সময় জার্নাল ডেস্ক:
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা।
১৫ ডিসেম্বর ছিল মহাকাশ নিয়ে বাংলাদেশী আগ্রহী শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানমনস্ক তরুণদের জন্য রোমাঞ্চকর দিন। তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসেছিলেন স্বয়ং নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে হাজির হয়েছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন এ আয়োজনে।
নাসার প্রধান মহাকাশচারী আকাবার মুখেই শুনে নেই রোমাঞ্চকর সেই মহাকাশের গল্প:
"আমার নভোচারী হওয়ার যাত্রাটা খুব দীর্ঘ। আমার প্রথম অনুপ্রেরণা জাগে, যখন আমার দাদা আমাকে অ্যাপোলো অভিযানের অংশ হিসেবে চাঁদে নভোচারীদের হেঁটে চলার পুরোনো ফিল্ম দেখাতেন।
আমি ভাবতাম, বাহ্, এটা খুবই চমৎকার। তারপর আমি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ধরনের বই পড়তে খুব পছন্দ করতাম। এ ধরনের পড়াশোনা মহাকাশে যাওয়ার কল্পনা ও চিন্তা জোগাত। কিন্তু জীবন আপনাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। নভোচারী হওয়ার আগে আমি স্কুলশিক্ষক হিসেবে কাজ করতাম, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের গণিত ও বিজ্ঞান পড়াতাম।
সেই সময় নাসা কিছু শিক্ষককে পূর্ণকালীন নভোচারী হিসেবে নিয়োগের জন্য খুঁজছিল। তাই নভোচারী হওয়ার জন্য জীবনে বিশেষ কোনো বাঁক ছিল না, বরং এটি ছিল একটি যাত্রা-বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা, আমার শিক্ষা। আর তারপরই একজন শিক্ষক থেকে নভোচারী হওয়ার দারুণ সুযোগটা চলে আসে। আমি আসলে অনেক ভাগ্যবান।
নভোচারী হওয়া বেশ কঠিন। কারণ, অনেকেই আবেদন করেন। কিন্তু আমরা নিয়োগ দিই অল্প কয়েকজনকে। কাজেই একজন নভোচারী হওয়ার জন্য আপনার অভিজ্ঞতা নাসার জন্য কতটা সহায়ক, তা তুলে ধরাই সবচেয়ে কঠিন দিক। আমার মতে, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ ছিল আমার অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করা, যার মাধ্যমে অন্য আবেদনকারীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া-স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি ভাইবা।
পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। তারপর আপনি যদি ভাগ্যবান হন, তারা আপনাকে নির্বাচিত করবে। আমার বেলায়, আমি একজন স্কুলশিক্ষক থেকে নভোচারী হয়েছি। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এখন আমি আবার ছাত্র। কারণ, নভোচারী হওয়ার জন্য যা কিছু শেখা দরকার, আপনাকে সবকিছু শিখতে হবে।
নভোচারী হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ খুবই কঠিন। নিয়োগের পর প্রথম দিকে আপনাকে একজন ‘নভোচারী প্রার্থী’ হিসেবে সম্বোধন করা হবে। আর মহাকাশে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে। এই প্রশিক্ষণ প্রায় দুই বছরের। আপনি মৌলিক দক্ষতা শিখবেন,
*স্পেসওয়াক-মহাশূন্যে মহাকাশযান থেকে বাইরে বের হওয়া,কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখবেন।
*রোবোটিক হাত ওড়ানো শিখতে হবে।
*উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন জেট ওড়ানো শিখতে হবে-এটা যোগাযোগ দক্ষতা, স্বল্প সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা তৈরি করে।
আপনাকে দুই বছর ধরে এই প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এরপর মহাকাশ ফ্লাইট মিশনের আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তারপর আরও ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ হবে। অর্থাৎ, প্রথম মহাকাশ মিশনের জন্য প্রস্তুত হতে আপনার প্রায় চার বছরের প্রশিক্ষণ লাগবে।
