহী বাহিনী দুটি গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং আলেপ্পো শহরের পশ্চিম প্রান্তে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়। এরপর তারা শহরের বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে বিমান হামলায় সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া।

গত শনিবার অনলাইনে বিদ্রোহী বাহিনীর বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, শহরের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় বিদ্রোহী যোদ্ধারা আলেপ্পোর প্রাচীন দুর্গের পাশে ছবি তুলছেন।

আলেপ্পো দখল করার পর বিদ্রোহীরা দক্ষিণে অগ্রসর হয়েছেন। তবে তাঁরা হামার কেন্দ্রীয় শহরে পৌঁছেছেন কি না, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেছে।

ইতিমধ্যে বিদ্রোহীরা তাঁদের জন্য নিরাপদ এলাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি ইদলিবের বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের সম্প্রতি মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত এলাকায় নিজেদের বাড়িতে ফেরানোর প্রচেষ্টার কথাও জানিয়েছেন।

তানহা আজমী


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল