স্বাধীনতা– একটি গর্বের শব্দ, যা প্রতিটি জাতির জন্য একই সঙ্গে সংগ্রামের দীর্ঘ পথচলার প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছিল এক বিপ্লব, এক মহাকাব্যিক লড়াই। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, দুই লক্ষাধিক মা-বোনের ত্যাগ এবং অসংখ্য মানুষের সীমাহীন যন্ত্রণার বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। এই মহান দিবসকে ঘিরে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও অনুভূতি তুলে ধরেছেন সানজিদা খানম ঊর্মি।
স্বাধীনতা কোনো উপহার নয়, এটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম
প্রতি বছরের ২৬ মার্চ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা কোনো করুণা নয়; এটি এসেছে অগণিত মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সমস্ত শ্রেণির মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন করেছেন। কিন্তু আজও প্রশ্ন থেকে যায়—আমরা কি সত্যিই সেই স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পেরেছি? স্বাধীনতার অর্থ শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা কুচকাওয়াজ দেখা নয়; এটি একটি আদর্শ, একটি শপথ—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা। মুক্তিযোদ্ধারা যে বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, আমরা কি তার কাছাকাছিও যেতে পেরেছি? যদি না পারি, তবে
আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক— শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করব যে আমরা স্বাধীনতার সঠিক উত্তরসূরি।"
সাদিয়া ইসলাম মুনা
২য় বর্ষ, ফার্মেসি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীনতা দিবস আমাদের ফিরিয়ে নেয় একাত্তরে
স্বাধীনতা দিবস মানেই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই ১৯৭১-এর রক্তঝরা দিনগুলোতে, যখন একটি জাতি শেকল ভাঙার শপথ নিয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণের পর ২৫ মার্চ রাতে চালানো হয় ভয়াবহ গণহত্যা। সেই ভয়াল রাতের প্রথম প্রহরেই ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতার। সেদিন থেকেই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আত্মদানের অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হন, আর দেশের প্রতিটি কোণে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। স্বাধীনতা শুধু একটি তারিখ নয়, এটি দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের এক অনির্বাণ চেতনা, যা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে দেশ গঠনে, জাগ্রত করবে দায়িত্ববোধ। আজকের দিনে আমাদের শপথ হোক—এই মহান অর্জনকে সমুন্নত রাখতে একযোগে কাজ করব, যাতে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যায়।
জাকারিয়া সরকার, ২য় বর্ষ, আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীনতা আমাদের আত্মত্যাগের চেতনার স্মারক
স্বাধীনতা কেবল উদযাপনের উপলক্ষ নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে শুরু হওয়া নৃশংসতা, ২৬ মার্চের মুক্তির ডাক এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াই—এসবই আমাদের আত্মত্যাগের মহাকাব্য। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চেয়েও কঠিন এটি রক্ষা করা। আজও আমরা দারিদ্র্য, দুর্নীতি, বৈষম্য ও সামাজিক অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কেবল স্মরণে নয়, কাজে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া শহীদদের আত্মত্যাগের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের অঙ্গীকার হোক—আমরা দেশকে ভালোবাসব, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলব এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
আতিকা আক্তার ইমা, ১ম বর্ষ, রসায়ন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীনতার চেতনা রক্ষায় প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক চর্চা
২৬ মার্চ আমাদের মুক্তির সূচনা, আমাদের অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। নয় মাসের সংগ্রামের পর আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন আকাশ, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। কিন্তু স্বাধীনতা শুধু অর্জনের বিষয় নয়, এটি রক্ষার, লালন করার, বিকশিত করার বিষয়।স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন তখনই সম্ভব, যখন আমরা মুক্তচিন্তা, জ্ঞানচর্চা ও ন্যায়বিচারের চর্চা অব্যাহত রাখব। যদি স্বাধীনতা কেনল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা হারিয়ে যায়- বাক-স্বাধীনতা সংকুচিত হয়, মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব হয়, আর শাসকেরা হয়ে ওঠে দমনমূলক। তাই সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ, যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে এবং উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে।
মোকছেদুল ইসলাম, ৩য় বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।