সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫

পরিবার ছাড়া ক্যম্পাস জীবনের রোজার গল্প

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫
পরিবার ছাড়া ক্যম্পাস জীবনের রোজার গল্প

দীর্ঘ একবছর অপেক্ষার পরে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারও এসেছে "পবিত্র মাহে রমজান।" রমজান আমাদের ত্যাগী, মানবিক ও বিনয়৷ হতে শেখায়। সদ্য মায়ের আচঁল ছেড়ে আসা নতুন ক্যম্পাস নিয়ে কি বলছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা তা তুলে ধরেছেন আদিবা রহমান।

মা তোমার নূর এসেছে!  

হোস্টেলে থাকি, পরিবার ছাড়া রমজান পালন করার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। শুরুতে বিষয়টা বেশ কঠিন ছিল। ইফতারের সময় মনে হতো, মা নিশ্চয়ই এখন পেঁয়াজু ভাজছেন, বাবা দোয়া পড়ে আমাদের সবাইকে ডাকছেন। এসব ভাবতে ভাবতে মন খারাপ হতো। মন চাইতো ছুটে চলে যাই গিয়েই মায়ের শাড়ির আচলে মুখ লুকিয়ে বলি, "মা এই তো তোমার নূর চলে এসেছে।" কিন্তু হোস্টেলে আমাদের অনেকেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি ছিলাম। ধীরে ধীরে আমরা একসঙ্গে ইফতার করা, সেহরিতে একে অপরকে ডাকাডাকি করা—এসবের মধ্যেই একটা অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। কি আর করার পরিস্থিতি তো মেনে নিতেই হবে। আর ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। হোস্টেলে থাকা মানেই শেষ মুহূর্তে টিকিটের চিন্তা, লম্বা লাইন, কখনো অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য যদি বিশেষ বাস বা ট্রেনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে এই ভোগান্তি অনেকটাই কমে যেত। ঈদে বাড়ি ফেরা মানেই তো ভালোবাসার মানুষের কাছে ফেরা, এই আনন্দটা যাতে ক্লান্তির চাপে ম্লান না হয়, সেই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

ফাহিমা নূর, ১ম বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


রোজায় ক্যম্পাসে ইবাদতী ও বেহেশতি আমেজ


পরিবার ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রথম রমজান কাটানো একেবারেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা। এবারই প্রথম ক্যাম্পাসে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার ও সেহরি করা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। পরিবার ছাড়া ইফতার করা যেমন কষ্টের, বন্ধু, সিনিয়র ভাইয়দের সাথে ইফতার করাও অনন্দের। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার পার্টি ও ধর্মীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করে নতুন জ্ঞান অর্জন করা যায়। ক্যাম্পাসে প্রায়ই ইফতারের আয়োজন করা হয়,যেখানে অনেক শিক্ষার্থী অংশ নেন। বন্ধুদের মিলে একসঙ্গে ইফতার করাটা অন্যরকম অনুভূতি দেয়। অন্য রকম আমেজ তৈরি হয়। বিগতবছরে রমজান মাস বাবা মা এর সাথে কাটিয়েছিলাম। অনেক ভালো লেগেছিল তখন, সারা দিন রোজা রেখে বাবা মার সাথে ইফতার করা, ইফতার বানাতে মা কে সাহায্য করা, এ যেন অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করতো। ক্যাম্পাসে কাটানো রমজানের দিনগুলো একটি মিশ্র অভিজ্ঞতার নাম। এখানে যেমন নতুন বন্ধুত্বের সুযোগ রয়েছে, তেমনি পরিবারের অভাবও অনুভূত হয়েছে। তবে, সঠিক পরিকল্পনায় ও বন্ধুদের সহযোগিতায় এই রমজান স্মরণীয় করে রাখা সম্ভব।


