আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভিয়েতনামের অর্থনীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের জন্য ঈর্ষার কারণ হতে পারে। গত ১৫ বছরে এটি বার্ষিক গড়ে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি দেখছে। তারপরেও এটি এখন একটি মৌলিক সংস্কারের জন্য জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
৫০ বছর আগে শেষ হওয়া যুদ্ধের পর ভিয়েতনামের অর্থনীতি অনেকদূর এগিয়েছে। প্রথমদিকে কমিউনিস্ট সরকার বেসরকারি খাতকে লিকুইডেট করার চেষ্টা করেছিল। এর ফল ছিল ঘাটতি, রেশনিং এবং দুর্ভিক্ষ। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক সংকটে ভিয়েতনামের সাহায্য কমে যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৪৪৫ শতাংশে পৌঁছায় এবং অর্ধেক ভিয়েতনামী দারিদ্র্যে বসবাস করতো।
গত ৪০ বছরে ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি ১৮ গুণ বেড়েছে এবং দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভিয়েতনামের সস্তা শ্রম, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ নানা কারণে প্রচুর কারখানা নির্মাণ করেছে।
তবুও দেশটির এই অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে থাকা শক্তিগুলো এখন ধীর বা বিপরীত দিকে যাচ্ছে। সস্তা শ্রমের উৎস কমে আসছে এবং মজুরি বাড়ছে। যুক্তরাষ্টের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের পরিবর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন। আমেরিকা এবং চীন ভিয়েতনামের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। কিন্তু উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিদেশি কারখানাগুলোই ভিয়েতনামের সাম্প্রতিক সমৃদ্ধির মূল ভিত্তি। ২০২৩ সালে বার্ষিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলার। সে বছর বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো মোট দেশজ উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। যেখানে ১৯৯৫ সালে তা ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হচ্ছে স্যামসাংয়ের। এর কারখানাগুলোতে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার কর্মচারী কাজ করে এবং তারা স্যামসাং-এর অধিকাংশ স্মার্টফোন অ্যাসেম্বল করে। ২০০৭ সাল থেকে দেশটির রপ্তানি আটগুণ বেড়ে বছরে ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে ভিয়েতনাম লুইস টার্নিং পয়েন্ট-এ পৌঁছেছে, যেখানে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো গ্রামীণ শ্রমের উদ্বৃত্ততা শেষ করে এবং মজুরি দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রতিবছর ১০ লাখ কৃষি সম্পর্কিত চাকরি হারিয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিখাতে শ্রম খরচ এরই মধ্যে ভারত বা থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি এবং ২০২৯ সালের মধ্যে তা আরও ৪৮ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এর ফলে ভিয়েতনাম একটি ক্লাসিক মিডেল-ইনকাম ট্র্যাপ-এ পড়ে যেতে পারে।
অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলো আরও আশঙ্কার বিষয়। শুধু অপ্রয়োজনীয় গ্রামীণ শ্রমিক নয়, ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মক্ষম জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশের বয়সও বেড়ে যাবে। হো চি মিন সিটি এবং হ্যানয় বিশ্বে সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেকং ডেল্টার উর্বর কৃষিজমি প্রতি বছর ৫০০ হেক্টর হারে কমছে। আর সবচেয়ে বড় হুমকি ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক। বিনাক্যাপিটাল-এর মাইকেল কোকালারি অনুমান করেছেন যে এসব ট্যারিফ দীর্ঘমেয়াদে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দেবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট