জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:
কৃষি অঞ্চল খ্যাত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় আমন ধান কাটাই-মাড়াই শেষ না-হতেই শীত আর শৈতপ্রবাহকে উপেক্ষা করে বোরো চাষাবাদের প্রস্ততি হিসাবে বীজতলা তৈরিতে কৃষকেরা ব্যস্ত থাকলেও বীজধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে বেড়েছে সবধরনের বীজ ধানের দাম। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও একদল অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বীজের দাম বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে সবধরনের বীজ ধানের দাম।
উপজেলার ফুলবাড়ী বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর উফশী জাতের বীজ ধান প্রতি কেজি ১০০-১৫০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের বীজ ধান ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবছর বোরো মৌসুমে উফশী জাতের প্রতিকেজি বীজ ধান ৩০০-৩৫০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের প্রতিকেজি বীজধান ৬০০ -৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দিনে দিনে যেভাবে শীতের প্রকোপ বাড়ছে, কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে তাতে বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়বে।বোরো রোপনের সময় বীজ সংকট দেখা দেয়ার আশু সম্ভাবনা দেখা দিবে জানান স্থানীয় কৃষকেরা।
বীজ ধানের দাম কেন বেড়েছে জানতে চাইলে খড়িবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বোরো বীজে ধানের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। বীজে ধানের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। ছাড়া একই ধান বীজ একেক দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করার দাবি জানান।
উপজেলার নওদাবশ এলাকার কৃষক ছামাদ মিয়া জানান, তিনি এবারে চার একর জমিতে চাষাবাদের জন্য বীজধান কিনছেন। প্রতি কেজি উফশী জাতের বীজ ধান ৩৫০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের বীজ ধান ৬৩০টাকা দরে কিনেছেন। তিনি আরো জানান , বিভিন্ন কোম্পানির বীজের মান নিয়ে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে এবং এই বীজ ব্যবহার করে বিগত সময়েও তারা প্রতারিত হয়েছেন। চলতি মওসুমেও তাদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।
রাবাইতারী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, বীজ ধান কেনার জন্য তিনি বাজারে গিয়ে হাইব্রিড জাতের ১ কেজি ধানের বীজ ৬৩০ টাকা দাম দেখে বীজ কিনতে পারেননি। হাইব্রিড জাতের ধান আবাদের ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে হাইব্রিড জাতের বীজ কিনতে না পেরে উফশী জাতের বীজ ধান কিনেছেন।তিনি আরো বলেন, শুরুর দিকে বীজে ধানের দাম এতবেশি ছিল না। যতই দিন যাচ্ছে বিক্রেতারা নানান অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় ইরি-বোরো মৌসুমে ১০ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ৩ হাজার ৭০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে হাইব্রিড জাতের বীজ ধান বিতরণ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ৫২৬ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বীজধানের বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারানুম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল প্রতিরোধে কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ধান বীজের দাম নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল প্রতিরোধে বাজার মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআই