মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কামলনগর কবরস্থানে তিল পরিমান জায়গা খালি নেই। প্রতিদিন এ কবরস্থানে দাফন হচ্ছে একাধিক লাশ। করোনা পরিস্থিতির কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গভীর রাতেও আসছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গে মৃত ব্যক্তির লাশ। কবর খুড়লেই বেরিয়ে আসছে তাজা লাশ। গোর খুড়েরা এ অবস্থা দেখে রীতিমত স্তম্ভিত। সাধারণ মানুষও এক প্রকার আতঙ্কিত। কোথায় দিবে স্বজনের দাফন? এ চিন্তায় অনেকেরই কপালে পড়ছে চিন্তার ভাজ।
এলাকাবাসি জানান, দেড়শ’ বছর আগের এ কবরস্থানটি ৭০ শতক জমির উপর অবস্থিত। দেড়শ’ বছর আগে মুন্সি আব্দুর রব সরদার এ কবরস্থানটি এলাকার মানুষের দাফনের জন্য দান করেছিলেন। এরপর থেকে এখানে হাজারো মানুষের দাফন হয়েছে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে জনসংখ্যা। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা পৌরসভার বাড়তি মৃত মানুষের চাপ সামলাতে কবরস্থানটি নিজেদের আয়ত্বে নেয়। কিন্তু সাতক্ষীরা পৌরসভা কবরস্থানটির সম্প্রসারণ করতে পারেনি। ফলে একই কবরের উপর নতুন কবর দিয়ে এ যাবৎ সমস্যার সমাধান করা হচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কবর খুড়লেই বেরিয়ে আসছে তাজা লাশ। এতে করে কবরস্থানটি সম্প্রসারণ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
কামালনগর কবরস্থানের গোরখুড়ে মোঃ রেজাউল ইসলাম ও মোঃ ওয়াজেদ আলী জানান, তারা এখানে মৃত মানুষের জন্য ১৫-২০ বছর ধরে কবর খুড়ছেন। এরআগে কবর খুড়লে পুরনো হাড়গোড় বের হতো। কিন্তু সম্প্রতি তারা লক্ষ্য করছেন কবর খুড়তে কোদাল মারলেই বেরিয়ে আসছে তাজা লাশ।
তাদের ধারণা, করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে বেশি। মৃত ব্যক্তিদের আনা হচ্ছে কবরস্থানে। করোনার আগে সপ্তাহে দু-একটি, মাসে ১০-১২টি এবং বছরে এক-দেড়শ’ লাশ দাফন করা হতো। কিন্তু মৃতের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। গত একমাসে প্রায় ৭০-৮০টি লাশ দাফন হয়েছে বলে জানা গোরখুড়েরা।
তারা বলেন, মরদেহের দুর্গন্ধে কবর খোড়াও এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। কখনো কখনো মানসিকভাবে তারা ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলছেন। তারাও কবরস্থানটির স্থান সম্প্রসারণের দাবি করেন ।
কামলানগর কবরস্থান পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ডাঃ আবুল কালাম বাবলা বলেন, লাশের চাপে কামালনগর কবরস্থানে তিল পরিমান খালি জায়গা নেই। গত ৯ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১৭দিনে ২৬টি লাশ দাফন হয়েছে। ইতোমধ্যে কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় তিন কোটি টাকায় দুই বিঘা জমি ক্রয়ের জন্য জমির মালিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সাতক্ষীরা পৌর এলাকার সকল মসজিদের ইমাম, খতিব, ধনাঢ্য দানশীল ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে কবরস্থান সম্প্রসারণে জমি কেনার ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে জমির মালিকদের ৭০ লক্ষ টাকা বায়না দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে বাকী কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। বিত্তশালী দয়ালু ব্যক্তিরা এগিয়ে না আসায় থমকে গেছে কবরস্থান সম্প্রসারণের কাজ। এছাড়া এখনো পর্যন্ত সরকারি কোন সহায়তাও পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ, সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি অবগত করেছি।
কবরস্থানটি সম্প্রসারিত করা পর্যন্ত দাফন কাজ স্থগিত করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা কবরস্থানটি সম্প্রসারণে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সময় জার্নাল/এমআই