তিনটি মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৩০৬ দিন থাকাসহ আমি অনেকগুলো মহাকাশ মিশনে গিয়েছি।মহাকাশে যাওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর। আমার অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত আছে। এর মধ্যে একটি প্রিয় মুহূর্ত ছিল স্পেস শাটলে আমার প্রথম ফ্লাইটে। আপনি পৃথিবী ত্যাগ করলেন, আপনারা দুজন, ৮ দশমিক ৫ মিনিট সময় লাগে। স্পেস শাটল কাঁপছিল। আপনি জানেন, এর জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আপনি সিমুলেটরে (প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র) ছিলেন। কিন্তু এখন বাস্তবে এটার মধ্যে আছেন।
সুতরাং এটা দারুণ এক মুহূর্ত ছিল। ৮ দশমিক ৫ মিনিট পর আপনি মহাকাশে পৌঁছান। প্রথমবার আমি স্পেস স্টেশন দেখলাম, এত বিশাল! ল্যাবরেটরি, মহাকাশে নির্মিত আমাদের বাড়ি ছিল সত্যিই অবিশ্বাস্য। এটি সম্ভবত মহাকাশে থাকার প্রথম স্মৃতিগুলোর একটি। কিন্তু মহাকাশে ভেসে বেড়ানোটা দুর্দান্ত।
জানালার বাইরে আমাদের সুন্দর গ্রহ তাকিয়ে দেখা। এসব স্মৃতি আমি কখনো ভুলব না। বিশেষ করে দুপুরে খাবারের সময়। এটা দারুণ রোমাঞ্চকর সময়। এটাই সম্ভবত আমাদের মিশনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ছিল। আমি নিশ্চিত, আমার হৃদ্যন্ত্রের কম্পন কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল।
মনে হয় না ভীত ছিলাম। আমরা অবশ্যই উত্তেজিত ছিলাম। বিশেষ করে উৎক্ষেপণের সময়। সময়টা ছিল খুব উত্তেজনাকর। সম্ভবত এটি ছিল আমাদের মিশনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। আমি নিশ্চিত, আমার হৃৎস্পন্দন একটু বেশি ছিল।
কিন্তু এটি আসলে ভয় না; বরং উত্তেজনা। আপনার সব প্রশিক্ষণ রয়েছে। আপনি মিশন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত। স্বীকার করছি, প্রথম স্পেসওয়াকের জন্য যখন দরজার বাইরে গেছি, তাঁরা দরজা খুলে দিলেন। এখন মহাকাশ স্টেশন থেকে মহাকাশে যাচ্ছি। প্রথম মিনিটে কিছুটা ভয় কাজ করছিল। তারপর আপনার প্রশিক্ষণের প্রয়োগ শুরু। যা শিখেছি, গিয়ে সে কাজ করা। তাই ভয়ের চেয়ে উত্তেজনাই বেশি।
আমাদের করা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি সম্ভবত স্পেসওয়াক। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে আমাদের খুব বড় একটি সুইমিংপুল আছে। সুইমিংপুলটিতে মহাকাশ স্টেশনের একটি মডেল রয়েছে। আমরা যে হ্যান্ডরেইল (সিঁড়ির হাতল) ধরি, একই ধরনের সবই এতে রয়েছে। যে সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করব, তার সবই এখানে রয়েছে। আপনি আসলে স্পেসওয়াকের আগে সেগুলো দিয়ে বারবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এসব প্রশিক্ষণ খুব সহায়ক, কিন্তু কঠিন। প্রশিক্ষণের সময় আমরা সকাল ৯টায় পানির নিচে যেতাম। আর বিকেল ৩টায় পানির ওপর উঠে আসতাম। এভাবে প্রায় ছয় ঘণ্টা পানির নিচে থাকতাম, কোনো খাবার ছাড়াই। সামান্য পানি (খাবার পানি) ছিল। এরপর বাস্তবে যখন আপনি স্পেসওয়াক করবেন, তখন আপনি জানেন যে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো, সেই ছয় বা সাত ঘণ্টা ধরে প্রতিটি কাজে আপনার মনোযোগ দেওয়া। স্পেসওয়াকের সময় আসলে সেটাই করতে হয়।
আর এতে অনেক প্রস্তুতির দরকার। যখন কোনো কাজ পরিচালনা করতে হয়, তখন সে প্রস্তুতিই আপনাকে সফল করে তোলে।
আমাদের মহাকাশ ও মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার মূল কারণ, বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম পরিচালনা করা।
সেই বিজ্ঞানের একটি অংশ হচ্ছে এমন কাজ করা, যা পৃথিবীতে জীবনকে উন্নত করে। তাই, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পৃথিবীতে কাজ করা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই, যাতে পৃথিবীতে আমরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারি। আমরা কীভাবে আরও অনুসন্ধান করতে পারি, সেটি কাজের আরেকটি বিষয়। যেমন আমরা কীভাবে চাঁদে-মঙ্গল গ্রহে যাওয়া শিখতে পারি, তা নিয়ে গবেষণা হয়।
আমার সবচেয়ে স্মরণীয় গবেষণাগুলোর একটি, মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানো। সেটা মজার ছিল। একটি বীজ নিলাম, তারপর পানি দিলাম, আর উদ্ভিদের বেড়ে ওঠা নথিভুক্ত করলাম। আমরা আসলেই তিন জাতের লেটুসগাছ জন্মাতে পেরেছিলাম। সেগুলো চাষাবাদ করতে পেরেছিলাম। তারপর সেগুলো খেয়েছিলাম।
কিন্তু যখন আমরা চাঁদে যেতে চাই, মঙ্গল গ্রহে যেতে চাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করা শিখতে পারব। কাজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা আরও অনেক গবেষণাই মহাকাশে করছি—মানবদেহ সম্পর্কে শেখা, কোষ নিয়ে কাজ করে নতুন ওষুধ তৈরি করা, যা আমরা পৃথিবীতে ব্যবহার করতে পারি।
কাজেই চমৎকার অনেক বৈজ্ঞানিক কাজ করেছি, যা নভোচারী হিসেবে আমাদের প্রাথমিক কাজ। আমরা পৃথিবীতে থাকা বিজ্ঞানীদের কান, চোখ ও হাত হিসেবে কাজ করি।
মহাকাশ স্টেশনে বৈজ্ঞানিক কাজ পরিচালনা করা একটি দারুণ বিষয়। আপনি জানেন যে প্রযুক্তি ও ওষুধ খাতে সত্যিকার অগ্রগতি নিয়ে আসছে, এমন এক বিশাল দলের আপনি ছোট্ট একটি অংশ। একজন প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে তাদের সঙ্গে অনেক যোগাযোগ করি। তাই মহাকাশে অবস্থান করা ও সেখানে যা হচ্ছে, তার অংশীদার হওয়াটা একজন ব্যক্তি হিসেবে সম্মানের। আমরা জানি যে আমরা মহাকাশে যা শিখছি, তা পৃথিবীর প্রত্যেকের উপকার করতে যাচ্ছে। এ বিষয়টাই আমাদের আরও অনুসন্ধানে সাহায্য করে।
মহাকাশে যাওয়া সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয়গুলোর একটি। আপনি পৃথিবী থেকে যাত্রা করেন। রকেটের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হন। আর এটি মাত্র ৮ দশমিক ৫ মিনিট সময় নেয়। আপনি পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণের অধীন থেকে এখন মহাকাশে। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছেন।
আপনি ওজনহীন অনুভব করছেন। এটাকে আমরা মহাকাশ শাটলে মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশ বলি। স্পেস শাটলটি বেশ ছোট। তাই আপনি যখন সেখানে, তখন আপনার সিটবেল্ট বাঁধা। প্রথমবার যখন আপনি সিটবেল্ট খুলবেন, আপনি ভাসতে শুরু করবেন। খুবই দুর্দান্ত একটা বিষয়। তারপর মহাকাশ স্টেশনে প্রবেশের পর দেখবেন, এটা এক বিশাল গবেষণাগার। তখন আপনি স্টেশনের পুরো মডিউলজুড়ে ভাসতে পারেন।
আপনি নিজেকে সুপারহিরোর মতো অনুভব করেন। কারণ, আপনি উড়তে পারেন। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তাঁদের জিজ্ঞাসা করছিলাম, স্পাইডারম্যান পছন্দ করেন কি না? তাঁরা সবাই বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্পাইডারম্যান পছন্দ করি। যখন আপনি মহাকাশে, তখন আপনি মেঝে থেকে লাফ দিতে পারেন। দেয়ালে ঝুলতে পারেন। ছাদের দিকে লাফ দিতে পারেন।
সবই খুব স্বাভাবিক মনে হয়। সেসব মানিয়ে নিতে আপনার শরীর প্রায় একদিন সময় নেয়। এটাই পৃথিবীতে থাকার সঙ্গে এখানে (মহাকাশ স্টেশন) থাকার পার্থক্য। এক-দুই দিনের মধ্যে মনে হবে, আমরা মহাকাশে থাকার জন্যই জন্মেছি। আপনি শিখে যান, কীভাবে শরীর নড়াচড়া করতে হয়, কীভাবে ভেসে বেড়াতে হয়। সেখানে যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টা খুবই দ্রুত হয়। আপনার শরীরকে মানিয়ে নিতে হয়। আমরা মানুষেরা মহাকাশে বসবাস করা ও সেখানকার কাজটা সত্যিই ভালোভাবে করতে পারি।
দীর্ঘস্থায়ী মহাকাশ ভ্রমণ অবশ্যই কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আমরা চাঁদে ফিরে যাওয়ার জন্য কাজ করছি, যাতে একটা পর্যায়ে আমরা মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে পারি।
মঙ্গল গ্রহে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যাঁরা সেখানে কাজ করতে যাবেন, তাঁদের জীবন বাঁচানোর উপায়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। মঙ্গল গ্রহের যাত্রা প্রায় ছয় মাসের হতে যাচ্ছে। যেমনটা বলেছিলাম, যখন আমরা মহাকাশ স্টেশনে যাই, ৮ মিনিটে মহাকাশে পৌঁছাই। আর এক দিনের মধ্যে মহাকাশ স্টেশনে থাকি।
চাঁদে যেতে চাইলে তিন দিন সময় লাগে। কিন্তু মঙ্গলে যখন যাবেন, সেটা অনেক দূরে। বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হবে বিকিরণ, আর কীভাবে আমরা শরীরকে রক্ষা করতে পারি, সেটা। আমার মতে, এখানে আমাদের আরও কিছু কাজ করার বাকি আছে। আর এই কাজ বেশ কঠিন।
