সোমবার, ১২ মে ২০২৫

কৃষি শিক্ষা ও কৃষিবিদদের মর্যাদা রক্ষায় বাকৃবির ৬ দফা: আন্দোলনকারীদের জোরালো যুক্তি

সোমবার, মে ১২, ২০২৫
কৃষি শিক্ষা ও কৃষিবিদদের মর্যাদা রক্ষায় বাকৃবির ৬ দফা: আন্দোলনকারীদের জোরালো যুক্তি

তাসনীম সিদ্দিকা, বাকৃবি প্রতিনিধি:

দেশের কৃষি শিক্ষা, কৃষিবিদদের পেশাগত মর্যাদা এবং কৃষি প্রশাসনের কাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেছেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছেন। তাদের আন্দোলন ইতোমধ্যে রেল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে রূপ নিয়েছে। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে কেবল কৃষিবিদদের অধিকারই সুরক্ষিত হবে না, বরং দেশের কৃষি খাতের সামগ্রিক উন্নতিও নিশ্চিত হবে। তাদের উত্থাপিত প্রতিটি দাবির স্বপক্ষে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে জোরালো যুক্তি রয়েছে, যা আন্দোলনকারীরা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরছেন।


১ম দাবিঃ কৃষিবিদদের ৯ম গ্রেডে নিয়োগ ও ক্যাডার মর্যাদা প্রদান- দাবিটির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফাহাদ এনাম বলেন, 'আমরা পাঁচ বছর মেয়াদি কঠিন ও পেশাগত ডিগ্রি নিয়ে লেখাপড়া করছি, অথচ সরকারি চাকরিতে আমাদের ১০ম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই পর্যায়ের অন্যান্য পেশাজীবীরা (যেমন: ডাক্তার, প্রকৌশলী) যেখানে ৯ম গ্রেডে যোগ দেন এবং ক্যাডার মর্যাদা পান, সেখানে কৃষিবিদদের এভাবে বঞ্চিত করা অবিচার। কৃষি যদি দেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হয়, তাহলে এর দায়িত্বপ্রাপ্তদের মর্যাদাও সে অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমরা চাই, কৃষিবিদদের জন্য স্বতন্ত্র ক্যাডার গঠন হোক এবং প্রথম গ্রেডেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হোক।'

২য় দাবিঃ উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সার্ভিস স্ট্রাকচার ও কৃষিবিদ পদে পদোন্নতির সুযোগ বাতিল-
এই দাবিটির যৌক্তিকতা নিয়ে কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জুলফিকার সুলতানুল আমির বলেন, 'ডিপ্লোমাধারীরা মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তাদের সঙ্গে চার বছরের স্নাতক ও এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে আসা কৃষিবিদদের একই পদে বসানো অনৈতিক। বর্তমান কাঠামোতে কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের সরাসরি কৃষিবিদ পদে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। এটি আমাদের পেশাগত অবস্থানকে দুর্বল করে। আমরা চাই তারা নিজস্ব সার্ভিস কাঠামোর মধ্যে থেকেই পপদন্নোতি পাক, কিন্তু কৃষিবিদ পদে নয়। এতে করে পেশাগত দক্ষতা ও মর্যাদা উভয়ই বজায় থাকবে।'

৩য় দাবিঃ কৃষিবিদ পদে সরাসরি নিয়োগে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা- দাবিটির পেছনে যুক্তি দিতে গিয়ে
কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. কাজিম আল কোরায়েশী বলেন, 'যে ছেলেমেয়েরা পাঁচ বছর কৃষি বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করেছে, তাদের তুলনায় ভিন্ন বিষয় থেকে আসা কেউ কীভাবে কৃষিবিদ পদে নিয়োগ পেতে পারে? মাঠপর্যায়ের কাজ বুঝতে হলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মতো গভীর প্রস্তুতি দরকার। আমরা দাবি করছি, কৃষিবিদ পদে নিয়োগে কেবল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পাস করা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে চাকরির গুণগত মান যেমন বাড়বে, তেমনি কৃষি সেবাও আরও কার্যকর হবে।'

৪র্থ দাবিঃ ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে- এ দাবিটির যৌক্তিকতার প্রতি বিশেষ জোর দিয়ে কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুল্লাহ মেজবাহ বলেন, 'দেশে নতুন একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা চলছে, যেটি শুধুমাত্র ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলছে। এটি হলে দেশের কৃষি শিক্ষার মান একদিকে যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আসতে হয়। এই মানদণ্ড না মেনে অন্যভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে তা শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গঠিত হবে, একাডেমিক নয়।'

৫ম দাবিঃ কৃষিবিদদের জন্য স্বতন্ত্র প্রমোশন পলিসি প্রণয়ন করতে হবে- এ দাবির বিষয়ে কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল আলম বলেন, 'বর্তমানে আমাদের পদোন্নতির কাঠামো এতটাই দুর্বল যে দীর্ঘদিন চাকরিতে থেকেও অনেক কৃষিবিদ তেমন কোনো উচ্চপদে যেতে পারেন না। শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি নিশ্চিত করার মতো স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। একইসঙ্গে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেন প্রশাসনিক দপ্তরে কৃষিবিদরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারেন। এর মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের পরিকল্পনা আরও বাস্তবভিত্তিক হবে।'

৬ষ্ঠ দাবিঃ কৃষিবিদদের একাডেমিক ও পেশাগত মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি না থাকলে কৃষিবিদ উপাধি ব্যবহার করা যাবে না- দাবিটির বিষয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাইন হোসেন বলেন, 'আমরা দেখি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একাডেমিক ডিগ্রির পাশাপাশি পেশাগত মর্যাদা আলাদা করে স্বীকৃত। অথচ কৃষিবিদদের ক্ষেত্রেও একই রকম উচ্চতর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও সে মর্যাদা দেওয়া হয় না। কৃষিবিদদের ‘ডা.’ বা ‘ইঞ্জি.’ এর মতো কোনো উপাধি নেই, নেই পেশাগত আলাদা পরিচয়। আমরা চাই, আমাদের পেশাগত পরিচয় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাক এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত ডিগ্রিকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হোক। পাশাপাশি কৃষিবিদ উপাধী ব্যবহার করতে হলে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে। ডিপ্লোমাধারীরা কৃষিবিদ উপাধী কিছুতেই ব্যবহার করতে পারবে না।'


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল