নিজস্ব প্রতিনিধি:
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন।
পাশাপাশি মানবতাবিরোধী আদালতে দণ্ডিতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, ‘না’ ভোটের বিধান চালু, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ, দলীয় ভোটে প্রার্থী মনোনয়ন, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন এবং এমপিদের সুবিধা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে প্রস্তাবে। বিদ্যমান আইনে মানবতাবিরোধী আদালতে দণ্ডিতরা প্রার্থী হতে পারেন না। এই প্রস্তাবে তাদের রাজনীতিতেও নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত কেউ রাজনীতি করতে পারবে না বলে সুপারিশ করেছে কমিশন। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গুম, খুন, অর্থ পাচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তালিকা থাকতে হবে।
এখান থেকেই নেতা নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের অনুদানে দল চলবে। তারাই গোপন ভোটে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
গত তিন বিতর্কিত নির্বাচনে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, বিশেষ করে রাতের ভোটখ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নির্বাচন কমিশন, আমলা, পুলিশ, প্রার্থীসহ সবার বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে। বিচারের জন্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।
কেউ দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কেউ দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সরকারের আর কোনো পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। রাষ্ট্রপতিও হতে পারবেন না।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংসদে ১০০ আসন নারীদের সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ করলেও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির সুপারিশ করেছে। বদিউল আলম বলেন, এ পদ্ধতিতে মোট আসন হবে ৪০০। এর ২৫ শতাংশ প্রত্যেক নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
যেখানে শুধু নারী প্রার্থীরা অংশ নেবেন। ফলে নারী এমপিরও নির্দিষ্ট আসন থাকবে। রাষ্ট্রপতি হবেন নির্দলীয়। তিনি এমপি এবং স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির ভোটে নির্বাচিত হবেন। এমপির সুযোগ-সুবিধা কমানো এবং সংসদীয় এলাকায় জমিদারি প্রতিষ্ঠার কুপ্রথা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার জানান, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এ কাউন্সিল অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবে। নির্বাচন কমিশন ভোটের পর স্বীকৃতি দেবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিনা। তার পর গেজেট হবে। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে কাউন্সিলে আপিল করতে পারবেন।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত শিথিল ও ৫ বছর পর পর দল নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবাসী পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা, অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা, প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর