শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

আ’লীগ নেতাদের আশ্রয়দাতা কয়রা বিএনপি নেতা হাসানের অপকর্ম

শুক্রবার, জানুয়ারী ৩১, ২০২৫
আ’লীগ নেতাদের আশ্রয়দাতা কয়রা বিএনপি নেতা হাসানের অপকর্ম

খুলনা প্রতিনিধি: সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাধর ছিলেন কয়রা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান। তার নামে অভিযোগ উঠেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর এলাকায় আধিপত্য ও দখলদারিত্ব দীর্ঘমেয়াদি করতে হাট, ঘাট, খাল, চিংড়ি ঘের থেকে শুরু করে টেন্ডার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এম এ হাসান। এমন অভিযোগ-স্থানীয় বিএনপি-সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের।  

কয়রা উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাধর ছিলেন। তার বাবা আব্দুস সাত্তার সানা জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা, শ্বশুর আব্দুল গফফার ঢালী কয়রা সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। মামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম। আরেক মামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম। মামাতো ভাই সোহেল রানা সৌরভ কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

তারা আরো বলেন, আওয়ামীলীগ আমলে দুই মামার ছত্রছায়ায় থেকেছেন। এখন মামাদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বেশি মনোযোগ তার। এ কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে নিজ দলীয় নেতাকর্মীর চেয়ে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেন তিনি।

কয়রা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মওলা বকস অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা তার নিকট আত্মীয় হওয়ায় সব সরকারের আমলেই তিনি ‘সুবিধাভোগী’। যে কারণে বিএনপির পদধারী নেতা হয়েও বরাবরই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরই প্রাধান্য দেন তিনি। বিএনপির অনেক রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তার সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেখা যায়।

উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহতাসিম বিল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এলাকায় না থাকায় এবং সদস্যসচিব বহিষ্কার হওয়ায় সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দলের একছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগীদের থাকতে দেখা যায়। তাদেরকে সাথে নিয়ে এলাকায় দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছেন।

কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারিক লিটু বলেন, সরকার পতনের পর আমাদের ভাড়া নেয়া কয়রা সাংবাদিক ফোরামের অফিস দখলে নিয়ে বিএনপি নেতা হাসান নিজের ব্যক্তিগত অফিস করেন। আমি প্রতিবাদ করায় তার লোক দিয়ে মারধরও করে গুরুতর আহত করেন।

প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে এম এ হাসানের দখলে রয়েছে কয়রা উপজেলার একাধিক খাল। প্রায় সাড়ে তিনশ’ বিঘার সরোয়ারখালি খালটি তার দখলে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ওই খালের দখলে ছিলেন তার খালাতো ভাই যুবলীগ নেতা মাসুম বিল্লাহ। মাসুম বিল্লাহ’র দখলে থাকা সুন্দরবনের অবৈধ ব্যবসারও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তিনি। যুবলীগের আরেক স্থানীয় নেতা জহুরুল হক ওরফে ছোট জহুরুলের ‘পটকা’ মাছের ব্যবসারও অংশীদারিত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডারবাজিতে তার সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুম ও যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান ঝন্টু। ঠিকাদারি ব্যবসা কব্জায় নিতে ঠিকাদারি কল্যাণ সমিতি গঠন করেছেন। সেখানে ‘আওয়ামী ঠিকাদার’ হিসেবে পরিচিতদের প্রাধান্য দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমিতির সভাপতি বানিয়েছেন তার মামার এক ঘনিষ্টজনকে। ঠিকাদারি লাইসেন্স না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন এম এ হাসান নিজেই।

সম্প্রতি একটি এনজিওর ২০ লাখ টাকার একটি কাজ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকে পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। উপজেলার কয়েকটি হাট, মাছের আড়ত, সুন্দরবনের অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখন তার হাতেই।

এসব বিষয়ে এম এ হাসান বলেন, আমার নিজের একটি মাছের আড়ত রয়েছে, এর বাইরে কোন খাল বা ঘের নেই। প্রয়োজনে ওসি বা ইউএনওর সাথে কথা বলতে তিনি পরামর্শ দেন। দখলবাজির অভিযোগ সঠিক নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব খাল ও হাট বাজার অবৈধ দখলে ছিল সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টিও পুরোপুরি সত্য নয়। এক সময় বিভিন্ন চাপে পড়ে আওয়াম লীগ নেতাদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম, এমন কিছু লোক-জনকে সহযোগিতা করেছি। আগামীতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তিনি নির্বাচন করবেন, এই জন্য খুব হিসাব করে তিনি এলাকাতে চলছেন।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, বিএনপিতে দখলবাজদের কোনো স্থান নেই। কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে সাংগাঠনিকভাবে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল