ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম:
বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং কূটনৈতিক মহলের প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, এই সময়ে গাজা, ইয়েমেন, সুদান, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের মানবিক সংকট প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এই বৈষম্যমূলক মনোযোগ কেবল রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতিফলন নয়, এটি ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতিরও অবমূল্যায়ন।
গাজা সংকট: এক অবিরাম মানবিক বিপর্যয়
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ, দখলদারিত্ব, ও সংঘাতের শিকার। ইসরায়েলি আগ্রাসন, দফায় দফায় বোমাবর্ষণ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজার জনজীবন প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হচ্ছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের বসতবাড়ি হারিয়েছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে, এবং শিশুরা জন্ম থেকেই সহিংসতার ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে বড় হচ্ছে।
ইয়েমেন, সুদান ও মিয়ানমারের উপেক্ষিত সংকট
ইয়েমেন গৃহযুদ্ধের ফলে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছুটা সহানুভূতি দেখালেও, এই সংকটের কার্যকর সমাধানের জন্য যে ধরনের কূটনৈতিক ও মানবিক প্রচেষ্টা দরকার, তা অনুপস্থিত।
সুদানে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সহিংসতা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে, কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে।
বৈশ্বিক রাজনীতির পক্ষপাত ও মানবাধিকারের প্রশ্ন
বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো সাধারণত তাদের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পৃক্ততা নির্ধারণ করে তাদের নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতে। ইউক্রেন সংকট পশ্চিমা বিশ্বে সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং তাই এটি তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গাজা, ইয়েমেন বা সুদানের মতো অঞ্চলগুলোর সংকট তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয় বলে, সেগুলোর গুরুত্ব কমে যায়।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একদিকে মানবাধিকারের কথা বলে, অন্যদিকে নির্দিষ্ট কিছু সংকট নিয়ে তাদের নিরবতা প্রমাণ করে যে, মানবিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ অনেক সময় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়।
ন্যায়বিচার ও সমতার দাবি
যতদিন না বিশ্ব সকল সংঘাত ও মানবিক সংকটকে সমান গুরুত্ব দেবে, ততদিন বৈশ্বিক ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। মিডিয়া, কূটনীতি এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিটি সংকটকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। গাজার জনগণের আর্তনাদ যেমন আমাদের কানে পৌঁছানো উচিত, তেমনি সুদান, ইয়েমেন ও রোহিঙ্গা সংকটের দিকেও সমান মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সংঘাত হলে, তা শুধু সেই অঞ্চলের জন্য নয়, গোটা মানবতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। মানবাধিকারের প্রশ্নে পক্ষপাতহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ মনোভাব গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।
লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম,
চেয়ারম্যান - আলহাজ্ব কে,এম,আব্দুল কারীম রাহিমাহুল্লাহ ট্রাস্ট।