শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

এর পর কী...

শুক্রবার, মে ২৩, ২০২৫
এর পর কী...

প্রফেসর ড. শেখ আকরাম আলী:

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কিন্তু বর্তমানকে দেখে আমরা ভবিষ্যতের কিছুটা আঁচ করতে পারি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও বিভ্রান্ত। আমরা কি সঠিক পথে এগোচ্ছি? — এ প্রশ্ন এখন জাতির মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্ভবত আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি না; বরং আরও বহু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছি। লক্ষণগুলো মোটেও শুভ নয় এবং কেউ জানে না আগামীকাল কী ঘটতে যাচ্ছে। এরপর কী হবে — তা কেউ জানে না।

একটি জাতি অনিশ্চয়তার মধ্যে বাঁচতে পারে না, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই বলা যায় আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এর জন্য কে দায়ী? — তা জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিত। যখন একটি সরকার অন্যদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়, তখন তাদের ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে জাতিকে তার খেসারত দিতে হয়। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের কাজের অগ্রাধিকার নিয়ে দ্বিধান্বিত বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। রাজনীতি একটি জটিল বিষয়, যার জন্য গভীর মনোযোগ প্রয়োজন।

বর্তমান সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে, কিন্তু দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। ড. ইউনুসের মতো একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব পেয়ে জাতি ভাগ্যবান, কিন্তু তার দলের কিছু সদস্য জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলো কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একজন উপদেষ্টা হিসেবে কেউ যদি নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করেন, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর যারা বয়সজনিত কারণে বা অযোগ্যতার কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না, তাদের জায়গায় তরুণ ও কর্মক্ষম ব্যক্তিদের অবিলম্বে আনা উচিত।

পেশাদার এনআরবি (বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি) ব্যক্তিদের সেবা নেওয়াতে আপত্তি নেই, তবে জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব এমন কারও হাতে দেওয়া উচিত নয়, যিনি এ বিষয়ে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ নন। ড. খলিলুর রহমান ড. ইউনুস সরকারের জন্য বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুধু জনগণের সামনে সরকারকে বিতর্কিতই করেননি, বরং নিজেকেও অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। আবার, এনআরবি হওয়া সত্ত্বেও ড. আলী রিয়াজ জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নন। তারা দুজনই নিঃসন্দেহে মেধাবী, কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ নিয়ে তাদের বাস্তব ও নিরপেক্ষ জ্ঞান সীমিত। এর ফলেই অনেক কিছু ভুল হয়েছে এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে — এমন আশঙ্কা সামরিক কর্তৃপক্ষকেও উদ্বিগ্ন করেছে। রাখাইন জনগণের জন্য মানবিক করিডোর তৈরির খবরেও জাতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব দেশের রাজনৈতিক চিত্রপট সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। জনগণ ড. ইউনুসের নেতৃত্বে একটি ভালো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখেছে এবং সরকার সম্পর্কে আস্থা পেয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ সেই আস্থা হারাচ্ছে, এবং অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তিতে ভুগছে।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জনতার আকাঙ্ক্ষা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে এবং তারা জাতীয় ঐক্য ভুলে নিজেদের স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে। বিএনপি ও জামাত দল দুটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক লক্ষ্য দ্বারা বিভ্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। জাতি তাদের কাছ থেকে পরিপক্ক রাজনীতি আশা করেছিল, কিন্তু তাদের রাজনীতিতে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখছি। সদ্য গঠিত এনসিপি (নতুন রাজনৈতিক দল) তাদের প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপেই অপরিপক্কতা দেখিয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এবং অনেকেই ইতিমধ্যে তাদের ‘শিশু দল’ বলে অভিহিত করছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং তাদের শুরুটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। তাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং নিজেদের সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্বিগ্ন করেছে এবং তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা বুঝতে পেরেছে যে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। এটি দেশের টেকসই রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভালো লক্ষণ।

বাংলাদেশ আজ এক বাস্তব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা অতীতে কখনো অভিজ্ঞতায় আসেনি। বিএনপিকে অবশ্যই বিচক্ষণতা ও পরিপক্কতা দিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে তারা বিদেশি শক্তির আধিপত্যবাদী রাজনীতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে, এবং আবারও জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারে। এই রূপান্তরের সময়ে তাদের নেতৃত্বকে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। জামাত ও এনসিপি'র উচিত জাতীয় ঐক্য গঠনে এগিয়ে আসা, যাতে দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে, আর রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের উচিত তাদের ‘গ্রাহক’ অর্থাৎ জনগণ ও দেশের জন্য কাজ করা। দেরি হলেও ভালো, না করার চেয়ে। এরপর যা আসা উচিত তা একটাই
জাতীয় ঐক্য যাতে ভবিষ্যতের সব চ্যালেঞ্জকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়।

দীর্ঘজীবী হোক ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল