নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী আখ্যায়িত করে এ ধরনের কোনো আইন বা নীতি বাস্তবায়ন না করতে সরকারকে সতর্ক করেছেন তারা। অন্যথায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার দফা দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে হেফাজত নেতারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে দেশের প্রায় সব শীর্ষ আলেমই উপস্থিত ছিলেন এই মহাসমাবেশে। এছাড়া দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন।
সকাল ৯টা থেকে মহাসমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ভোর থেকেই জনতার ঢল নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। লাখো মানুষ জড়ো হন সেখানে। এতে কানায় কানায় ভরে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
মহাসমাবেশের শেষের দিকে সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণাসহ ১২ দফা দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের দাবিগুলো হলো— বর্তমান নারী কমিশন বাদ দিয়ে নতুন করে কমিশন গঠন করে যেখানে আলেম ও উলামাদের যুক্ত করা, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পুনঃবিশ্বাস স্থাপন ও বহুত্ববাদ বাতিল করা, শাপলা চত্বরের হত্যার বিচার করা, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করে তাদের বিচার করা, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল করা, আওয়ামী লীগের আমলে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার করা, প্রাইমারি থেকে ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, রাখাইনে করিডোর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ও কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা।
এদিকে এসব দাবিতে আগামী ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
‘কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো নীতি বাস্তবায়নের সাহস করবেন না’
মহাসমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে হেফাজত নেতারা বলেন, শেখ হাসিনার মতো ভুল করবেন না। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো নীতি বাস্তবায়ন করার সাহস করবেন না। অবিলম্বে প্রতিবেদনসহ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ঘোষণা করুন। শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করুন।
বক্তারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করবে না।
বক্তারা আরও বলেন, আপনারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন করেছেন, জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার জন্য কমিশন করেছেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন, কিন্তু মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য কেন তদন্ত কমিশন গঠন করলেন না?
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হলেও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এসব মামলা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে সমালোচনা করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, সরকার নারীবিষয়ক যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন এর সদস্যরা নারী না পুরুষ তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। তাদের সংস্কার প্রতিবেদন যদি পাস করা হয় তাহলে জীবন দিয়ে রুখে দেওয়া হবে। মার্চ টু ঢাকার কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে হেফাজতে ইসলাম।
এমআই