এহসান রানা, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলতি মৌসুমে কৃষকরা বিভিন্ন প্রকার পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে মুড়িকাটা,হালি পেঁয়াজ বেশ জনপ্রিয়।পেঁয়াজ বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় এখন মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পেঁয়াজের আবাদ।এর মধ্যে তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজের আবাদ করে লাভবান হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
পেঁয়াজের উৎপাদন ভান্ডার খ্যাত ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কৃষকরা এখন বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে।মাঠে মাঠে সবুজ পেঁয়াজের চারা কৃষকরা রোপন করছে আর দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে বিএডিসি থেকে আনা পেঁয়াজ বীজ রোপন করে যথেষ্ট সফলতা পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মোট ২ হাজার ৯ শত ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৭ শত ৩৩ হেক্টর জমিতে রোপন সম্পন্ন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মুড়িকাটা ৫১৮ হেক্টর,হালি পেঁয়াজ ১ হাজার ৭ শত ৪০ হেক্টর জমিতে রোপন করেছেন। এ মৌসুমে উপজেলায় প্রনোদনার আওতায় তাহেরপুরী, বারি-৪,বারি-৬ জাতের ১৬০ জন কৃষকের মাঝে ১ কেজি করে বীজ সরবরাহ করা হয়।কিন্ত বেশ কিছু বীজ অংকুরিত না হওয়ার অভিযোগ উঠে। পরে কৃষকদের যথাক্রমে ৫শ গ্রাম, ১ কেজি করে লাল তীর,বারি-৬ ও তাহেরপুরী জাতের বীজ এ বীজ কৃষকরা বীজতলা দিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে।কোন কোন কৃষকের বীজতলায় বীজ আশানুরূপ অঙ্কুরিত হয়নি এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুনরায় কৃষকদের অর্ধকেজি করে বীজ দেওয়া হয়।
তবে সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।উপজেলার আলগী, বড়দিয়া, সুয়াদী,ঘারুয়া, পাইকদিয়া, দীঘলকান্দা, তুজারপুর, সরইবাড়ী, চৌকিঘাটা গ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠ পরিদর্শন করে দেখা যায় মাঠে মাঠে বীজতলা।সারি ধরে কৃষকরা চারা তুলছে। কেউ বাজারে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।কেউ কেউ জমি তৈরি করে চারা রোপন করছেন। কৃষকদের মাঝে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএডিসির তাহেরপুরী জাতের বীজ নিয়ে তারা যথেষ্ট লাভবান হয়েছেন।বীজ প্রায় ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বীজ অংকুরিত হয়েছে।বীজতলা থেকে চারা বিক্রি করে তারা লাভবান।সেই সাথে চারা রোপণ করে উৎপাদিত পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই কৃষকেরা মাঠ থেকে তুলতে শুরু করছেন।
উপজেলার চৌকিঘাটা গ্রামের সিরাজ শেখ জানান,তিনি এ বছর বিএডিসি এবং স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে তাহেরপুরী,বারি-৬ জাতের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা দিয়েছিলাম। চারা সন্তোষজনক অংকুরিত এবং মানসম্মত হওয়ায় চারা বাজারে বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি।
একই গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মোঃ শাহ আলম জানান, তিনি প্রনোদনা ও বিএডিসি থেকে তাহেরপুরী জাতের বীজ সংগ্রহ করেছেন।তার অংকুরিত বীজের পরিমান ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বলে জানান তিনি। বীজতলা থেকে চারা তুলে ক্ষেতে রোপন করেছেন। মাঠ থেকে পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।তিনি সাফল্যে বেশ খুশি।
উপজেলার সাউতিকান্দা গ্রামের কৃষক রাজা মিয়া জানান,তিনি চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে বীজতলা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে বেশীরভাগ তাহেরপুরী জাতের।বীজতলা দিয়ে চারা বাজারে বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি।সেই সাথে ক্ষেতে রোপন করেছি। পেঁয়াজ বীজ ভালো পাওয়ায় পেঁয়াজের মান এবং উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করছি।
ফরিদপুর জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের উৎপাদন ভান্ডার খ্যাত ভাঙ্গা সহ পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে ভাঙ্গা উপজেলায় পুনরায় কৃষকদের বীজ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোল্লা-আল মামুন জানান, সরকারী প্রনোদনার আওতায় বিএডিসি (বীজ বিপণন) এর মাধ্যমে প্রায় ১৬০ জন কৃষকের মাঝে ১ কেজি করে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে অনেকে কিছুর অভিযোগ রয়েছে । এর মধ্যে তাহেরপুরী,বারি-৬ লালতীরের বীজ বেশী ছিল। পরে তাদেরকে পুনরায় ৫ শ গ্রাম করে সকল বীজ দেওয়া হয়েছে। মাঠে কৃষকদের তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।মাঠে মাঠে এখন পেঁয়াজ। কৃষকরাও বেজায় খুশি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এমআই