নুসরাত নাঈম সাজিয়া, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি:
রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ডিজিটাল স্ক্রলিং বোর্ডে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও আসবে ভয়ংকর রূপে, সাবধান’ এই বার্তা ভেসে ওঠার ঘটনাটি সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন। ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর বিকেলে এ ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ঘটনার পরপরই কলেজ প্রশাসন জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিল। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যুহুর আলী জানিয়েছিলেন, দোষী ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইটি বিভাগের পক্ষ থেকেও প্রযুক্তিগত সহায়তায় তদন্ত চালানোর কথা জানানো হয়।
তবে সময় গড়িয়েছে সাত মাস, কিন্তু তদন্তে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোষী ব্যক্তির পরিচয়, ঘটনার কারণ কিংবা ভবিষ্যৎ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ কোনো কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ একপ্রকার নিশ্চুপ অবস্থান নিয়েছে।
ঘটনার দিন আইটি ইনচার্জ দাবি করেছিলেন, বিকেল ৫টার দিকে তিনি অফিসের কম্পিউটার বন্ধ করে চলে যান এবং তার ধারণা, বহিরাগত কেউ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই বার্তা স্ক্রলে প্রচার করেছে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায় এত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কীভাবে এমন নিরাপত্তা ভঙ্গ সম্ভব হলো?
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকের ভাষ্য, প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা দ্রুত তদন্তের আশ্বাস পেয়েছিলাম। কিন্তু সাত মাসেও কেউ শনাক্ত না হওয়া হতাশাজনক। ভবিষ্যতে যদি আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা নিরাপদ থাকব কীভাবে?
রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির জানান, ঘটনার পরপরই আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে কলেজ প্রশাসনকে জানাই। তারা আমাদের সহায়তার প্রশংসা করে এবং তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরে আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। এতে আমরা চরমভাবে আশাহত।
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, ঘটনার পেছনে ফ্যাসিবাদী সরকারের ভয়ের রাজনীতির প্রতিফলন রয়েছে। ছাত্রশিবির ঘটনার পরপরই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় এবং অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে সহায়তা করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। প্রয়োজনে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।
প্রশাসনের দীর্ঘ নীরবতা ও তদন্তে অগ্রগতির অভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এটি কি প্রশাসনিক গাফিলতি, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল?
তৎকালীন তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, প্রিন্সিপালের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি সেই আমলেই। আমি রিপোর্ট করে সুপারিশ মালা দিয়েছি এই পর্যন্ত আমার দায়িত্ব। প্রিন্সিপাল এটার ব্যবস্থা করবে কি করবে না সেটাতো আমি বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মু যুহুর আলী বলেন, যে ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে আমরা সেই সময় সনাক্ত করেছি। পুলিশ প্রশাসনকে ও জানিয়েছি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পরবর্তীতে কাজের চাপে আর সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে বর্তমানে প্রশাসনই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে।