আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আমেরিকার স্বর্ণ যুগ ফিরিয়ে আনতে স্বাধীন জ্বালানি, অভিবাসন, পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ বন্ধ করা ও মঙ্গলগ্রহে কলোনি তৈরির পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আশা ও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার শপথ গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত হননি। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন। এবার বাইডেনকে পরাজিত করে আবারও ক্ষমতায় এলেন ট্রাম্প।
নিজের অভিষেক অনুষ্ঠানের ভাষণে ট্রাম্প নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "তিনি আমেরিকার স্বর্ণ যুগ ফিরিয়ে আনতে চান। তিনি তার ভাষণে জ্বালানি স্বাধীনতা, অভিবাসন, পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ বন্ধ করা ও মঙ্গলগ্রহে কলোনি তৈরির পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করেন।
এখানে তার ভাষণের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
'আমেরিকার স্বর্ণযুগ'
ট্রাম্প ঘোষণা করেন, "আমেরিকার স্বর্ণযুগ আজ থেকেই শুরু হচ্ছে। দেশ আগের চেয়ে আরও মহান, শক্তিশালী ও ব্যতিক্রমী হবে।"
তিনি অভিযোগ করেন, গত চার বছর আমেরিকার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তিনি তার শপথের দিনটিকে মুক্তির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
ট্রাম্প তার আসন্ন নির্বাহী পদক্ষেপগুলোকে আমেরিকা পূর্ণ পুনঃস্থাপন ও সাধারণ বুদ্ধির বিপ্লব হিসেবে বর্ণনা করেন।
অভিবাসনের বিষয়ে জরুরি অবস্থা
ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে 'সব অবৈধ প্রবেশ' অবিলম্বে বন্ধ করবেন, মেক্সিকোতে আশ্রয়প্রার্থীদের অপেক্ষা করার নীতি পুনঃস্থাপন করবেন, অবৈধ প্রবেশকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে ছেড়ে দেওয়ার প্রথা বন্ধ করবেন এবং 'লাখ লাখ বিদেশি অপরাধীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করানোর প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
মেক্সিকোর মাদকের কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ওঠা বিদেশি অপরাধী দলগুলোকে ১৭৯৮ সালের 'এলিয়েন এনিমিস আইন' অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
'ড্রিল, বেবি, ড্রিল'
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদকে জ্বালানি স্বাধীনতা এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার নিশ্চয়তা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিনি একটি জাতীয় জ্বালানি অবস্থা জারি করবেন। এর মাধ্যমে নতুন তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটরা যে 'গ্রিন নিউ ডিল' বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল তা বাতিল করা হবে।
ট্রাম্প বলেন, "আমরা আমেরিকানরা সারা বিশ্বে জ্বালানি রপ্তানি করব। আমরা আবার একটি ধনী জাতি হব এবং আমাদের পায়ের নীচের তরল সোনাই আমাদের সাহায্য করবে।"
শুল্ক ও কর
যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় একটি উৎপাদনশীল জাতিতে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি বাণিজ্য নীতি পুনর্গঠন করবেন যাতে আমেরিকান শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং আমদানি শুল্ক ও কর সংগ্রহ করতে এক্সটার্নাল রেভেনিউ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করবেন।
তিনি বলেন, "আমাদের নাগরিকদের কর দিয়ে অন্যান্য দেশকে ধনী করার বদলে, আমরা বিদেশি দেশগুলোকে শুল্ক ও কর দিয়ে আমাদের নাগরিকদের ধনী করব।"
জেন্ডার বিষয়টি একটি বড় প্রশ্ন
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্ণ ও জেন্ডারকে সামাজিকভাবে স্থাপন করার নীতির অবসান হবে। সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নীতি হবে যে 'শুধু দুটি লিঙ্গ—পুরুষ এবং নারী'।
ট্রাম্প বলেন, "আমরা এমন একটি সমাজ গঠন করব যা বর্ণান্ধ এবং যোগ্যতা-ভিত্তিক।" তিনি এসময় সামরিক বাহিনীসহ আমেরিকানদের উপর থেকে 'র্যাডিক্যাল রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং সামাজিক নীতির বিষয়টি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন।
যুদ্ধে আর লড়বো না
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে পুনর্গঠন করার অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, "এ বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীতে সবচেয়ে মহান, শক্তিশালী এবং সম্মানিত জাতি হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।" তিনি নিজেকে বন্ধন সৃষ্টিকারী ও শান্তির নেতা হতে চান।
তিনি বলেন, "আমরা যে যুদ্ধ জিতেছি সেগুলোই নিয়েই শুধু নিজেদের সাফল্য মাপবো না। বরং যে যুদ্ধগুলো আমরা শেষ করেছি এবং যেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্তু আমরা জড়াইনি সেগুলোকেও নিজেদের সাফল্য হিসেবে গণ্য করবো।"
মেক্সিকো উপসাগর ও পানামা খাল
ট্রাম্প তাঁর অভিষেক ভাষণে ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পানামা থেকে পানামা খাল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে, কারণ পানামা ১৯৭৭ সালের চুক্তি পুরোপুরি 'অলঙ্ঘন' করেছে। খালটি চীনের সঙ্গে মিলে পুনরায় উদ্ধার করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, মেক্সিকো উপসাগরকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'আমেরিকা উপসাগর' নামে পুনঃনামকরণ করা হবে এবং উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আবারও 'মাউন্ট মিকিনলি' নামে পরিচিত হবে ২৫তম প্রেসিডেন্টের নামানুসারে। আনুষ্ঠানিক নাম ২০১৫ সালে ডেনালি হিসেবে পরিবর্তিত হয়েছিল।
তবে ট্রাম্প অভিষেক ভাষণে গ্রিনল্যান্ডের কথা উল্লেখ করেননি, যদিও তিনি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে দাবি করেছিলেন যে, এই স্বশাসিত ডেনিশ দ্বীপটির উপর নিয়ন্ত্রণ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার একটি বিষয়।
মঙ্গল গ্রহে মার্কিন পতাকা উড়বে
ভাষণের শেষের দিকে ট্রাম্প বলেন, "আমেরিকানদের জন্য এটি পুনরায় সাহস, উদ্যম এবং ইতিহাসের সবচেয়ে মহান সভ্যতার জীবনশক্তি' নিয়ে কাজ করার সময়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে একটি 'বর্ধনশীল জাতি' হিসেবে উল্লেখ করেন যা শুধু সম্পদই নয়, অঞ্চলও বিস্তার করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রসারণের তত্ত্ব এবং তাঁর সমর্থক ইলন মাস্কের অন্য গ্রহে বসতি স্থাপনের উচ্চাকাঙ্খার প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প ভাষণে বলেন, "আমরা আমাদের ম্যানিফেস্ট অনুসারে তারার গন্তব্যে পৌঁছাবে। মঙ্গলগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উড়াতে আমেরিকান নভোচারীদের পাঠাবো।"
এমআই