ফুয়াদ হাসান, ১ম বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


রোজায় এক্সাম দেয়াও ভীষণ চ্যালেঞ্জিং 

এই প্রথম বাড়ি থেকে দূরে ইফতার, সাহরি করছি।প্রথমবার রমজানে পরিবারের বাইরে ক্যাম্পাসে থাকার অভিজ্ঞতা অনেকটা মিশ্র অনুভূতির।একদিকে স্বাধীনতা,নতুন অভিজ্ঞতা আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ। অন্যদিকে পরিবারের জন্য একটা গভীর মিসিং, কি যেনো নাই"। ইফতারের সময়টা সবচেয়ে বেশি মনে হয় বাসার কথা। মায়ের স্পর্শ ছাড়া প্রতিটি খাবার।প্রতিটি মুহূর্ত। ঘরোয়া উষ্ণতা, রমজানের আমেজ টা এবার পাইনি! এসব ভীষণ মনে পড়ে। কতদিন ইফতার নিয়ে ই কান্না করে দিয়েছি। কিন্তু এবার সব কিছুর বাইরে নতুন অভিজ্ঞতা ও হয়েছে।রুমমেট এর সঙ্গে একসাথে সাহরি খাওয়া, তারাবি পড়া— হুট করে বন্ধুদের সাথে ইফতার। পরিবার না পেয়েও যেনো নতুন পরিবারের সাথে নতুন অভিজ্ঞতা। পরিবার নিয়ে খারাপ লাগা থাকলেও এসব এ এত এত ভাললাগা নিহিত ছিল। তবে রাত জেগে পড়াশোনা আর সাহরির পর ক্লাস করা, এক্সাম দিতে যাওয়া টা একটু চ্যালেঞ্জিং মনে হয় আমার কাছে। তবুও এই সময়টাতে অনেক কিছু শিখেছি আমি, কীভাবে নিজের দায়িত্ব নিতে হয়, নিজের খেয়াল রাখতে হয় আর পরিবার ছাড়া কেমন করে একা থাকতে হয়।


জুবাইদা ইসলাম জুহি, ১ম বর্ষ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


১৮ বছরের অভ্যাস ছেড়ে এই প্রথম বাইরে থাকা


রমজানে নিজ বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে ইফতার করতে কে না পছন্দ করে। তবে সবাই যে পেরে উঠে এমনটাও নয়। কবে থেকে শুরু হবে রমজান, চাঁদ দেখা গিয়েছে কিনা,কবে সেহরি খাবো, ইফতারের সময় কখন, এসব নিয়ে পরিবারের সবার সাথে আনন্দে মেতে উঠার মাঝে থাকে এক অন্য রকম আবেগ এবং ভালোবাসা জড়ানো। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে সকলেই চায় অত্যন্ত এই সময়টা পরিবারের সকলের সঙ্গে অতিবাহিত করতে। বিশেষ করে ইফতারের সময়টা, পরিবারের সকল সদস্যকে সাথে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করার আনন্দ এতটাই আবেগময় যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার জীবনে প্রথমবার পরিবার ছাড়া রমজান পালন করা। পরিবার ছাড়া প্রথম সেহরি, পরিবার ছাড়া প্রথম ইফতার। নিজের পরিবার ছাড়া রোজার দিন গুলো খুব কষ্টে কাটছে। প্রতিটা সময় বুকের ভিতর হাহাকার করে, ১৮ টা বছর যেখানে রোজার দিন কাটিয়ে আসছি হঠাৎ করে এখন অন্য জায়গায় অন্য ভাবে। আব্বু আম্মু ছাড়া এই প্রথম রোজা আমার, গত রমজানেও তো আব্বু আম্মুর সাথে ছিলাম, এইবার আর এক সাথে সেহরি ইফতার করা হলো না। রাতে ইফতারির টেবিলে পরিবারের ঊষ্ণতা এবং সহযোগিতার অভাব অনুভব করা হয়। কিন্তু এই সময়টাতে আত্ম-সমালোচনা ও বাহ্যিক চিন্তা শরীর ও মনকে একএিত করার সুযোগ দেয়, ধৈর্য ও সংযমের পাঠ শেখায়, পাশাপাশি সবার সাথে সংযোগের চেষ্টা করি, নতুন অভিজ্ঞতা কে গ্রহন করে একাকিত্বের মাঝে শক্তি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি। 

মো. মুন্না, ১ম বর্ষ, বাংলা বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল