বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

মিষ্টি সুরের পাখি দোয়েল

শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
মিষ্টি সুরের পাখি দোয়েল

সময় জার্নাল ডেস্ক:

দোয়েল পাখিদের মধ্যে অন্যতম সুন্দর প্রকৃতির পাখি, বাংলাদেশের প্রকৃতিতে তার আছে অনন্য ছোঁয়া। বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল আমাদের অতি পরিচিত একটি পাখি। গ্রাম বাংলার সর্বত্রই দোয়েল পাখি বিরাজমান। সকাল সাঁজে দোয়েল পাখির মিষ্টি শিষ আমাদের মন মাতিয়ে তুলে।

আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল, যা তার মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ ও সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম copsychus saularis. আমাদের দোয়েল বিদেশে সাধারণত ম্যাগপাই রবিন নামে পরিচিত। কালো-সাদা রঙের এই পাখি আকারে ছোট, লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। পুরুষ দোয়েলের দেহ চকচকে কালো এবং পেটের অংশ সাদা, অন্যদিকে স্ত্রী দোয়েল তুলনামূলক ফিকে রঙের।

দোয়েল পাখি গায়ক পাখি। বিভিন্ন রকম সুরে এরা গান গাইতে পারে। খাবারের চাহিদা না থাকলে এরা গাছের ডালে বসে মিষ্টি মোলায়েম শিস দেয়। লেজের ডগা নাচায়। স্থিরভাবে বসা অবস্থায় দোয়েলের লেজ মোরগের লেজের মতো দেখায়। দোয়েল পাখি অন্য পাখির ডাকও নকল করতে পারে।

এরা সাহসী, স্বাধীন এবং অস্থির ধরনের পাখি, সর্বদাই গাছের ডালে বা মাটিতে লাফিয়ে বেড়ায় খাবারের খোঁজে। এদের চাল-চলনে একধরনের আভিজাত্যের ছাপ দেখা যায় যার ফলে এরা খাবার সংগ্রহের সময় একেবারে লোকালয়ে চলে আসে যার ফলে বিড়াল কিংবা অন্য শিকারী দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়।

প্রজনন ঋতুতে পুরুষ দোয়েল খুব ভোরে এবং পড়ন্ত দুপুরে সুরেলা গলায় স্ত্রী দোয়েলকে আকৃষ্ট করার জন্য অত্যন্ত জোরে এবং সুরেলা গলায় গান গায়। তবে স্ত্রী দোয়েলও পুরুষ দোয়েলের উপস্থিতিতে ডাকতে পারে। সকালবেলা সূর্য উঠার আগেই দোয়েল গান গাওয়া শুরু করে দেয়। আর গানের মাঝে লেজ উঠেতে তাল মিলায়। দোয়েল এক নাগাড়ে সাত থেকে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত গান গাইতে পারে।

প্রয়োজন না হলে দোয়েল এক নাগাড়ে বেশি দূর উড়ে না। মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদ্য খোঁজে। ধান কিংবা ভাত খাবার জন্য এ পাখি গৃহস্থের গোলাঘর, কিংবা রান্না ঘরেও ঢুকে পড়ে। উঠান, বাড়িজুড়ে ওদের অবাধ চলাচল।

দোয়েল গ্রামের ঝোপঝাড়, বাগান ও বনাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এটি মূলত পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে এবং ভোরের শান্ত পরিবেশে সুরেলা গান গেয়ে প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে। দোয়েলের এই সুর দেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু দোয়েল বর্তমানে পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি। বনাঞ্চল ধ্বংস, পরিবেশ দূষণ এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল হ্রাসের কারণে দোয়েলের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। জাতীয় পাখি হিসাবে দোয়েল সংরক্ষণে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। প্রকৃতি রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পোকামাকড়ই দোয়েলের প্রধান খাদ্য। কিন্তু কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার এর খাদ্য শৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বর্তমানে দোয়েল প্রধানত গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তবে শহরাঞ্চলেও দেখা যায় মাঝে মাঝে। পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বনাঞ্চল রক্ষা ছাড়া দোয়েলের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সরকার এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন সংরক্ষণ, কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং দোয়েলের প্রাকৃতিক আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। তা না হলে অনেক পশু ও পাখির মতো দোয়েলও একসময় হারিয়ে যাবে আমাদের প্রকৃতি থেকে।

বস্তুত দোয়েল রক্ষা করা শুধু পাখিটির জন্যই নয়, আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। দোয়েলের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করতে বাড়ির আশপাশে গাছ লাগানো এবং ঝোপঝাড় সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণের মাধ্যমে দোয়েলের জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

তানহা আজমী


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল