নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে 'ক্যান্টনমেন্ট থেকে' কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দলটির বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে একটি বিক্ষোভ মিছিল রওনা হয়।
সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'যতদিন হাসনাত আব্দুল্লাহ বেঁচে আছে, এনসিপির একজনও কর্মীও বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেবে না। আওয়ামী লীগ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দলীয় নাম ও প্রতীকে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে।'
হাসনাত বলেন, ভোটের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে পালায়নি। আওয়ামী লীগ পালাতে বাধ্য হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও নেই যে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পালিয়ে যায়, তাকে আবার নির্বাচনে ফিরিয়ে আনা হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে রেখে আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। আমাদের মধ্যে একমত ও দ্বিমত হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা আপনাদের কাছ থেকে যে আশা করেছিলাম, তার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখতে পাইনি। আমরা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাই না, তবে তাদের অপরাধের বিচার হলে আগামী ৩০০ বছরেও আওয়ামী লীগ বাংলার মাটিতে ফিরতে পারবে না।'
'আওয়ামী লীগকে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দেশের নাটাই ছিল ভারতে, কিন্তু ঘুড়ি উড়েছে বাংলাদেশে। আমরা ৫ আগস্টের মাধ্যমে ঘুড়ির সুতা কেটে দিয়েছি। ভারতে আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে চলতে দেওয়া হবে না', যোগ করেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে নই, আমরা প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করি। যারা সেনাবাহিনীকে আঘাত করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণকে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই—আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, বরং যারা এ ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিরুদ্ধে।'
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগকে স্বনামে রাজনীতি করতে দেব না। আওয়ামী লীগের নৌকা বঙ্গোপসাগরে ভেসে গেছে, সেটি আর বাংলাদেশে ফেরানো যাবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৭ মাস পার হলেও সরকার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নামে সাংগঠনিক রাজনীতি চলতে দেওয়া যাবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'অনেকেই আওয়ামী লীগের ভালো নেতৃত্বের কথা বলে। কিন্তু লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় হয়ে গেলেও ভালো নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা এখন পর্যন্ত কোনো হত্যাকাণ্ডের জন্য দায় স্বীকার কিংবা অনুশোচনা করেনি। যে বা যারাই আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'