নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আবারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে বিএনপির পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে হুঁশিয়ারি করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এর আগে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করে দলটি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিগগির জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’
এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘যে বিষয়গুলো এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সে বিষয়গুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মতো উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। সেক্ষেত্রে অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কি না- তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।’
ঐক্যের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা এক বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।’
এসময় সরকারে থাকা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা- যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম। অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নুতন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বুঝে, উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের র্নিদলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।’