ঈদ পরিবার-পরিজনের কাছে ফেরার এক আবেগঘন উপলক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যস্ত জীবনের চাপ ভুলে শৈশবের আপন ভুবনে ফিরে যাওয়ার সময়। নীড়ে ফেরার প্রস্তুতি, যাত্রার অভিজ্ঞতা ও প্রিয়জনদের সান্নিধ্য ঈদের আনন্দকে অন্যমাত্রায় রূপ দেয়। সাভারের উপকন্ঠে থাকা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার গল্প তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম।
স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার
ঈদের আনন্দ বহুগুনে বাড়ানোর কারিগর ঈদের ছুটি। প্রতি ঈদে বাড়ি ফেরার সময় মনে কাজ করে অস্থিরতা, অজান্তে গুনগুন করতে থাকি ‘স্বপ্ন বাড়ি যাবে আমার’ গানটি। মগজ ভর্তি পরিচিত মানুষদের জন্য নানান পরিকল্পনা আর বুক ভর্তি প্রশান্তি নিয়ে ছুটে চলি নাড়ির টানে নীড়ের পথে। ছুটির নোটিশ আসার পর থেকে টিকিট কাটা, ব্যাগ গোছানো দীর্ঘদিনের ছুটিতে কি কি কাপড়-চোপড় নিবো সে চিন্তায় নির্ঘুম রাত্রী অতিবাহিত হয়। বাড়ি দূরে হওয়ায় সেহেরি খেয়ে সকালেই বেরিয়ে পড়ি বাসস্ট্যান্ডের পথে। অবশ্য পেছন ফিরে একটু হোস্টেলের দিকে তাকিয়ে একটু মনে ভারি করে ভাবি ‘অস্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে স্থায়ী ঠিকায় যাচ্ছি, দেশের আনাচ-কানাচ থেকে আসা বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা আবার কবে হবে!’ পরক্ষনেই ভাবি সকলেই তো নীড়ের টানে যাত্রা শুরু করেছে আমিও তার ব্যাতিক্রম নয়। ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে ছুটে চলি সুদুর উত্তরবঙ্গের আরেক শহর রংপুরের পথে। যাত্রা পথের অঢেল ক্লান্তি যেন নিমিষে উধাও হয়ে যায় চিরপরিচিত শহরে ঢুকামাত্র। এ শহরের দালানকোঠা, রাস্তা-ঘাট, গাছের ডালপালা থেকে শুরু করে প্রতিটি অলিগলি যেন অভ্যর্থনা জানায় আমাকে। দিনেশেষে শেষে বাড়ি ফিরতে পারার মত সুখ বোধহয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
কদর সরকার
৩য় বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ।
ক্যাম্পাসের চেনা মুখগুলোর সাথে যদি ঈদ করতে পারতাম!
ছুটির দিনগুলো সংখ্যায় অল্প হলেও ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা এক অদ্ভুত অনুভূতি। কাঠের নোটিশ বোর্ডে ঝুলানো ছোট্ট চিরকুটে লিখা ছুটির বিজ্ঞপ্তি দেখা মাত্র দৌড়ালাম বাড়ির পথে। এক দিকে মা-বাবা, ভাই-বোন ও পরিবারের সকলকে একত্রে পাওয়ার আনন্দ, অন্য দিকে ক্যাম্পাসের প্রিয় বন্ধু বান্ধব গুলোকে সাময়িক ছেড়ে আসার জন্য মন খারাপের আনাগোনা। ছুটি ছুটি করে যখন অস্থির ছিলাম তখন এদের কথা মাথায় ছিল না , যেই বাড়ির রাস্তায় বাসে চড়ে বসলাম, আনমনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের সেই মুখ গুলো মনে পড়তে লাগলো। ইস, যদি ঈদের দিনও ওদের সবাইকে পাশে রাখতে পারতাম। ভাবতে ভাবতে বাড়ি পৌছে গেলাম। বাড়ি ঢোকা মাত্র ছোট্ট বোনটা দৌড়ে এসে আপু বলে জড়িয়ে ধরলো,তার মনে এক অদ্ভুত আনন্দ! এদিকে আমার পথ চেয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আমার মা! বাড়ি ফেরার অনুভূতিগুলো এমনি অদ্ভুত মায়ার।
সামিয়া হক
২য় বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ।
আমের মুকুলের সুঘ্রাণ জানায় অভ্যর্থনা!
জ্ঞানসাধনা, অধ্যায়ন ,গবেষণা কিংবা উপার্জন নানা প্রয়োজনে মানবকুলের মাঝে গৃহত্যাগের প্রবণতা মানবকূলের পূর্বধর্ম। স্বভাবতই আমার মাঝেও এর ব্যাতিক্রম নয়। যার দরুণ বাংলাদেশ আমের রাজধানী খ্যাত সুদূর চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে জ্ঞানসাধনার নিমিত্তে এসেছি ঢাকার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাসযাত্রায় দীর্ঘ সাড়ে ছ'ঘণ্টার অধিক কালক্ষেপণের বেড়াজালে সচারাচর বাড়ি যাওয়া হয় না। তবুও মানবজাতির স্বভাবগত নিজ গৃহের প্রতি টান আমার ক্ষেত্রেও অনস্বীকার্য। আর ঈদের ছুটি এনে দেই এই সমূহ সুযোগ। ঈদের ছুটির বিজ্ঞপ্তি আসা মাত্র কালবিলম্ব না করে, তড়িঘড়ি করে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাসের টিকিট কাটতে রওনা হই। বাসে বসা মাত্রই বাসায় ফেরার মধুর কল্পনার উদ্ভব ঘটে। যথারীতি, আপন কল্পনা, সড়কপার্শ্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাধারণ মানুষের জীবন-যাপন দর্শন, শীতল বাতাসের অনুভূতি গ্রহণ এসবের মধ্য দিয়েই ছ'ঘণ্টার সুদীর্ঘ সময় পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছে যাই আমার জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বাসায় পৌঁছে দেখা পাই আমার চিরপরিচিত আমগাছগুলোর। আমের মুকুলের সুঘ্রাণ যেন আমায় স্বাগত জানাচ্ছে আপন রাজ্যে!
মৃদু জাহিদ মোল্লা
১ম বর্ষ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ।
ক্যাম্পাসের মন খারাপ
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে স্বপ্নবাজ তরুনদের পদচারণ ক্যাম্পাস জুড়ে থাকে এক ব্যস্ততার আভাস। তবে ঈদের ছুটি যেন ক্যাম্পাসের এই ব্যস্ততা ও ব্যস্তরার মাঝে ক্যাম্পাসের চিরতারুণ্যদ্বীপ্ত উদ্দীপনা ফিকে করে দেই।ক্যাম্পাস যেন বুঝে ফেলে তার ছুটির সময় হয়েছে, এবার তার ব্যস্ততার সামান্য অবসান ঘটবে। এসব ভাবতে ভাবতে রাতভর ঘুমাতে পারিনি। কখন সকাল হবে কখন বাসে উঠবো, বাড়ির পথে রওনা হবো? এমন চিন্তা করতে করতে ভোর হয়ে গেল। ভোর হতেই শুরু ঈদের ছুটিতে আমাদের বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। ব্যাগের এক কোনে রঙিন কাপড়ের ঠাই মেলে। বিদায় বেলায় ক্যাম্পাসে হাসি-ঠাট্টা ও খুনসুটির সঙ্গীদের কথা মনে করে হৃদয় একটু ভারি হয়ে আসে; বন্ধুদের উষ্ণ আলিঙ্গনে বিদায় জানিয়ে যার যার গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করি। দীর্ঘ সাত মাস পর বাড়ি ফিরছি। বাড়ি যাওয়ার জন্য মন ছটফট করছিলো। অবশেষে এসেছে কাঙ্ক্ষিত সময়, বাড়ি যাচ্ছি। বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আনমনে কল্পনা করছি বাড়ির সবার হাসিমুখগুলো। আসলে বাড়ি ফেরার আনন্দ ও উদ্দীপনার কোন ভাষা হয় না, এটি কল্পনার জগতের অনুভূতি নামক বাস্তবতা।
মুরতাজ তাসফিয়া মীম
৩য় বর্ষ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ।
এমআই