কিন্তু আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা বিভিন্ন ধারণাকে এক করছি। আমি মনে করি, মানবজাতি হিসেবে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা একসঙ্গে অতিক্রম করতে সক্ষম হব। তবে কাজটা খুবই কঠিন হবে। কিন্তু আমি জানি, আমরা সেখানে পৌঁছাব।
পৃথিবীতে ফেরাটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। মহাকাশে থাকাকালীন প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করি। আমাদের একটি প্রতিরোধমূলক ব্যায়ামের যন্ত্র রয়েছে, যা ওজন তোলার মতো অনুভূতি দেয়। প্রতিদিন প্রায় ঘণ্টাখানেক এটা অনুশীলন করতাম, যা মহাকাশে ভাসমান অবস্থায় আমাদের পেশিগুলো শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে।
আমাদের একটি ট্রেডমিলও রয়েছে, এটা মজার, যা মহাকাশে (মহাকাশ স্টেশন) দৌড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে বাঞ্জি কর্ড রয়েছে, যা আমাদের ট্রেডমিলে ধরে রাখে, যাতে আমরা দৌড়াতে পারি। এ ছাড়া আমাদের একটি স্টেশনারি সাইকেল রয়েছে, যা আমাদের হৃৎপিণ্ড ও রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থার জন্য উপকারী এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। মহাকাশ থেকে ফিরে যদি ব্যায়াম না করেন, তা আপনার পেশীশক্তি ও হাড়ের ঘনত্বের ওপর প্রভাব ফেলবে।
যখন আপনি পৃথিবীতে ফিরে আসেন, তখন ছয় মাস পর প্রথমবারের মতো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনুভব করবেন। মাথাটা খুবই ভারী মনে হবে। হাত তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আপনার মনে হবে, মানুষ পৃথিবীতে কীভাবে বাস করে? কাজেই, একটি অভিযোজনকাল থাকে। তাই প্রথম কয়েকটা দিন কিছুটা কঠিন।
আমরা পৃথিবীতে ফিরে প্রথম ৪৫ দিন ব্যায়াম ও মানিয়ে নেওয়ার কাজ করি। এটা পৃথিবীতে আবার বসবাসের জন্য আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।
আমার সবচেয়ে বড় সুপারিশ হলো, এমন একটি পেশা খুঁজে বের করা, যা আপনি সত্যিই ভালোবাসেন, যার প্রতি আপনার গভীর আগ্রহ রয়েছে। আর এরপর কঠোর পরিশ্রম করুন।
আপনি আপনার পেশাকে ভালোবাসেন, গভীর উৎসাহী হন, এটা আসলে কাজের মতো মনে হবে না। মনে হবে, আপনার যা ভালো লাগে, সেটাই করছেন। এমন লোকদের আমি বলব, নভোচারীর পেশা বেছে নিন। আমার পড়াশোনা ভূতত্ত্ব নিয়ে। আমাদের মধ্যে রয়েছে ভূতত্ত্ববিদ, চিকিৎসক, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, পাইলট।
কাজেই আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকজন রয়েছেন। মহাকাশ অনুসন্ধানে আমাদের একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দল দরকার। তাই কোনো পেশাই অন্যটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই আপনি যা করেন, সেটির প্রতি উৎসাহী হোন। কঠোর পরিশ্রম করুন। আর এ যাত্রাপথে মজা করুন। প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি সেটা জানেন, আপনিও মহাকাশে যেতে পারেন।
তবে আপনি জানেন, আমরা সবাই প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী-আমরা সবাই একসঙ্গে অনুসন্ধানে নামি।
নাসার সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তবে নাসার মহাকাশচারী হতে আপনাকে অবশ্যই একজন মার্কিন নাগরিক হতে হবে। কিন্তু নাসায় আরও অনেক চাকরি আছে, যেখানে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের নিয়োগ দিই। তাই কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে বেসরকারি মহাকাশচারীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অন্যান্য দেশও তাঁদের নাগরিকদের মহাকাশে পাঠানোর জন্য কাজ করছে।
কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি কোনো শিক্ষার্থী নভোচারী হতে আগ্রহী হন, তাঁদের জন্য এটা একটা রোমাঞ্চকর সময়। আবারও বলছি, এমন কিছু করুন, যেটা আপনি ভালোবাসেন। আপনি হয়তো জানেন না, কখন সে সুযোগ তৈরি হয়ে যাবে।"
তানহা আজমী