বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশের প্রেক্ষাপট

সোমবার, জানুয়ারী ৬, ২০২৫
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশের প্রেক্ষাপট

ডাঃ মআআ মুক্তাদীর:

কাজী নজরুল ইসলাম এর লেখা / তার চেতনায় /তার গান দ্বারা উদ্বুদ্ধ আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ। জাতীর প্রয়োজনে কাজী নজরুল কে আমাদের প্রয়োজন হয়েছে, এখনো হচ্ছে সামনেও প্রয়োজন হবে হবে। তাই তো সবার মুখে মুখে ভালবাসার কবি জাতীয় কবি। 

৩০ অগ্রহাযণ ১৩৩৬/১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর  জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিবস / জাতীয় কবি হিসেবে অভিহিত দিবস।


কবি কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি বাস্তবায়ন পরিষদ

ঐতিহাসিক এই দিনে অর্থাৎ ৩০ অগ্রহাযণ ১৩৩৬/১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে কোলকাতার আলবার্ট হলে  সর্বভারতীয় বাঙ্গালিদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।  সেই অনুষ্ঠানে স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এর সভাপতিত্বে সেখানে উপস্থিত ছিলেন "স্বদেশী আন্দোলন" এবং "আজাদ হিন্দ ফৌজ" এর সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু , ব্যারিস্টার ওয়াজেদ আলী এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখ্য এই দিনে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন অথবা জাতীয় কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন -  "এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই, আমি সকল দেশের সকল মানুষের। সুন্দরের ধ্যান,তাঁর স্তব-গানই আমার উপাসনা,আমার ধর্ম। যে কূলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি।"

মাত্র তিরিশ বছর বয়সে উপনীত হতে হতেই সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সমগ্র বিশ্বের মানুষ ও মানবতার মুখপাত্র হয়ে ওঠা, অবিভক্ত বাংলাতো বটেই অবিভক্ত ভারতেরও সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের উপস্থিতিতে "জাতীয় কবি" হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।  জাতীয় কবির অভিধায় ভূষিত হবার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে একটিও নেই! জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা  তথা সমগ্র মানবতার চেতনার মূর্ত প্রতীক। তাঁর চেতনা কে লালন-ধারন-বাস্তবায়ন করেই বাংলাদেশটিকে বিশ্বের বুকে সেরা ও বৈষম্যহীন শান্তিময় রাষ্ট্রের রোল মডেলে পরিনত করা সম্ভব।
 
বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁকে জাতীয় কবি বলে উল্লেখ করেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। বহু সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামের গোড়াতেও ‘জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লেখা। কিন্তু তাঁকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে কোনও প্রজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। কেন হয়নি, সরকার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করবে কি না, এই সব বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশের হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামকে (Kazi Nazrul Islam) আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কবি ঘোষণায় গেজেট প্রকাশ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে আদালতের তরফে নোটিস জারির নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার হাইকোর্টের দুই বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ডিভিশন বেঞ্চ।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নজরুল ইনস্টিটিউটের কার্যনির্বাহী পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে হলফনামার মাধ্যমে সরকারের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দশ আইনজীবী গতমাসে হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁদের একজন মহম্মদ আসাদউদ্দিনের বক্তব্য, দেশের আপামর জনগণ জানে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi NazruI Islam)। কিন্তু বাস্তবে এই মর্মে কোনও দলিল নেই। মৌখিকভাবে তিনি জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

ভারত থেকে নিয়ে এসে কবি নজরুল কীভাবে বাংলাদেশের "জাতীয় কবি" হয়ে উঠলেন ?
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানান, কবি নজরুল ইসলাম কে তাঁরা সে দেশে নিয়ে যেতে চান। কবি পরিবারের সম্মতি নিয়ে সবুজ সংকেত দেয় ভারত সরকার। ১৯৭২-এর ২৪ মে কবি সপরিবারে বাংলাদেশ যান। তেজগাঁও বিমান বন্দরের বাইরে সেদিন তিল ধারনের জায়গা ছিল না। স্বাধীনতার লড়াইয়ে যে কবির গান, কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, তাঁকে পেয়ে সদ্য স্বাধীন দেশের জনতা আবেগ, উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় সেদিন। সেদিনই রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে কবিকে দেখতে যান। নজরুল কে (Kazi NazruI Islam) জাতীয় কবি মর্যাদা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। 

