মো: মিরাজুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সংলগ্ন হলরোডের পরিচিত জুসের দোকান ’কাদের জুস কর্নার’ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে দোকানের মালিক আব্দুল কাদের খান (৩০)। হলরোডের খান জাহান আলী হল গেট কাদের জুস কর্নার সকলের কাছে কাদের ভাইর দোকান নামে পরিচিত। তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের বাকি খাওয়ার কারণে দোকান চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রায় দুই লক্ষ টাকা বাকি পড়ে গেছে। তারা অনেকে ক্যাম্পাসে আছেন আবার অনেকে পড়ালেখা শেষে খুলনা ছেড়ে চলে গেছেন।
২০১৯ সালে ব্যবসা শুরু করা কাদের ভাইয়ের এই দোকানটি স্থানীয় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, এবং পথচারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তবে ক্রমাগত বাকি পড়তে পড়তে আর্থিক সংকটে পড়ে দোকানটি চালানো আর সম্ভব হচ্ছেনা তার পক্ষে।
দোকানের মালিক আব্দুল কাদের খান জানান, তার কাছে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থীর বাকি আছে। কারও কারও কাছে পাওনা রয়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। বাকি চাওয়ার জন্য বারবার ফোন করলেও অনেকে ফোন ধরেন না, আবার কেউ কেউ মেসেঞ্জারে ব্লক করে দিয়েছেন। ভয় বা সংকোচের কারণে তিনি কাউকে জোর করতে পারেননি।
কাদের খান আরো জানান, তার পুরো পরিবার এই দোকানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তিনি চরম আর্থিক সংকটে রয়েছেন। কাজের সূত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ভাড়া থাকেন তিনি নিয়মিত খরচ তো রয়েছেই পাশাপাশি আমার বউবাচ্চা সহ তিনজনের সংসার দৈনন্দিন খরচ যোগাতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো।
কাদের জানান, “প্রায় দুই লাখ টাকার মতো বাকি পড়ে গেছে। দোকান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই জিনিস কিনি। আমার কাছে বিভিন্ন দোকানে প্রায় অর্ধলক্ষ্য টাকা দেনা পড়ে গেছে। সবাই যদি আমার পাওনা টাকা পরিশোধ করতো সেটা দিয়ে আমি দেনা পরিশোধসহ পরিবারের খরচ যোগাতে পারি। মানবিক যায়গা থেকে সবাই যদি দেনা পরিশোধ করে দেয় তাহলে আমার দেনা থেকে মুক্ত হতে পারবো।”
সম্প্রতি এ বিষয় ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ আলহামজা সিমন জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ধারণা থাকে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশে পাশের দোকানে বাকি খাওয়া যেনো তাদের অধিকার, কিন্তু বাকি দ্রুত পরিশোধ করা একজন মানুষের কর্তব্য তা অনেকেই ভুলে যায়। ফলাফল, কাদের ভাইয়ের মতো এমন হাসিখুশি, শিক্ষার্থীবান্ধব দোকানদারেরা ভুক্তভোগী হয় এবং ব্যাবসা বন্ধ সহ নানাবিধ আর্থিক সমস্যায় ভোগে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো: মুন্না হোসেন জানান, আমাদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসে বাকি খাওয়ার চর্চা থাকাটা অনাকাঙ্খিত। বাংলাদেশে মূলত বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হয়ে থাকে। কিন্তু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা খুবই অনাকাঙ্খিত। বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়া হীনকর্মকান্ড । বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। এটা কখনোই কাম্য নয়।বাকি খাওয়ার চর্চা অবিলম্বে বন্ধ হোক।
এমআই