বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

কোরাল চাষে ১ টাকা বিনিয়োগে ১ টাকা ৭০ পয়সা লাভ

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
কোরাল চাষে ১ টাকা বিনিয়োগে ১ টাকা ৭০ পয়সা লাভ

তাসনীম সিদ্দিকা:

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক প্রথমবারের মতো ভাসমান খাঁচায় কোরাল বা ভেটকি মাছ চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। এই গবেষণা উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশ ইকোফিজিওলজি ল্যাবরেটরিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সাফল্যের কথা জানান প্রধান গবেষক ও ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ (এসসিএমএফপি) প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষক দলের সহকারী হিসেবে ছিলেন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জাবেদ হাসান।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি ভাসমান খাঁচায় ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি কোরাল মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। প্রতি ঘনমিটারে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৩ থেকে ১৭ কেজি, যা পুকুর বা ঘেরে সনাতন পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদনের তুলনায় বহুগুণ বেশি (৬০০ থেকে ১,৫০০ কেজি)। শুধু তাই নয়, খাঁচায় চাষ করা মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে গড়ে ১৯ গ্রাম আমিষ পাওয়া গেছে, যেখানে সনাতন পদ্ধতির কোরালে এই পরিমাণ ১৭ গ্রাম।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান জানান, সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, কক্সবাজারের মহেশখালী এবং সুন্দরবন - এই তিনটি উপকূলীয় অঞ্চলে গবেষণাটি চালানো হয়েছে এবং প্রতিটি অঞ্চলে ১০ জনের পরিবারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। খাঁচা তৈরিতে সহজলভ্য উপকরণ যেমন প্লাস্টিকের ড্রাম, তার ও প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে।
 পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি প্রতিটি গোলাকার খাঁচার ব্যাস ছিল ৬.৭ মিটার এবং ধারণক্ষমতা ছিল ৬০ ঘনমিটার। প্রতিটি খাঁচার প্রতি ঘনমিটারে ১৫টি করে ভেটকির পোনা ছাড়া হয়েছিল।

গবেষণায় পোনা লালন-পালনের ক্ষেত্রে দুটি স্তর অনুসরণ করা হয়েছে। প্রথমত, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নার্সারি পুকুরে পোনা লালন করা হয় এবং পরবর্তীতে মাছগুলোকে পূর্ণাঙ্গ বৃদ্ধির জন্য খাঁচায় স্থানান্তর করা হয়। এই গবেষণায় ভেটকি মাছকে প্রথমবারের মতো সম্পূরক খাদ্যে অভ্যস্ত করা হয়েছে। মাছকে তিন স্তরে খাবার দেওয়া হয়েছে, যার শুরুতে মুখের আকার অনুযায়ী তেলাপিয়া মাছ কেটে ছোট করে খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে তেলাপিয়ার সাথে ৪৫% প্রোটিনযুক্ত কৃত্রিম ফিড এবং সবশেষে ৩৭% প্রোটিনযুক্ত ল্যাবরেটরিতে তৈরি খাবার দেওয়া হয়।

গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ১ টাকা বিনিয়োগে গড়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত আয় সম্ভব। প্রতিটি খাঁচা নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা, যেটি প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য। একেক খাঁচায় একবারে ১ হাজার কেজি পর্যন্ত মাছ চাষ সম্ভব। বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে খাঁচা তৈরি করা হলেও প্রান্তিক মৎস্যচাষিরা চাইলে বাঁশ বা সাধারণ জাল দিয়েও এটি তৈরি করতে পারবেন। এতে করে খরচ আরও কমানো সম্ভব।

ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক শাহজাহান এই চাষ পদ্ধতির বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম, প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষতির সম্ভাবনা কম এবং মাছ একে অপরকে খেয়ে ফেলার আশঙ্কাও থাকে না। প্রতি লিটার পানিতে ৩৫ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা পর্যন্ত এই মাছ সহজে বাঁচতে পারে। ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় নদী ও মোহনায় এই মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া নদীতে খাঁচা স্থাপন করার কারণে মাছ চাষিদের আলাদা করে জায়গার জন্য খরচ করতে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণা শুধু একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নয়, এটি উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন জীবিকার পথ খুলে দেবে।’ গবেষকদের এই সাফল্য উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং মাছ চাষের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল