রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাড়িতে ডাকাতি প্রতিরোধে যা করবেন

শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
বাড়িতে ডাকাতি প্রতিরোধে যা করবেন

সময় জার্নাল ডেস্ক:

 বাসা-বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জীবনের নিরাপত্তা। তাই এই পরম আশ্রয় যখন হুমকির মুখে পড়ে, তখন তা জীবনের অস্তিত্বের জন্যই ক্ষতিকর। বিশেষ করে, ডাকাতির মতো অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে সম্পদের ক্ষতি থেকে শুরু করে প্রাণনাশেরও আশঙ্কা থাকে। তাই এর জন্য প্রয়োজন অগ্রিম সতর্কতা।

এই লেখায় কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে, যা বাড়ির মালিকদের পাশাপাশি ভাড়াটিয়াদের জন্যও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। চলুন, কৌশলগুলোর ব্যাপারে বিশদ জেনে নেওয়া যাক।

বাসা-বাড়িতে ডাকাতি এড়াতে ১১টি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা

বাসস্থানে চুরি বা ডাকাতির আশংকা কমাতে বাড়ির সদস্যদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বাসায় ডাকাতের আক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।

আগন্তুকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া

বাসা-বাড়ির দরজায় করাঘাত বা কলিং বেলের আওয়াজ শুনে তৎক্ষণাৎ সদর দরজা না খুলে দরজার পিপ হোল দিয়ে আগন্তুককে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অপরিচিত কেউ দরজার ওপাশে থাকলে পরিচয় ও আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে। সন্দেহজনক এক বা একাধিক ব্যক্তি যদি বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে তৎক্ষণাৎ নিরাপত্তারক্ষী বা প্রতিবেশীদের সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজনে থানা বা আর্মি ক্যাম্পে ফোন দিতে হবে।

সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তির মধ্যে একটি হলো ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা। মূল প্রবেশদ্বার ও গ্যারেজে ক্রমাগত নজরদারির জন্য এই ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা যেতে পারে। অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড হয়ে থাকে, ফলে দুষ্কৃতিকারীরা এই ব্যবস্থাযুক্ত স্থাপনাগুলো থেকে দূরে থাকে।

আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোতে হাই-ডেফিনিশন ভিডিও রেকর্ডিং, নাইট ভিশন ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে পরিচালনা করার সুবিধা থাকে। এর ফলে এগুলোর মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে তাৎক্ষণিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত বা সন্দেহভাজন আনাগোনা তদারক করা সম্ভব হয়। এমনকি, বাড়িতে না থাকলেও দূরবর্তী স্থান থেকে এই নজরদারি অব্যাহত রাখা যায়।

মোশন সেন্সর লাইট এবং সাইরেন অ্যালার্ম স্থাপন

ঘরবাড়ির আঙিনায় এমন কিছু স্থান থাকে যেগুলো পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তুলনামূলকভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। মোশন সেন্সর লাইট লাগানোর ক্ষেত্রে এই স্থানগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। এই উন্নত প্রযুক্তি যেকোনো নড়াচড়া শনাক্ত করে এবং নির্দিষ্ট স্থানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলোকিত হয়ে ওঠে। এটি মূলত চোর বা গুপ্ত হামলাকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর।

এটির সঙ্গে যখন সাইরেন অ্যালার্ম যুক্ত করা হয়, তখন দুটো মিলিয়ে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি হয়। একসঙ্গে কয়েক জোড়া কদমের অনুপ্রবেশ বা দরজায় কষাঘাতের জন্য প্রধান ফটক বা দরজা এই ডিভাইস সংযুক্ত করার উপযুক্ত স্থান হতে পারে। এতে করে অ্যালার্মের শব্দে শুধু বাড়ির ভেতরে থাকা লোকেরাই নয়, আশপাশের প্রতিবেশীরাও সজাগ হয়ে যাবে। ফলে সংকটাপন্ন পরিবারকে বাঁচাতে তারাও এগিয়ে আসতে পারবে অথবা পুলিশকে জানাতে পারবে।

