মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম, গবি প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সদস্য তালিকা প্রকাশের পরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদসহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্বাচন কমিশন বয়কটের ডাক দিয়েছেন।
রবিবার (২৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান ও উপ-রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে নির্বাচন কমিশনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, প্রক্টর রফিকুল আলমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে সাত বিভাগের সাতজন শিক্ষক এবং উপ-রেজিস্ট্রারের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে কমিশনে ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকায় শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অনুষদ হিসেবে পরিচিত ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বারবার তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কিছু মুখ নিয়মিত নীতিনির্ধারণী পদে প্রাধান্য পেলেও ভেটেরিনারি অনুষদ বরাবরই অবহেলিত। এছাড়াও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আগামী এক কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনে তাদের অনুষদের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করলে আসন্ন গকসু নির্বাচন বয়কট করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাজেদ সালাফি বলেন, 'প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবির ভেটেরিনারি অনুষদ অন্যতম হলেও এ অনুষদ এবং শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের অবহেলার শিকার। যেকোনো কর্মসূচিতে আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়। একটি চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর কারণে পুরো অনুষদ জিম্মি হয়ে আছে, শিক্ষার্থীরা হিংসার শিকার হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রকৃত কারণ জানতে চায়।'
তিনি আরো বলেন, আগামী ১ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আমাদের অনুষদের শিক্ষক নিযুক্ত করা না হলে আর প্রশাসন এই কমিশনের তালিকা সংশোধন না করলে আমরা অনুষদের শিক্ষার্থীরা আসন্ন গকসু নির্বাচন বয়কট করতে পিছপা হবো না।"
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম বলেন, "নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনের উচিত ছিল প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা। প্রতিটি বিভাগ থেকে শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে নির্বাচন আরও স্বচ্ছ হবে। তবে তা সম্ভব না হলে, অন্তত প্রতিটি অনুষদ থেকে একজন করে শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত করে কমিশন গঠন করা উচিত। ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষক না থাকা সত্যিই বিস্ময়কর। অন্তত ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে একজন শিক্ষক রেখে কমিটি গঠন করা উচিত ছিল।"
সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবির আহম্মেদ বলেন, "আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই দেশ সংস্কারে যেমন নবীনরা নেতৃত্ব দিয়েছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিগুলোতেও নবীন শিক্ষকরা নেতৃত্বে আসুক কোনো শিক্ষক কে একাধিক কমিটিতে না রেখে নবীব শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হোক। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সাথে নবীন শিক্ষকদের যুক্ত করে তাদের নেতৃত্ব দানের সুযোগ দেওয়া । নির্বাচন কমিশনের মত গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে আমার মতে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি নতুন দুই একজন নবীন শিক্ষককেও জায়গা দেওয়া উচিত ছিল।"
এ বিষয়ে গকসু উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম খান বলেন,"এখানে বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপককে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ভিসি স্যারের সাথে কথা বলে একজন শিক্ষকের নাম দেওয়া যেতে পারে।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, "গকসু নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের সম্মতিক্রমে গঠন করা হয়েছে। এ নির্বাচন কমিশন কোন বিভাগ অনুযায়ী তালিকা করা হয়নি।"