অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর :
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ১টি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ২৮টি অবৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে ঐ ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডেই ১৪ টি ইটভাটা চালাচ্ছে পরিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্য বৈধতা ছাড়াই। উঁচু চিমনি ব্যবহার করা হলেও কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
ভাটাগুলোর বেপরোয়া ট্রাক্টরের কারণে অচল হয়ে পড়েছে চলাচলের রাস্তাঘাটও। এতে দূর্ভোগে পড়েছে একটি ওয়ার্ডের ১৫ হাজার বাসিন্দা। ভাটাতে যাচ্ছে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি নেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। হুমকিতে রয়েছে পরিবেশ ও জনজীবন।
সরেজমিনে ইউনিয়নের আজাদ মেমোরিয়াল সড়ক ও সৈয়দ মৌলভি চৌধুরীর হাট সড়কের দুটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, দেদারসে ইট পোড়াচ্ছে ভাটাগুলো। কয়েকশ মণ কাঠ (লাকড়ি) ভাটা এলাকা স্তুপ করা রয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক স্তুপ থেকে মাটি কেটে পানি দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন। আর অন্যরা ইট তৈরির কাজে ব্যস্ত। ইটগুলো শুকানোর জন্য ওলটপালট করে দিতে দেখা গেছে শিশু শ্রমিকদের। প্রতিদিন ১০০ টাকা বেতনে শিশুরা ইটগুলো শুকানোর কাজ নিয়েছে। কেউ কেউ মৌসুম অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি বেতন নিয়ে কাজে নেমেছে।
নভেম্বর থেকে পুরো শুষ্কমৌসুম জুড়ে ইটভাটায় কর্মযজ্ঞ চলে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ টি ইটভাটার মধ্যে রফিক ব্রিকস ও আশরাফ ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারীরাই জানিয়েছে তাদের ভাটাগুলোর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহিদ হোসেনসহ কয়েকজন ভাটা মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ইটভাটাগুলো গড়ে উঠান। তাদের যোগসাজসেই ভাটাগুলো চালানো হয়।
রফিক ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী রফিক উল্যার ছেলে মিজানুর রহমান জানান, কয়লার পরিবর্তে ভাটাতে কাঠ পোড়ানোর কারণে গেল বছর পরিবেশ অধিদপ্তর ২ লাখ টাকা আমাদের জরিমানা করেছে। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্রের জন্য আবেদন করেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাইনি। তার দাবি, প্রশাসন যদি অন্য ২৭টি ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তারটাও বন্ধ করা হবে।
এবার তারা ৫০ লাখ ইট তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তিনটি ইটভাটা মালিক জানান, তাদের ইটভাটার বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তাদের কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপরও তারা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ভাটা তৈরি করেছেন।
আশরাফ ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আশরাফ গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি জানিয়েছেন , ইউনিয়নের অন্য২৭ টি ইটভাটার মতো তারটিও চলছে। ভাটা চালাতে তার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। অন্য কোন বৈধ কাগজপত্রও নেই।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কাশেম নিজাম বলেন, প্রতিটি ইটভাটায় অন্তত ২০ একর জমি প্রয়োজন হয়। এতে ১৪ টি ইটভাটা একটি ওয়ার্ডের অধিকাংশ জমি দখল করে আছে। এতে ভাটার ধোঁয়ার কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত হাজার হাজার টন কার্বনডাই অক্সাইড গিলে খাচ্ছে। মানুষের লিভারসহ শ্বাসতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
২৮ ইটভাটার কথা স্বীকার করে চররমিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম দিদার বলেন, ভাটার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ৮টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়। ইটভাটার কারণে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহিদ হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। ভাটার মালিকরা কেন আমাকে টাকা দিতে যাবে। চররমিজ ছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নেও অনেকগুলো অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও ইটভাটা গুড়িয়ে দিচ্ছে। ফের ভাটা মালিকরা ইট পোড়াতে শুরু করে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ভাটাগুলো বন্ধ করতে পারে।
লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, আমরা কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে অভিযান চালিয়েছি। জরিমানাও করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনগুলো প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত দিলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো। আমাদের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা রয়েছে অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
গেল ১০ দিনে আলাউদ্দিন ব্রিকফিল্ড, গিয়াস উদ্দিন ব্রিক্স, রফিক ব্রিক্স,এমএস ব্রিক্স, তিশা ব্রিক্স, আমরি ব্রিক্স, ফাতেমা নাজ আফরা ব্রিক্স ও ফারদিন আনাম ব্রিক্স নামের ৮টি ইটভাটাকে ১লক্ষ করে ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য কেউ ভাটা মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় কিনা তা আমার জানা নেই। কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ ফেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান এ কর্মকর্তা।
এমআই