রাতে ঘুমানোর আগে সব দরজা-জানালা বন্ধ করা

বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বার এবং জানালাগুলো যদি অসাবধানে খোলা রাখা হয়, তবে বাড়িতে প্রবেশের জন্য প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতাই থাকে না। চুরি বা ডাকাতি সাধারণত রাতের অন্ধকারে ঘটে এবং এই ধরনের ভুলের কারণে তখন চরম মূল্য দিতে হয়। অনেকেই বাতাস চলাচলের জন্য রাতভর জানালা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েন। এটি বিশেষ করে বিল্ডিংয়ের নিচের ২-৩ তলার বাসাগুলোর জন্য ক্ষতিকর।

অনেক বাসায় বারান্দা বা জানালায় টেকসই গ্রিল থাকে না। তাই অন্তত প্রধান ফটকে উচ্চমানের ডেডবোল্ট লক অথবা কমপক্ষে দুটি স্তরের তালা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা উচিত। এ ছাড়া, প্রতিদিন ঘুমানোর আগে প্রত্যেকটি লক ভালোভাবে চেক করে নেওয়া একটি ভালো অভ্যাস।

প্রতিটি ব্লক বা মহল্লায় টহলরক্ষীসহ গেট নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ

জানমালের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয় আমলে নিয়ে শুধু রাতের জন্যই নয়, ২৪ ঘণ্টার জন্য অতন্দ্র প্রহরার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বিল্ডিংয়ে তো থাকবেই, সেই সঙ্গে ব্লক বা মহল্লার প্রধান গেটেও নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ দিতে হবে। টহলের সময় গেটগুলোতে যেন শূন্যস্থান সৃষ্টি না হয় সেজন্য রক্ষীর সংখ্যা বাড়াতে হবে।

এর মধ্য দিয়ে এলাকায় প্রবেশাধিকার নিরীক্ষণের একটি ব্যবস্থা তৈরি হবে। সাধারণত কেবল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সেই এই ব্যবস্থা বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু নির্জন রাস্তার বাড়িগুলোর ক্ষেত্রেও গার্ড মোতায়েনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

থানা ও আর্মি ক্যাম্পের যোগাযোগ নম্বর সংগ্রহে রাখা

পরিস্থিতি একদম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিরাপত্তা বাহিনীর যোগাযোগের তথ্যগুলো সংগ্রহে রাখা। এতে দুর্ঘটনা সৃষ্টির আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন কলের মাধ্যমে তাদের জানানো যায়। নিরাপত্তা হটলাইনের পাশাপাশি কাছাকাছি থানা এবং আর্মি ক্যাম্পের মোবাইল নম্বরও সঙ্গে রাখা আবশ্যক।

খুব বেশি বিপজ্জনক অবস্থার ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদেরও এগিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে তারা কাউকে বিপদগ্রস্ত দেখার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য চাইতে পারে।

অ্যাপার্টমেন্টে নতুন আগত ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া

শুধু অ্যাপার্টমেন্টের মালিক বা বাড়িওয়ালাদের জন্যই নয়, নতুন আসা ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া পুরাতন ভাড়াটিয়াদেরও দায়িত্ব। কোনো ফ্ল্যাটে নতুন কাউকে সাবলেট দেওয়া হচ্ছে কি না এবং নবাগতদের পেশা নিয়ে সূক্ষ্মভাবে যাচাই করা উচিত।

বাড়ির মালিকরা নতুন ভাড়া নেওয়াদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পেশাগত পরিচয়পত্রাদি অবশ্যই সংগ্রহ করবেন। অপরদিকে, অন্যান্য ফ্ল্যাটবাসীরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশের ফ্ল্যাটের ব্যাপারে খোঁজ রাখবেন। এভাবে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত গোটা ভবনেই একটি স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা যাবে।

বাড়ির আঙিনা অন্ধকারাচ্ছন্ন না রাখা

দুষ্কৃতিকারীদের ডাকাতি করার ক্ষেত্রে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং জংলা, ঝোপ-ঝাড়ে আবৃত বাসাগুলো সবচেয়ে বেশি সহায়ক হয়। দুই বাড়ির মাঝের সংকীর্ণ স্থান এবং বাড়ির পেছন ভাগে এমন কিছু অল্প জায়গা থাকে যেগুলোতে দিনের বেলায়ও আলো-আঁধারির অবস্থা বিরাজ করে। যেসব বাড়িতে বাগান রয়েছে, সেখানে বাগানের সঠিক পরিচর্যা করা না হলে গাছপালা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। ফলে মধ্য দুপুরেও বাগান ও বাড়ির আঙিনায় সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না। তাই নিয়মিতভাবে ঝোপ, গাছ ও ঘাস ছাঁটাই করা জরুরি।

অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত লাইট বা মোশন সেন্সর লাইট দেওয়া যায়। দীর্ঘ দিন ধরে বাড়ির কাছাকাছি কোনো ল্যাম্প পোস্টের লাইট অকেজো হয়ে গেলে দ্রুত তা বদলে দিতে হবে।

বাড়ির সীমানা ঘিরে দুর্ভেদ্য কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন

অনুপ্রবেশে প্রাথমিকভাবে যতটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যায় ততই ভালো। বেশ পুরোনো উপায় হলেও বাড়ির সীমানা জুড়ে কাটাতারের বেড়া স্থাপন বাড়ির সার্বিক নিরাপত্তায় অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোতেও এসেছে যথেষ্ট পরিবর্তন। তাই বেড়া নির্বাচনে সূক্ষ্ম স্পাইক বা কোণযুক্ত ধারের মতো বৈশিষ্ট্যগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন মানসম্পন্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

প্রতিবেশীরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ

যেকোনো প্রতিরোধে সম্মিলিত থাকার কোনো বিকল্প নেই। একের বিপদে অপরজন এগিয়ে আসার মতো তাৎক্ষণিক উদ্যোগ আর কিছুই হতে পারে না। পাশাপাশি দুইটি বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়া তাদের নিজ নিজ বাড়ির আশেপাশে সন্দেহজনক আনাগোনার দিকে খেয়াল রাখা মানে পরস্পরের দিকেই খেয়াল রাখা। নবাগত ভাড়াটিয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে শেয়ার করা হলে পরবর্তী অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় একে অপরের বিপদে এগিয়ে যেতে পারে।

এভাবে আগে থেকেই অস্বাভাবিক কার্যকলাপগুলো নিজেদের মধ্যে শেয়ারের মাধ্যমে সতর্ক থাকা যায়। তাছাড়া ভয়াবহ সংকটপ্রবণ মুহূর্তগুলোতে কেবল পুলিশের ওপর নির্ভর না করে নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রহরার ব্যবস্থা করা যায়।

দীর্ঘ ছুটি কাটানো নিয়ে বাড়ির বাইরে কথা না বলা

বাড়ির বাইরে প্রতিবেশী বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডায় অনেকেই নিজের আসন্ন দীর্ঘ ভ্রমণের কথা বলে ফেলেন। এতে করে তিনি যে একটা উল্লেখযোগ্য সময় যাবত বাড়িতে অনুপস্থিত থাকবেন তা বৃহৎ পরিসরে জানাজানি হয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাকাত বা তাদের সহযোগীরা এলাকার ভেতরেই থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা সাজানো হয় নির্দিষ্ট কোনো বাড়িতে ডাকাতির জন্য। এ সময় তারা সাধারণ মানুষের বেফাঁস কথাগুলোর সুযোগ নেয়।

তাই দীর্ঘ ভ্রমণ বা ৬-৭ ঘণ্টার জন্য বাসায় একজনকে রেখে যাওয়ার বিষয়গুলো গোপন রাখা অপরিহার্য। মহল্লার কোনো খাবার হোটেল, টঙের দোকান, পার্ক বা গলির মোড়ে আড্ডায় এই বিষয়গুলো কোনোভাবেই প্রকাশ করা ঠিক নয়।

বাসা-বাড়িতে ডাকাতি প্রতিরোধের এই উপায়গুলো আবাসিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার নামান্তর। এর জন্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সংঘবদ্ধ ভূমিকার সমন্বয় ঘটানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মোশন-সেন্সর লাইট ও অ্যালার্ম স্থাপনের সুদূরপ্রসারি তাৎপর্য রয়েছে। রাতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, সীমানায় কাটাতারের বেড়া স্থাপন, মহল্লায় প্রহরা বাড়ানো এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহে রাখা সাধারণ সতর্কতা। তবে নতুন ভাড়াটিয়াদের যাচাই করা, দীর্ঘ ভ্রমণের ব্যাপারে ঘরের বাইরে আলাপ না করা, এবং প্রতিবেশীরা সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া সক্রিয়তার পরিচয় দেয়।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল