সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি প্রতিনিধি:
‘কৃষকবান্ধব প্রযুক্তির স¤প্রসারণই হোক আমাদের অঙ্গীকার’ এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘কৃষক দিবস’। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (বাকৃবি) ও এর স¤প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক)-এর উদ্যোগে আগামী ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবস পালন করা হবে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিশ^বিদ্যালয়ের কৃষি স¤প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাউএক-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাউএক-এর তত্ত¡াবধানে থাকা ৩০০ কৃষকের মধ্যে থেকে ৬ জন সফল কৃষক-কৃষাণীকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হবে। আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য কৃষক র্যালি, সেমিনার এবং বাকৃবির খামারসমূহ পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য দিনটি শুধু সম্মান পাওয়ারই নয়, তাদের চাহিদা ও অভিজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুযোগ তৈরি করবে। কৃষকরা সরাসরি জানাবেন মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের প্রযুক্তি ও সুবিধা তারা চান। তাদের অভিজ্ঞতা এবং চাহিদার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে ‘নিড বেইজড প্রযুক্তি’ উদ্ভাবনে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাউএক পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা কৃষকদের সম্মান জানাতে এবং তাদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রযুক্তি স¤প্রসারণের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। এই উদ্যোগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কৃষকদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করবে। কৃষি গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা কৃষকদের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে তাদের উপযোগী গবেষণা করবে এবং সেই গবেষণার ফলাফল মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে। সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন বাউএক-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বাউএক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যবৃন্দ।
সফল কৃষক-কৃষাণী সম্মাননার বিষয়ে তিনি বলেন, বাউএক- এর তত্ত¡াবধায়নে থাকা কৃষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সবজি বাগান- বিষয়ে প্রতিবছর একটি সম্মাননা দেওয়া হয়। ওইসকল বিজয়ীদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে (বাগানের স্থান নির্বাচন, পরিচর্যা, ফলন ইত্যাদি) এবং বাউএক-এর সাথে দীর্ঘদিন যাবত যুক্ত থাকা এবং অবদানের ভিত্তিতে ছয় জনকে পুরষ্কৃত করা হবে।
কৃষক দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভ‚ঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান এবং ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক। অনুষ্ঠানে বিশ^বিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষ, বাউএক-এর পরিচালক প্রাক্তন পরিচালক, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রায় ৩০০ কৃষক উপস্থিত থাকবেন।
বাউএক-এর দীর্ঘ ইতিহাসের কথা বলতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, ১৯৭৬ সালে ‘এগ্রি ভার্সিটি এক্সটেনশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি স¤প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এটি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় স¤প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক) নামে প্রতিষ্ঠা পায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাউএক গ্রামীণ কৃষি স¤প্রদায়ের সঙ্গে বাকৃবির সংযোগ স্থাপন এবং কৃষি প্রযুক্তি স¤প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
দীর্ঘদিন ধরে বাউএক মাঠ পর্যায়ে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ, গবাদিপশু-পাখির টিকা প্রদান, মাঠ ফসলের প্রদর্শনী, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পারিবারিক খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম, মাছ চাষ এবং স্থানীয় নেতৃত্ব তৈরির মতো কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে এবারই প্রথম ‘কৃষক দিবস’ উদযাপন করতে যাচ্ছে।
দেশের অগ্রগতিতে কৃষকদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দিবসটি উদযাপনে বাকৃবি প্রশাসন বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। দিনব্যাপী আয়োজনে কৃষকদের অভিজ্ঞতার গল্প শোনা, তাদের প্রয়োজনের কথা জানার পাশাপাশি কৃষকদের কল্যাণে বাকৃবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। অনুষ্ঠানে কৃষকদের মধ্যে উন্নতমানের পাঁচ প্রকারের বীজ (ডাঁটাশাক, লালশাক, চালকুমড়া, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টিকুমড়া) বিতরণ করা হবে। কৃষকদের চাহিদা ও অতিথিদের পরামর্শের ভিত্তিতে বাউএক-এর ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি দিবসটি জাতীয়করণের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমআই
