নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আবেদন আহবান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি।
সোমবার (১০ মার্চ) ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিষয়টি জানান।
সচিব বলেন, দলগুলোর কাছ থেকে নিবন্ধন আবেদন আহবানের জন্য গনবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে। আবেদন করা যাবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। আগের আইন অনুযায়ীই নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে।
গণ বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ক এর অধীন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এ উল্লিখিত শর্তাবলী পূরণে সক্ষম রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত নির্দেশিকা মোতাবেক বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ পূরণপূর্বক আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
(২) নিবন্ধীকরণে আগ্রহী রাজনৈতিক দলকে স্বীয় লেটারহেড প্যাডে দরখাস্ত করতে হবে এবং দরখাস্তের সঙ্গে নিম্নলিখিত আবশ্যকীয় দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে, যথা—
(ক) দলের গঠনতন্ত্র;
(খ) দলের নির্বাচনি ইশতেহার, যদি থাকে;
(গ) দলের বিধিমালা, যদি থাকে;
(ঘ) দলের লোগো এবং পতাকার ছবি;
(৩) দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সকল সদস্যের পদবীসহ নামের তালিকা;
(চ) দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং উক্ত একাউন্টের সর্বশেষ স্থিতি:
(ছ) দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ;
(জ) দলের নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র;
(ঝ) নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য পাঁচ হাজার টাকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বরাবরে জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি (ট্রেজারিতে টাকা জমাদানের কোড নম্বর-১০৬০১০১১০০১২৫-১১০০০০০০০-১১০০১০০০-১৪২২২০৪)
(ঞ) দরখাস্ত দাখিলে দিন পর্যন্ত-
(অ) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হতে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোন একটিতে দলীয় নির্বাচনি প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা
(আ) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হতে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোন একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনি এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা
(ই) দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, উহা যে নামেই অভিহিত হোন না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন একশতটি উপজেলা বা, ক্ষেত্রমত, মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং উক্তরূপ প্রতি উপজেলায় বা, ক্ষেত্রমত, খানায় অন্যূন দুইশত ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল।
কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর উক্ত দলের অনুকূলে কমিশন ফরম-৩ এ একটি নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করবে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে।
২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনি সংস্কার এনে নিবন্ধন প্রথা চালু করে। তাতে তিনটি নিবন্ধন শর্ত দেওয়া হয়। ভোটে নিবন্ধিত দলগুলোকেই অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সে সময় থেকে ধরে এখন পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থ বা আদালতের আদেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে ইসির নিবন্ধিত দলের সংখ্যা রয়েছে ৪৯টি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হলে এ সংখ্যা আর বৃদ্ধি পাবে।