মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫

নাড়ির টানে বাড়ি নয়, থাকবেন ক্যাম্পাস পাহারায়

রোববার, মার্চ ৩০, ২০২৫
নাড়ির টানে বাড়ি নয়, থাকবেন ক্যাম্পাস পাহারায়

রাজিউল ইসলাম শান্ত:

সারা দেশ যখন ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, শহরের রাস্তাগুলোতে মানুষের ভিড়, নতুন পোশাকের ঝলকানি আর সুগন্ধি আতরের ঘ্রাণে চারপাশ মাতোয়ারা, তখনই কিছু মানুষ রয়ে যান সেই উন্মাদনার বাইরে। ঈদের আনন্দের সময়ও যাঁদের বাড়ি ফেরা হয় না, তাঁদেরই একজন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা।

ঈদ মানেই পরিবারের উষ্ণতা, প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি। কিন্তু সবার ভাগ্যে কি তা জোটে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন নাড়ির টানে ছুটে যাচ্ছেন বাড়ির পথে, তখনই কিছু মানুষ থেকে যাচ্ছেন ক্যাম্পাস পাহারায়। দায়িত্বের কাছে তাঁদের ব্যক্তিগত আনন্দের মূল্য হয়ে যায় নগণ্য।

ঈদের দিনে নিঃসঙ্গ ক্যাম্পাসের নীরবতা ভেঙে শুধু টহলদারি বুটের আওয়াজ শোনা যায়। দিনের আলো ম্লান হতে না হতেই নিরাপত্তারক্ষীরা টর্চের আলোয় খুঁজতে থাকেন প্রতিটি কোণা—কোনো অনধিকার প্রবেশ ঘটছে কি না, কোথাও কোনো সন্দেহজনক আচরণ চোখে পড়ছে কি না। তাঁরা কারও কাছে ‘মামা’, কারও কাছে ‘ভাই’, কারও কাছে ‘আঙ্কেল’। কিন্তু তাঁদের আসল পরিচয় একটাই—বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ রাখা।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখা থেকে জানা যায়, ২১ জন নিরাপত্তারক্ষীর মধ্যে ৮ জন ছুটিতে থাকলেও ১৩ জন এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। দুই শিফটে ভাগ হয়ে, ক্লান্তিহীনভাবে তাঁরা পাহারা দিচ্ছেন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা।

আমিন আহমেদ তাঁদেরই একজন। ঝালকাঠির এই মানুষটি এবারের ঈদও কাটাবেন কর্মস্থলে, পরিবারের উষ্ণতা থেকে দূরে। ঈদের দিন কেমন কাটে তাঁর? প্রশ্ন করতেই মৃদু হাসলেন।

“পরিবারের সঙ্গে ঈদ কেমন হয়, ভুলেই গেছি মনে হয়! এখানে দায়িত্ব পালন করাই আমার কাজ, আমার রুটিন।” কিছুটা থেমে আবার বললেন, “পরিবারের জন্য সব কেনাকাটা হয়ে গেছে, কিন্তু নিজের জন্য কিছু কেনা হয়নি। এখানে থাকবো, কিনে কী হবে? এখানে যারা থাকবো, তারাও আমার পরিবার। একসাথে ঈদের নামাজ পড়বো, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করবো,” বললেন একরকম আত্মতৃপ্তি নিয়ে।

দায়িত্বের ডাকে উৎসবের ত্যাগে শুধু আমিন আহমেদ নন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নিরাপত্তারক্ষী বছরের পর বছর ধরে একইভাবে ঈদ কাটিয়ে আসছেন। চাকরির নিরাপত্তা, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর দায়—সব মিলিয়ে তাঁরা উৎসবের আনন্দ ছেড়ে পাহারায় থাকেন ক্যাম্পাসের।

সত্যিই, ঈদের আসল আনন্দ তো আত্মত্যাগেই। পরিবারের সঙ্গে বসে খাওয়া না হলেও, মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ না পেলেও, তাঁদের কাছে আনন্দের সংজ্ঞা একটু আলাদা। দায়িত্ব পালন করে অন্যদের নিরাপত্তা দেওয়া—সেটাই তো তাঁদের কাছে এক নতুন ধরনের ঈদ। নীরব ক্যাম্পাসে তাঁদেরই ছায়ায় নিরাপদ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। যখন সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদের খুশিতে মেতে ওঠে, তখন এই মানুষগুলোর নিরলস শ্রমে ক্যাম্পাস থাকে সুরক্ষিত। দায়িত্বের এই অটুট শপথই তাঁদের ঈদ উপহার।

লেখক: রাজিউল ইসলাম শান্ত, শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল