সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ শহরে টিউশন করাতে গেলে অপহরণ এবং নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই শিক্ষার্থী ১ম বর্ষের শহীদ শামসুল হক হলের আবাসিক ছাত্র । বিষয়টি জানতে পেরে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন ভুক্তভোগীর পরিবার। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ৩ অপহরণকারীকে আটক এবং তাদের থেকে ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় । ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সাজিদ হাসান (২০)। তার পিতা ডিএম হাসান আলী।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এই বিষয়টি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটককৃত অপহরণকারী তিন জনের নাম নাফিজ আহম্মেদ জয় (১৯), সানজিদ আলম (১৯) এবং মুশফিকুর রহমান ফুয়াদ (১৫)। তারা সকলেই ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী মডেল থানার বলাশপুরের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানান, ৭ জানুয়ারি রাত ৭ টার দিকে আমি কোতোয়ালী মডেল থানাধীন আলীয়া মাদ্রাসা রোডে টিউশনি শেষ করে বের হন। বের হওয়ার পর নাফিজ আহম্মেদ জয় (১৯) আমাকে আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় টিউশনি দেওয়ার কথা বলে মুশফিকুর রহমান ফুয়াদের (১৫) বাসার ৩য় তলা ছাদে নিয়ে যায়। আমি ছাদে যেয়ে দেখতে পাই ওই স্থানে সানজিদ আলম (১৯) ও ফুয়াদ অবস্থান করছে। তখন তারা তিনজন মিলে অন্যায়ভাবে আটক করে আমার থেকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। তখন আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে এলোপাথারীভাবে কিল-ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে।
পরে জয় আমার মানিব্যাগে থাকা ৫০০ টাকা ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম ভিসা কার্ড নিয়ে যায়। এরপর সানজিদ পকেট থেকে ছুরি বের করে আমার থেকে এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড চাইলে আমি ভয়ে পাসওয়ার্ড নাম্বার দিয়ে দিই। পরে ফুয়াদ মুক্তিপনের জন্য আমার ফোন নাম্বার দিয়ে আমার বাবার ফোনে ফোন দিয়ে বলে আপনার ছেলেকে আটক করে রেখেছি তাকে বাঁচাতে চাইলে আপনার ছেলের বিকাশ নাম্বারে এক লক্ষ) টাকা পাঠান। তখন আমার বাবা আমাকে বাঁচানোর কথা চিন্তা করে আমার বিকাশ নাম্বারে তিন ধাপে বিশ হাজার দুইশত টাকা পাঠায়। পরে জয় আমার ভিসা কার্ড ও মোবাইল বের করে নেয় এবং আমার ভিসা কার্ড হতে ১৯,৫০০টাকা সহ আমার মোবাইলের বিকাশ হইতে ১৯,৮০০ টাকা উত্তোলন করে। শেষে ছেড়ে দেওয়ার সময় কাউকে কিছু জানালে খুনের হুমকি দেয় তারা।
পরবর্তীতে আমি ঘটনাস্থল থেতে বের হয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে যেয়ে হলের বন্ধুসহ শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার আমাকে কোতয়ালী মডেল খানায় জিডি করতে নিয়ে যান। জিডি করা হলে পরে পুলিশ গত ৮ জানুয়ারি আমাকে সাথে নিয়া আমার দেখানো মতে অভিযান পরিচালনা করে জয়কে বলাশপুর এলাকা হতে আটক করে তার কাছ থেকে মুক্তিপনের ১৫,০০০ টাকা উদ্ধার করে। পরবর্তীতে জয়ের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে সাজিদ ও ফুয়াদকে কেওয়াটখালী এলাকা হতে আটক করে সাজিদের থেকে মুক্তিপন আদায়ের ৯,০০০/-টাকা উদ্ধার করে।
বিষয়টি সম্পর্কে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ঘটনাটি আমাদের কানে আসবার পরই আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নিই এবং থানায় ফোন দিয়ে জানানো হয়। থানা থেকে বলা হয়, ছাত্রকে থানায় পাঠিয়ে দিতে। সেসময় ছেলের সাথে তার বাবাও উপস্থিত ছিলো। আমরা যানবাহন দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করি যেন পথিমধ্যে কোনো দুর্ঘটনার স্বীকার তারা না হয়। থানায় যাবার পরে, পুলিশ প্রশাসন তাদের সাথে খুবই সহযোগিতামূলক আচরণ করেছে এবং ওসি সাহেবের সাথেও তাদের কথা হয়েছে যেন অতিদ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা হয়। ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা এবং উপাচার্য স্যারও এই বিষয়ে অবহিত। উপাচার্য স্যারের আমাদের প্রতি দিকনির্দেশনা ছিলো যেন অতি দ্রুত বিষয়টি নিষ্পেষণ করা হয়। ওসি সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে এবং তিনি আমার সামনেই ডিবি পুলিশকে ফোন দিয়েছে এবং রাতের মধ্যেই সেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।
এমআই