মাইদুল ইসলাম:
উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) আয়োজিত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে তিনদিনব্যাপী “আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাণিজ্য মেলা ২০২৫” আজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইরান, পাকিস্তানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নারী উদ্যোক্তাদের এক ছাদের নিচে এনে তাদের ব্যবসার প্রসারে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে এই মেলা।
৮ মার্চ (শনিবার) ১১ টায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইউএন ওমেনের বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি (কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ) গীতাঞ্জলি সিং, এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি আনোয়ার হোসেন ও এফবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দ।
৬ মার্চ রাজধানীর গুলশান শ্যুটিং ক্লাবে এই মেলার উদ্বোধন করা হয় এবং তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশীয় বিদেশি অর্ধশতাধিক নারী উদ্যোক্তা তাদের নিজস্ব পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয় করেছেন। তিনদিনের এ আয়োজনে প্রথম দিন ছিল মেলার উদ্বাধন, ২য় এবং ৩য় দিন শিশুদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা মেলাকে বর্ণিল করেছে। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, নকশা করা পোশাক, গহনা, হোম ডেকর, সৌন্দর্য সামগ্রীসহ নানা ধরনের সৃজনশীল পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হয়। নারীরা দেশী পণ্যের সঙ্গে বিদেশি পণ্যের ও সমারোহ ঘটিয়েছেন। তার মানে বাংলার নারীর ব্যাবসা বুদ্ধি আন্তর্জাতিক। নারীকে স্বাধীনতা দেয়া গেলে সে যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এ তারই প্রমাণ।
মেলায় উদ্যোক্তাদের পন্য কিনলে থাকছে গিফট কুপট। কুপন বিজয়ী নারী ও তার মা, মেয়েরে জন্য ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সৌজন্যে থাকছে আকর্ষণীয় ট্যুর। পাশাপাশি ঢাকা ব্যাংক তার স্টলের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেবার কথা জানিয়েছে। মেলার কালের ধ্বনি নামের বুকস্টলটি নিরবে বলেছে, সকল উদ্যোগের জন্য বই পড়তেই হবে। সবমিলিয়ে সামান্য আয়োজন অসামান্য করে তুলেছেন।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ “জুলাই কর্ণার” দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে, যা জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা সাহসী নারীদের স্মরণে সাজানো হয়েছিল। এছাড়াও, তিনশত শিক্ষার্থী নিয়ে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা মেলায় একটি প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ওয়েবের সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আওয়াল বলেন, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতেই আমরা আয়োজন করেছি তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাণিজ্যমেলা ২০২৫।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাণিজ্যমেলা ২০২৫-এর তিন দিনের আয়োজনে, যারা উপস্থিত হয়ে অংশ গ্রহন করে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন, উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব)- এর পক্ষ থেকে তাদের কাছে আমারা কৃতজ্ঞ। তিনদিনের এ আয়োজনে যে সকল নারী উদ্যোক্তা তাদের দক্ষহাতের সৃষ্টিশীল পন্য নিয়ে মেলায় যোগ দিয়েছেন তাদের জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।
সম্মানিত উদ্যোক্তাবৃন্দ প্রচলিত চাকুরীর পেছনে না ছুটে আপনারা নিজের অসীম মনোবলে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। সেইসাথে প্রতিটি উদ্যোক্তা আরো অনেক কর্মী সৃষ্টি করে তাদেরও স্বনির্ভর করেছেন, পরিবারে , সমাজে, দেশে তাদের ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছেন, এজন্য উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে আপনাদের অভিবাদন জানাই। আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাণিজ্যমেলা ২০২৫ আমরা দেখেছি আত্মনির্ভরশীল, আত্মবিশ্বাসী কিছু নারীর উজ্জ্বল মুখ। আপনাদের এই আত্মবিশ্বাস আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই সমগ্র জাতির ভেতর। আত্মবিশ্বাসী নারী মানেই বিজয়ী নারী।
আমরা আপনার বিজয় দেখতে চাই দেশের সর্বত্র। দেখাতে চাই পুরুষের ক্ষমতায়নের অর্ধেক শক্তিই নারীশক্তি।
নারীকেই তার অধিকার আদায় করে নিতে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। পরাধীন মানুষ কখনোই আত্মমর্যাদার কথা বলতে পারে না। আজকের যে মেয়েটি বড় হয়ে উঠছে , তাকে বলুন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। কারও দয়ায় যেন তার চলতে না হয়।
উদ্যোক্তা নারীবোনদের পাশাপাশি আমরা পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছি জুলাই আন্দোলনের সকল শহিদ নারী এবং কন্যাদের। ছেলেদের পাশাপাশি যাদের রক্ত এনে দিয়েছে আজকের এই স্বাধীনতা। গত জুলাইতে আমাদের মায়েরা কন্যারা জানিয়ে দিয়েছে ৭১ থেকে দুহাজার চব্বিশ , সকল আন্দোলনেই আমরা আমি পুরুষের পাশাপাশি। তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আমরা নির্মাণ করেছি জুলাই কর্নার। সংগ্রামে শহিদ কন্যার মা, এবং আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আহত মেয়ের কথাগুলো আমাদের প্রাণে চির অম্লান হয়ে থাকবে। উদ্বোধনী দিনে তারা উপস্থিত হয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বলে আমরা তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
সংগ্রামী এবং শহিদ নারী কন্যাদের প্রতি আবারো হাজার সালাম জানাই। আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাণিজ্যমেলা ২০২৫ এর এই সমাপনী দিনে কৃতজ্ঞতা জানাই সকল মিডিয়াকর্মীর প্রতি। তারাই নারীদের এ আয়োজনের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশব্যাপী। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমই পারে নারীর অধিকার, সমতা, আর ক্ষমতায়নের ভাষা বুঝিয়ে দিতে।
কৃতজ্ঞতা জানাই এ তিনদিনে মেলা আয়োজনের সকল কর্মীর প্রতি। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই আমরা সফলভাবে মেলার সকল অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে পেরেছি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাণিজ্যমেলা ২০২৫ এর আয়োজন এর সকল স্পন্সর দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। নারীদের এই অগ্রযাত্রায় আপনারা আমাদের সঙ্গে সবসময় থাকবেন এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রিয় ক্রেতা, দর্শক, শুভানুধ্যায়ী আপনারাই এ মেলার প্রাণ। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল আয়োজন। আশাকরি আজ মেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা আপনাদের উপস্থিতি দেখতে পাবো। আপনাদের উপস্থিতি ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলার আয়োজনের উৎসাহ দেবে।
বিশ্বের সকল নারী তার অধিকার প্রাপ্ত হোক, নারী পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হোক, পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে ক্ষমতায়িত হোক নারী, মাতা, কন্যা এই প্রত্যাশায় বিদায় নিচ্ছি। বিশ্বের সকল মানুষের জন্য রইলো আমাদের অকৃত্রিম শুভকামনা।
"আমাদের লক্ষ্য নারী উদ্যোক্তাদের আরও স্বাবলম্বী করা এবং তাদের ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত করা। এই মেলায় অংশগ্রহণকারীরা নতুন ব্যবসায়িক সংযোগ গড়তে পেরেছেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক সম্প্রসারণে সহায়ক হবে। ওয়েব সবসময় নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে এবং তাদের উন্নয়নে সহায়তা করবে।"
মেলার শেষ দিনে সেরা স্টল, সেরা বিক্রেতা স্টলসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিশেষ অতিথিরা।
মেলায় অংশ নেওয়া জামালপুরের স্বপন ক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী বলেন,
"এই মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক নতুন ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এমন আয়োজন আমাদের ব্যবসার প্রসারে খুবই সহায়ক। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।"
ওয়েবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় উইমেন এন্টারপ্রেনিওর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) আগামীতে আরও বড় পরিসরে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে কাজ করবে।
এই সফল আয়োজনের জন্য ওয়েব সকল উদ্যোক্তা, দর্শক, স্পন্সর ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায় এবং ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
এমআই