বাংলাদেশে কেমন ছিল কবির জীবন ?
ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকায় কবির জন্য বরাদ্দ হয় সরকারি বাড়ি। মুজিবুর রহমান বাড়িটির নাম দেন ‘কবি ভবন’।  সরকারি আয়োজন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নজরুলের (Kazi NazruI Islam) দেখভালের ব্যবস্থা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের মতো ওই বাড়িতেও প্রতিদিন জাতীয় পতাকা উড়ত। পরে তাঁকে নাগরিকত্ব এবং বাংলাদেশের অসামরিক সম্মান ‘একুশে পদক’ দিয়ে সম্মান জানানো হয়। কিন্তু জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি নেই।

কবি নজরুল কে নিয়ে কী বলছে বাংলাদেশ সরকার ?
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,নজরুল কে জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট নোটিফিকেশন, প্রজ্ঞাপন বা অনুরূপ কোনও সরকারি আদেশ নেই। তবে সরকারি অনেক দলিলে তাঁকে জাতীয় কবি (Kazi NazruI Islam) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর নামের আগে জাতীয় কবি শব্দ দুটি যুক্ত করে একটি আইনও আছে বাংলাদেশে। সেটি হল ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬।’

‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮’-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে ‘কবি’ অর্থ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। একই ভাবে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে, অন্যান্য বইপুস্তকে, গবেষণাকর্মে, পত্রপত্রিকায়, সভা সমাবেশে সবখানেই কাজী নজরুল ইসলাম কে জাতীয় কবি বলেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এসবই পরোক্ষ স্বীকৃতি।

এ প্রসঙ্গে কবি নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কবি পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। এটা ঠিক, দেশের মানুষ জাতীয় কবি হিসেবে তাঁকে সম্মান জানিয়ে আসছে। কিন্তু এটা সরকারি আদেশ হিসেবে আসাটা জরুরি। কারণ আমরা থাকব না, কিন্তু বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে। আগামী প্রজন্ম একদিন হয়তো না-ও জানতে পারে যে, আমাদের জাতীয় কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধিদের জন্যই কাজী নজরুল ইসলাম কে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট/প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করাটা উচিত হবে।’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহম্মদ আবুল মনসুর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইনে কবি নজরুল ইসলাম কে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরে আর কোনো গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমি জেনেছি যে, হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। তার কপি পাইনি। এখন হাইকোর্ট যদি গেজেট/প্রজ্ঞাপন করতে বলে, তাহলে অবশ্যই করা হবে।

২৯ আগস্ট ১৯৭৬/১১ভাদ্র ১৩৮৩, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর শেষ বিদায়।
আগের দিন থেকে কবির জ্বর ছিল। এদিন সকালে জ্বর আরো বাড়ে। একশ’ পাঁচ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যায়। কবির ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডাক্তার নাজিমুদ্দিন চৌধুরী আসেন সকাল সাড়ে ৮টায়। ডাঃ নূরুল ইসলাম এলেন সকাল পৌনে ন’টায়। সিস্টার বেগম সামসুন্নাহার মাহমুদ কবির মুখে চামচ দিয়ে পানি তুলে দেন। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগার পর, তৎকালীন পিজি হাসপাতালে ১১৭ নম্বর কেবিনে, কবি যখন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তখন সময় সকাল ১০টা বেজে ১০মিনিট। 

কবির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পনেরো মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালে  ছুটে এলেন প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়ার অ্যাডমিরাল মোশারফ হোসেন খানসহ সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষ। কবির পুত্রবধূ উমা কাজী ছিলেন কবির শয্যার পাশে।

১১৭ নম্বর কেবিনের সম্মুখভাগ থেকে শুরু করে হাসপাতাল সংলগ্ন বিশাল এলাকা জুড়ে শোকাতুর জনগণের হাতে ফুল, লোবান, আগরবাতি আর দু’চোখ ভরা পানি। দর্শনেচ্ছু জনতাকে লাইন করাতে পুলিশ হিমসিম খাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে দশটায় কবির মরদেহ আউটডোরের দোতলা ঘরের উঁচু মঞ্চে এনে রাখা হলো। 

বেলা দু’টো নাগাদ কবির দেহবাহী ট্রাক ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পথে রওয়ানা হলো। শোকাতুর জনতার বিশাল মিছিল ঠেলে এই সামান্য পথটুকু আসতে সময় লেগেছে পুরো আধ ঘণ্টা। 
 
জানাজা ও দাফনের আগে প্রেসিডেন্টের অন্যতম উপদেষ্টা কর্নেল এম এস হকের তত্ত্বাবধানে পি জি হাসপাতালের স্টুয়ার্ট সৈয়দ নাসির আলী কবিকে শেষ গোসল দেন। এর পর কবির কফিন নিয়ে বিশাল শোক মিছিল যখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দিকে রওয়ানা হয়েছে তখন বিকেল সাড়ে ৪টা। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিকালে পাঁচটায় বিশাল জনসমুদ্র এই মহান কবির নামাজে জানাজা পড়েছে। এই জানাজায় প্রেসিডেন্টসহ দেশের ক্ষমতাসীন তিন বাহিনীপ্রধান ছাড়াও শরিক হন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ খুরশীদসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতগন।

জানাজা শেষে দাফনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে যাঁরা কবির দেহ গাড়ি করে নিয়ে যান তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, সেনাবাহিনী প্রধান ও মুখ্য সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার অ্যাডমিরাল মোশারফ হোসেন খান, বিমান বাহিনীর সহকারী স্টাফ প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, বাংলাদেশ রাইফেলস প্রধান মেজর জেনারল দস্তাগীর ও রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবির মরদেহ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার জন্য যখন আনা হয় তখন বিকাল সাড়ে পাঁচটার কিছু বেশী। অপেক্ষমান ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সৈনিকের কাছে তখন ক্যমান্ড আসে : লাস্ট প্রেজেন্ট আর্মস্।

একের পর এক বিশটি রাইফেল গর্জে ওঠে। গুলি ফায়ার শেষ হলে শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ অবনমিত হয় রেজিমেন্টাল কালারস : রেজিমেন্টের নিজস্ব পতাকা।

জুনিয়র টাইগার নামে পরিচিত সেকেন্ড রেজিমেন্টের বিউগলে বেজে ওঠে লাস্ট পোস্ট তথা শেষ বিদায়ের করুণ সুর। একুশবার তোপধ্বনির  সঙ্গে সঙ্গে কাফনের ওপর থেকে ফুলের স্তূপ সরিয়ে কবির দেহ যখন নামানো হয় তখনও তিন মিনিট ধরে কেঁপে কেঁপে বাজছিল বিউগলের লাস্ট পোস্ট। 

সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে সামরিক সরকার প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কবির বিখ্যাত গান ‘চল চল চল’- কে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের রণসঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করলেন।

মসজিদের পাশে  কবি সৈনিকের কবরে তখন সবাই ছড়িয়ে দেন এক মুঠো করে মাটি। বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফে সমাধিতে মাল্যদান সমাপ্ত হলে তিন বাহিনী-প্রধানগন সম্মিলিতভাবে সামরিক কায়দায় কবিকে অন্তিম অভিবাদন জানান।

কবি লিখায় প্রকাশিত ইচ্ছানুযায়ীই কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হয়:-

মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই। 
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই। 
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর আজাব থেকে এ গুনাহগার পাবে রেহাই।

জাতীয় কবির গেজেট প্রসঙ্গে
কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি,এ কথাটা কে না জানে স্বাধীনতার পর,জাতীয় সংগীত,জাতীয় রণসংগীত,জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় পতাকা,জাতীয় ফুল, জাতীয় পাখি,জাতীয় মাছ,জাতীয় কণ্ঠশিল্পী,জাতীয় চিকিৎসক  ইত্যাদি ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার প্রেরণা ও শক্তির উৎস  বাঙালির নন্দিত শ্লোগান "জয়বাংলা" কবি নজরুলের "বাংলা বাঙালির হোক,বাংলার জয় হোক,বাঙালির জয় হোক"
এই অমর বাণী থেকে নিঃসৃত। 

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে কবির গান,কবিতা যে আমাদেরকে অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল এ কথা কে না জানে ! শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয়, আজো আমাদের সমাজ,রাষ্ট্র ও ব্যক্তি জীবনে কবির প্রতিটি বাণী ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। মনে হয় কবিকে ছাড়া যেনো আমা‌দের চলছেই না। 

 জাতীয় কবির ঘোষণার বিষয়‌ে গেজেট প্রকাশ করার বিষয়টা প্রশাসনের দায়িত্ব।   তারা এটা বুঝতে পারছে না যে, গেজেট না হলেও কবি যে জাতীয় কবির আসনে বাঙালির অন্তরে আসন গেড়ে আছেন সেখান থেকে তাঁকে সরানোর সাধ্য কারো ছিল না৷ গেজেট/প্রজ্ঞাপন তো একটা দাপ্তরিক কাজ মাত্র। হলে তা ফাইলেই রয়ে যাবে । মানুষের অন্তরে এসে তো আর স্মরণ করিয়ে বলে দেবে না নজরুল একজন "জাতীয় কবি" আপনারা তাঁকে এ নামে ডাকুন! এ ডাক বাঙালির অন্তর থেকে অনেক আগেই উৎসারিত হয়ে আছে। 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে রাষ্ট্র দিয়েছে জাতীয় ক‌বির ঘোষণা আর মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তা গ্রহণ করেছে এটাই বড় কথা। এখনো দাপ্তরিক কাজটা যারা করেনি তাদেরকে একদিন না একদিন জাতির কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। 

জাতীয় কবি জাতীয় সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে "জাতীয় কবি"কে বিশেষ ভাবে মূল্যায়ন করা হয়। পরিতাপের বিষয় আমাদের সবার প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে বাংলাদেশে গেজেটভুক্ত/ প্রজ্ঞাপন করা না হওয়ায় কোটে  একটি রিট হয়েছিল তার নিস্পত্তি হয়নি।

আপনারা অনেক জানেন আমরা কবি কাজী নজরুল জাতীয় কবি বাস্তবায়ন পরিষদ বহু বছর ধরে জাতীয় কবি'র গেজেট/প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবি নিয়ে দেশের সকল নাগরিক ও সাহিত্যপ্রেমীদের নিকট আহবান করেছি কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশের দাবিতে জনমত গঠন করি এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে "জাতীয় কবি" হিসেবে গেজেটভুক্ত/ প্রজ্ঞাপন করে যথাযথ সম্মান দেয়ার। 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে “জাতীয় কবি” ভূষিত করে প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠকে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ভূষিত করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

৩০ অগ্রাহায়ন ১৪৩১/১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম "জাতীয় কবি" স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট /প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। 

আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে "জাতীয় কবি" হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি  দেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কে অনেক  ধন্যবাদ।কারণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে বাংলাদেশের "জাতীয় কবি"  গেজেট/প্রজ্ঞাপন প্রকাশ জাতীয় জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে বাংলাদেশের "জাতীয় কবি" হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেজেট /প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার  উপসনালয়গুলোতে  শুকরিয়া স্বরূপ বিশেষভাবে প্রার্থনা করার হয় ও আনন্দ প্রকাশ করা হয়।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল