ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি আর এই আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে শিক্ষার্থীরা পৌছায় পরিবারের কাছে। নাড়ীর টানে নীড়ে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় নানা ধরণের প্রতিকূলতা। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ঈদ যাত্রা ও পরিবারের কাছে পৌঁছানোর গল্প তুলে ধরেছেন রাজিউল ইসলাম শান্ত।
সকল বাধা পেরিয়ে ঈদ যাত্রা সুন্দর হোক
পরিবারের মায়া ছেড়ে বের হওয়া সন্তানেরা চাইলেও সহজে ফিরতে পারেনা নীড়ে। তাই আমার কাছে ঈদ মানেই যান্ত্রিক এই শহর থেকে বাড়ি ফেরার আনন্দ। রমজানের শুরু থেকেই কবে বাড়ি যাবো সেই অপেক্ষায় থাকি। একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে হর-হামেশাই বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে না। এত ব্যস্ততার মাঝে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটি মেলে এই ঈদুল ফিতরেই। তাই ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয় ঈদে বাড়ী ফেরার যাত্রা দিয়েই। ট্রেনের টিকেট কাটা, থাকে জানালার পাশে বসে প্রকৃতির সবুজে ঘেরা দৃশ্য দেখতে পারার অভিপ্রায়। বিগত বছরের মতই এবছর ঈদ যাত্রার ভোগান্তি যেনো সেই চিরচেনা। বাসা থেকে ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত যেতেই লেগে যায় অর্ধেক সময়। শহরের যান্ত্রিক জটিলতা ঈদ যাত্রা ক্লান্ত করে তোলে। এ সমস্যা নিরসনে বিশেষ কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি। ট্রেনেও ছিলো অতিরিক্ত ভীড়, দীর্ঘ যাত্রায় যা একটি মেয়ের জন্য কষ্টদায়ক। তবে অনলাইনের সুবিধায় টিকিটের জন্য হয়রানি পোহাতে হয়নি। ট্রেনের ব্যাবস্থাপনা স্বাচ্ছন্দ্যময় থাকলেও মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে ছিলো শঙ্কা, ভয়। চিরাচরিত কিছু ছেলেদের চাহনি ও ডিষ্টার্ব করা ভয় বাড়িয়েছে। ভয়কে পাশ কাটিয়ে অবশেষে নিরাপদেই পৌঁছে যাই আমার মায়ার শহর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। শৈশবের স্মৃতিমাখা মাটির গন্ধ নিতে ‘নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা’ নামক এই ঈদযাত্রা সকলের সুন্দর হোক- এই প্রত্যাশা।
ইসরাত জাহান ইভা, ৪র্থ বর্ষ, মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্লান্তিকর পথ, তবু আনন্দের টান
ঈদ এলেই বাড়ি থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায় বাড়ি ফেরা। আমি ঢাকা থেকে গোপালপুর যাচ্ছি, আর এই পথ ঈদের আগে যেমন আনন্দের, তেমনি কষ্টেরও। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো টিকিট পাওয়া। বাসের টিকিট আগেভাগেই শেষ হয়ে যায়, আর যারা শেষ মুহূর্তে টিকিট কিনতে চান, তাদের দিতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। ট্রেনে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও সরাসরি গোপালপুরে পৌঁছানোর কোনো ট্রেন নেই, অগত্যা গন্তব্যে পৌঁছাতে বাসই একমাত্র ভরসা। এর মধ্যে বাইপাইল থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট যেন এক আতঙ্কের নাম—অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। তবে এত কষ্টের পরও বাড়ির পথে যাত্রার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যস্ত জীবন, ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট ও টিউশনের চাপ ভুলে কিছুদিনের জন্য পরিবারের সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ—এটাই ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে যাত্রা করলে সময় কিছুটা সহজে কেটে যায়, আর যাত্রাপথের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোও স্মৃতির অংশ হয়ে যায়। আমি চাই, ঈদযাত্রা যেন আমাদের জন্য আরেকটু স্বস্তিদায়ক হয়। বাড়তি বাস-ট্রেনের ব্যবস্থা, টিকিটের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর যানজট কমানোর কার্যকর উদ্যোগ নিলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। তবুও, যত কষ্টই হোক, বাড়ি ফেরার অনুভূতি সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। ঈদ মানেই তো প্রিয়জনদের কাছে ফেরার আনন্দ!
শেখ তানভীর আহমেদ, ৩য় বর্ষ, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
নাড়ির টানে নীড়ে ফেরার তাড়া
ঈদের আনন্দ মানেই এক অন্য রকম অনুভুতি। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করতে সবাই চাই। তাই ঈদ যাত্রায় থাকে নাড়ীর টানে বাড়ী ফেরার তাড়া। ঈদ যাত্রা শুধু মাত্র একটি পথ চলা নয়, এটি একটি আবেগ একটি উচ্ছ্বাস যা প্রতিটি মানুষকে তাদের আপনজনের কাছাকাছি নিয়ে যায়। কিন্তু এই ঈদ যাত্রা প্রায়ই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয় সাথে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি তো আছেই। এছাড়া ঈদ যাত্রার এ সময় কিছু পরিবহন সংস্থা টিকিটের দাম অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির শেষ থাকেনা। ঈদ যাত্রার এ সময় অতিরিক্ত যানবাহন এবং দূর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দূর্ঘটনার ঝুঁকি ও অনেক বেড়ে যায় যা ঈদ যাত্রার আনন্দঘন সময়কে ঘীরে রাখে দুঃচিন্তায়! এমন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন আপনজনদের সাথে দেখা হয়, তখন সেই মুহুর্তটি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলে শৈশবের স্মৃতিগুলো যেনো জীবন্ত হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক উচ্ছ্বাস ভালোলাগা কাজ করে। ঈদ যাত্রা শুধু শারীরিক নয় বরং এটি মানসিক যাত্রাও। এই যাত্রা আমাদের মনে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। আর এই ঈদ যাত্রার ভোগান্তি কমাতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা, ঈদের এই আনন্দময় মুহুর্ত গুলো আমাদের জীবনের এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকে।
মোছা. রাফিয়া তাসনিম রিতি, ৪র্থ বর্ষ, আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
ফিরে যাই স্মৃতির দিকে
এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসছে আনন্দের ঈদ। সাভারের রাস্তায় বেরোলেই নজরে পড়ে মানুষের ছুটে চলা; কেউ বাসে, কেউ রিকশায়, কেউবা পায়ে হেঁটে। সবাই যেন এক অদৃশ্য টানে ছুটছে বাড়ির দিকে। আমিও প্রস্তুতি নিচ্ছি রাজবাড়ীর ছোট্ট গ্রাম শায়েস্তাপুরে ফিরে যাওয়ার। সাভার থেকে বেশি দূর না, তবু প্রতিবার এই যাত্রাটা যেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ছোটবেলার ঈদ ছিল অন্যরকম। নতুন জামা গায়ে ঈদগাহে যাওয়ার উত্তেজনা, মায়ের হাতের গরম সেমাইয়ের ঘ্রাণ, বাবা-মায়ের আদর,ঈদ সালামি, ঘুরে বেড়ানো— সবই যেন আজ শুধু স্মৃতি। এখন ঈদ এলেই মনে হয়, আনন্দটা আগের মতো নেই। তবুও অনেক দিন পর বাড়ি যাওয়ার যে আনন্দ, তা আলাদা। এবারও যেন সেই পুরনো দিনগুলোকে খুঁজে ফিরব বাবা-মায়ের ছায়া-ঘেরা বাড়ির আঙিনায়। শৈশবের স্মৃতি আমাকে টানছে নীড়ের দিকে; বারান্দার সিঁড়িতে বসে গল্প করার সেই সন্ধ্যাগুলো, উঠানে জ্যোৎস্নার আলোয় খেলাধুলা, আর অন্ধকারে এদিক সেদিক ভয়ভীতি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। এগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। এখন ঈদ মানে বুঝি, বাবার কবরে গিয়ে দোয়া করব, মনে হয় এটাই এখন আমার ঈদের সবচেয়ে বড় রীতি। ঈদ এখন আমার জন্য শুধু উৎসব নয়, বরং ফিরে যাওয়া সেই জায়গায়, যেখানে আমার শেকড় প্রোথিত। ঈদের দিনগুলো এখন আর আগের মতো উল্লাসপূর্ণ হয় না, কিন্তু স্মৃতি এবং বাবার প্রেমের শূন্যতা এক অম্ল-মধুর অনুভূতির সৃষ্টি করে। এবার রাস্তার যানজট কিছুটা কম মনে হচ্ছে, কিন্তু লঞ্চঘাট বা বাসস্ট্যান্ডে কী হবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা আছে। তবু এই ভিড়, এই হাঁপানি, এই দৌড়ঝাঁপের মধ্যেও লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত শান্তি। কারণ শেষ পর্যন্ত তো বাড়ি পৌঁছাবই, যেখানে সময় যেন থেমে আছে, যেখানে আমি আবার শিশু হয়ে যেতে পারি। ঈদ এলেই বুঝি, বাড়ি শুধু জায়গা নয়—সেখানে সময় থেমে থাকে, আর আমরা ফিরে যাই নিজেদেরই স্মৃতির দিকে।
শুভ, ২য় বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ
লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।