সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫

গাজার অর্ধেক ইসরায়েলের দখলে, নিজভূমে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা

সোমবার, এপ্রিল ৭, ২০২৫
গাজার অর্ধেক ইসরায়েলের দখলে, নিজভূমে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

গত মার্চ মাস থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা শুরুর পর ক্রমাগত নিজেদের দখলদারত্ব বাড়িয়ে চলেছে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকার ৫০ শতাংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এর ফলে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা।

ইসরায়েলি সেনা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, গাজা সীমান্তের আশপাশে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের পরিধি দ্বিগুণ করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার সাময়িক প্রয়োজনের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজার ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল।

তবে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা অঞ্চলটির উত্তর-দক্ষিণের ভূমিকে বিভক্ত করা করিডোরটি দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।

ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে বিতাড়নের পরিকল্পনা
পাঁচ ইসরায়েলি সেনা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাফার জোনের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই চলমান।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যে দলটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন করা ট্যাংক স্কোয়াডের এক সদস্য বলেন, তারা যা কিছু পেয়েছে, তাই ধ্বংস করেছে। তাদের সামনে যা কিছু কার্যকর মনে করছে, তারা সেখানেও গুলি করেছে ...যাতে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কিছুই না থাকে। তারা আর ফিরতে পারবে না, কখনোই না।

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এবং আরও চার সেনা এপি’কে একই ধরনের কথা বলেন।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বাফার জোনে থাকা সেনাদের বিবরণ নথিভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দখলদারত্ব বিরোধী ভেটেরান্স গ্রুপ ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। হাতেগোনা কয়েকজন সেনাদের মধ্যে কয়েকজন এপির সঙ্গে আলাপও করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিকে একটি বিশাল পতিত ভূমিতে পরিণত করছে বলে জানিয়েছেন।

গোষ্ঠীটি বলেছে, ব্যাপক পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তৈরি করেছে।

সৈন্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তার দেশকে রক্ষার জন্য এবং বিশেষত ৭ অক্টোবরের হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করছে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মতে, যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলি সেনারা সীমান্তের নিকটবর্তী গাজার এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বাস করা ফিলিস্তিনিদের জোর করে সরিয়ে একটি বাফার জোন তৈরি করতে সেখানে থাকা সব স্থাপনা ধ্বংস করে।

ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে পরিচিত গাজার একটি বিশাল ভূমিও দখল করেছে। এই করিডোরটি গাজা সিটিসহ উত্তরাঞ্চলকে সংকীর্ণ ও উপকূলীয় উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গোটা গাজা উপত্যকাটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষের আবাসস্থল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা একটি মানচিত্রে দেখা যায়, গত মাসে ইসরায়েল যখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফের হামলা শুরু করে, তখন থেকে তারা বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ করেছে। কিছু জায়গায় এটি গাজার অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দখল করেছে তারা।

বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত গবেষণার অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব বলেন, বাফার জোন এবং নেতজারিম করিডোর উপত্যকাটির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এই অধ্যাপক কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূমি ব্যবহারের ধরন পরীক্ষা করে আসছেন।

গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়, যা রাফাহ শহরকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে। গাজার ওই অঞ্চলে সম্প্রতি পরিকল্পিত হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা।

ইসরায়েলি সেনারা বলেছেন, বাফার জোনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। তবে এসব এলাকায় যে ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ করেছিলেন, তাদের গুলি করা হয়েছে।

ট্যাংক স্কোয়াডে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একটি সাঁজোয়া বুলডোজার ভূমি সম্প্রসারণ করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করেছে। ট্যাংকের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলে তাকে গুলি করা হয়, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

তার দাবি, অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে। ইসরায়েলের এ সেনা আরও বলেন, আমি এখানে এসেছি, কারণ তারা আমাদের লোকদের হত্যা করেছে। এখন আমরা তাদের হত্যা করতে এসেছি। আমি বুঝতে পারছি যে, আমরা কেবল তাদের হত্যা করছি না, আমরা তাদের স্ত্রী, শিশু, বিড়াল, কুকুরকেও হত্যা করছি। ধ্বংস করছি তাদের বাড়িঘর।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, যতটা সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা আক্রমণগুলো চালাচ্ছে।

২০২৩ সালের পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল