জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের হাটবাজার কিংবা ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এক পরিচিত নাম—"আতরওয়ালা সাঈদ"। পুরো নাম সাইদুল ইসলাম সাঈদ। কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও স্বপ্নকে ছোট করতে রাজি নন সাঈদ। পড়াশোনার পাশাপাশি আতর ও টুপির ব্যবসা গড়ে তুলে শুধু নিজের নয়, পুরো পরিবারের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই মেধাবী তরুণ।
সাঈদ বর্তমানে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব ফুলমতি গ্রামে। বাবা ফয়েজ উদ্দিন একজন দিনমজুর, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। মা সাহেরা বেগম স্থানীয় একটি চালকলে শ্রমিকের কাজ করতেন, তবে স্বামীর সেবা-যত্নের জন্য তিনিও এখন কর্মহীন।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সাঈদ দ্বিতীয়। বড় ভাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন, আর ছোট বোন এখনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। অর্থাভাবে সাঈদের নিজের শিক্ষাজীবন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।
অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর টাকার অভাবে যখন পড়ালেখা বন্ধের শঙ্কা দেখা দেয়, তখনই এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে আতর ও টুপির ব্যবসা শুরু করেন সাঈদ। হাতে তেমন মূলধন ছিল না, কিন্তু পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি এগিয়ে গেছেন।
সাঈদ জানান, প্রায় চার বছর ধরে আতর বিক্রি করেই পরিবারের খরচ ও নিজের পড়াশোনার ব্যয় চালাচ্ছেন। বাবা-মায়ের দায়িত্বের পাশাপাশি ছোট বোনের লেখাপড়ার খরচও বহন করছেন তিনি। প্রতিদিন কলেজ শেষে হাতে আতর, টুপি ও তসবিহ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিক্রির জন্য। কুড়িগ্রাম শহর, বালারহাট বাজারসহ বিভিন্ন মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি এসব পণ্য বিক্রি করেন।
প্রতিদিন তার আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আর কোনো বিশেষ প্রোগ্রাম থাকলে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এই ব্যবসার মাধ্যমেই পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সাঈদ শুধু এখানেই থামতে চান না। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে ব্যবসা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি। কুড়িগ্রামের সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও পরিচিতির কারণে তার আতর ও টুপির চাহিদা বেড়েছে। তাই একদিন নিজস্ব দোকান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আরও বিস্তৃতভাবে ব্যবসা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার।
কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও আত্মসম্মান বজায় রেখে বেঁচে থাকার এই সংগ্রামী গল্প কেবল সাঈদের নয়, বরং যে কোনো স্বপ্নবাজ তরুণের জন্য অনুপ্রেরণার নাম হতে পারে।
এমআই