অ আ আবীর আকাশ,লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরে ফরিদা ইয়াসমিন নামের এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিয়ে পদত্যাগ দাবি করে পরীক্ষা বর্জন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে ও ডিসি অফিসে অবস্থান করে।
বুধবার সকাল থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরশহরের বালিকা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে স্কুলের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। অভিযুক্ত ফরিদা ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দেখে গোপনে পালিয়ে যান।
ষষ্ঠ,সপ্তম,অষ্টম,নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করে বলেন- ‘ফরিদা ইয়াসমিন অনিয়ম,পাঠদানে অক্ষমতা ও পাঠদানে অনীহা,শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে মানসিক চাপে রাখেন। যার শিক্ষকতার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের নিয়মে সাংঘর্ষিক।
শিক্ষার্থীদেরকে ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে প্রাইভেট পড়তে চাপাচাপি করেন। যে তার কাছে প্রাইভেট না পড়ে তাকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিবেন বলে শ্রেণিকক্ষে হুমকি-ধমকি দেন।তিনি শ্রেণিকক্ষে মেয়েদের শারীরিক গঠন নিয়ে নানা কুরুচি পূর্ণ প্রকাশ্য মন্তব্য করেন এই শিক্ষিকা।
বালিকা বিদ্যানিকেতনের অষ্টম শ্রেণীর আরাবির রহমান লিমা, নবম শ্রেণীর জান্নাতুল তাজিন, সপ্তম শ্রেণীর তানজিনা ও সামিয়া, নবম শ্রেণীর মাহমুদা সুলতানা মৌমিতা ও সুরাইয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন-‘আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া মাত্রই ফরিদা ম্যাডাম আমাদের অফার করে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে। যারা পড়ছে তারা যতই খারাপ করুক কিন্তু পরীক্ষায় তাকে পাস করিয়ে দেন। যে না পড়ে তাকে মার্ক কমিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, ক্লাসে প্রকাশ্যে মেয়েদের শারীরিক গঠন নিয়ে নানা অশোভন মন্তব্য করেন। কেউ মাস্ক পরে আসলে তাকেও হেনস্তা করে মাস্ক খুলে জানালা দিয়ে ফেলে দেন ফরিদা ম্যাম।’
শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে আরো অভিযোগ করে -‘যে মেয়ে ম্যামের কথা না শুনে তার পিছনে খারাপ বখাটে ছেলেদের লেলিয়ে দেন। এরকম পরিস্থিতির শিকার হয় মহুয়া (ছদ্মনাম) নামের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তিনি শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ভাই বোনসহ পরিবারকে নিয়ে নানা খারাপ মন্তব্য করেন। সামান্য খুঁত পেলে তিনি মেরে রক্তাক্ত করেন।’
ফরিদা ইয়াসমিনের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনেককে মারধোর করার খবর পাওয়া গেছে।
এই নিয়ে জেলা প্রশাসক ও সাবেক সাংসদ এড.নয়নের কাছে প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি শিক্ষার্থীরা।
শুধু তাই নয় ফরিদা ইয়াসমিন প্রধান সহকারী শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ ও শাহানারা আক্তারের সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেন। শাহানারা আক্তারের গালে চড় মারেন, লাথি মারেন জুতা হাতে মারতে তেড়ে আসেন। এই নিয়ে সহকারী শিক্ষিকা শাহানারা আক্তার বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
প্রধান শিক্ষকের চেয়ার ভাগিয়ে নিতে ফরিদা ইয়াসমিন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথের নামে আয়াকে জড়িয়ে নানা কুৎসা রটান।
এইসব নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করলেও বহাল তবিয়তে আছেন ফরিদা ইয়াসমিন।
শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন এ বিষয়ে প্রথমে বলেন-‘আমি মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলব। কিছুক্ষণ পর সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ বলেন-‘আমার বিরুদ্ধে তিনি কুৎসা রটান এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ভূয়া ও মিথ্যা খবর পরিবেশন করেন। আমি এর কিছুই জানি না।’
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন-‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। সব মিলিয়ে তদন্ত চলছে, আগামীকাল চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’
তানহা আজমী