বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

বিদায় বন্ধু বিদায়

বাবলীর পাশে শেষ কয়েক ঘন্টা: তপন কুমার পালিত

মঙ্গলবার, জুলাই ৬, ২০২১
বাবলীর পাশে শেষ কয়েক ঘন্টা: তপন কুমার পালিত

তপন কুমার পালিত: সাঈদা নাসরীন বাবলী ২০০২-২০০৩ শিাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাথে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়। পরবর্তী বছর ভর্তি পরীা দিয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে আবারও ইতিহাস বিভাগে ফিরে আসে। সে হিসেবে বাবলী আমার সহপাঠী বন্ধু। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে আমরা দুজন একই সাথে ২০১৩ সালে যোগদান করি। মনের দিক থেকে সত্যিকারের অসাধারণ একজন মানুষ ছিলো বাবলী। সবসবময় হাসিখুশি থাকতো। ছাত্রছাত্রী এবং সহকর্মীদের মধ্যে নিজগুণে ছিল জনপ্রিয়। 

গত মাসের ২৪ তারিখ ছিলো ওর পিএইচডি সেমিনার। এই নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলো। এরমধ্যে ২০ জুন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় ‘আমি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছি’। এই স্ট্যাটাস দেখে আমি মনে করেছিলাম হয়তো পিএইচডি নিয়ে চিন্তায় এমন লিখেছে। তাই কমেন্টে লিখেছিলাম তোমার তো এখন মরার সময় থাকার কথা না, সেমিনারের প্রস্তুতি নাও। কিছুণ পর দেখলাম লিখেছে প্রচণ্ড জ্বর। এরপর ওর ফোনে কল করে আর পাইনি। 

পরবর্তী ঘটনা আপনারা সকলেই জানেন। ও আসলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। আমাদের ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা ওর জন্য প্রতিনিয়ত দোয়া করেছেন। এবং সকলেও দোয়ায় কিছু সুস্থও হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে আবার ব্রেনস্টোক করে অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে যায়। তারপরও আমরা আশায় ছিলাম সকলের দোয়া ও ওর নিষ্পাপ ছেলেটার জন্য হয়তো আমাদের মধ্যে ফিরে আসবে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার (৬/৭/২১) দুপুরে ডাক্তার দ্বীন মোহাম্মদ এসে দেখে বলেছিলেন যে ওর ব্রেন আসলে ডেড। এই অবস্থা থেকে ফিরে আসার কোনো রেকর্ড নেই। এখন পরিবার ইচ্ছে করলে এইভাবে কোমায় রাখতে পারেন। কিন্তু সেটা আসলে ওকে কষ্ট দেয়াই হবে। তাই পরিবারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। 

কাল (মঙ্গলবার) দুপুর ১টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক বাশার ভাইয়ের সাথে ছিলাম। তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া কতটা কষ্টকর তা বুঝতে পেরেছি। ভিতরে ঢোকে যখন দেখলাম ওর বুক ওঠানামা করছে মানে ওর প্রাণ আছে। তখন আসলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু আসলে এই শ্বাসপ্রশ্বাস ছিলো কৃত্রিম। তাই পরিবারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ওকে দেখারপর বুঝা গেছে আসলে নিষ্প্রাণ দেহ কিন্তু শ্বাস চলছে। যাইহোক শেষ পর্যন্ত রাত ৮টার দিকে সিদ্ধান্ত হয় যে আর কোনো আশা নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওর স্বামীর বন্ডসই ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিতে সম্মত ছিল না। আর বাশার ভাইয়ের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত দেয়া ছিলো খুবই কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সিদ্ধান্তে রাত ১১টার দিকে বলা হয় যে, আস্তে আস্তে মেডিসিনের পরিমাণ কমিয়ে দিলে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর সকালে বাড়িতে নেয়া হবে। ডাক্তার বলেছিলেন মেডিসিন কমিয়ে দিলে ১-২ ঘন্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে। 

সেই সময়ে হাসপাতালে পরিবারের সাথে ইতিহাস বিভাগের মোহাম্মদ সেলিম স্যার, মামুন ভাই, বেলাল ভাই, নাসির ভাই, হাসান ভাই, মুর্শিদা আপু, শাহিদ, সামাদ, খালেদা, হৃদয়, বাংলা বিভাগে আদিত্ত, ভূগোলের কাদের ভাই, সাংবাদিকতা বিভাগের জাকারিয়াও ছিলো। এই সিদ্ধান্তের পর আমরা বাশার ভাইসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিচে চলে আসি। এরপর বাসায় আসার পর ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা ফোন করছিলেন। এই নির্মম সত্য আপনাদের বলার মতো শক্তি আমার ছিলো না। তাই বিস্তারিত না বলে শুধু বিদায় জানিয়ে ছিলাম। পরবর্তীকালে রাত ৪টায় বাবলী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্ডসই করা হয়ে গিয়েছিলো তাই আর কিছু করার ছিলো না। ডাক্তাররা কোনো আশার বাণী শুনাননি। যদি উনারা বলতেন ১% সম্ভাবনাও আছে তা হলেও পরিবার শেষ চেষ্টা করতো। যেহেতু কোনো কিছুই করার ছিলো না তাই শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
আমাদের প্রিয় সহকর্মী বাবলীর  আত্মার শান্তি কামনা করছি। বাবলীর এই চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। 

সকলে সাবধানে থাকবেন, ভালো থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদা নাসরীন বাবলী আজ বুধবার ভোর ৪টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে এক শিশুপুত্র, স্বামীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।

সাঈদা নাসরিন সিরাজগঞ্জের হামিদিয়া পাইলট গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক প্রাপ্ত বাবলী ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হন। বিসিএস চাকরি না করে শিক্ষকতায় যোগ দেন।

লেখক: তপন কুমার পালিত, সহকারী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সময় জার্নাল/আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল