মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন:
অন্যান্য বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) দক্ষ গ্রাজুয়েটের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। চাকরির বাজারে গিয়ে 'অদক্ষতা', 'নামমাত্র সার্টিফিকেট ধারী'র মতো কথা শুনতে হয় এখানকার শিক্ষার্থীদের।
বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, যেখানে শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান নয়, প্রয়োজন সফট স্কিল, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি। এজন্য হাবিপ্রবিতে পাঠ্যক্রমে প্রজেক্ট-ভিত্তিক শিক্ষা, ইন্ডাস্ট্রি ইন্টার্নশিপ এবং কর্মমুখী প্রশিক্ষণের সুযোগ আরও বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
বর্তমানে বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি প্রজেক্টের অধীনে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার বেজড সফট স্কিল প্রশিক্ষণ। তবে হাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনতে সক্ষম নন এবং দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেনা। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতার কারণেও নিজের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ গ্রাজুয়েট হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়ন, শিল্প-অ্যাকাডেমিয়া সংযোগ এবং বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থীদের মাঝে সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা ও উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তুললে তারা শুধু চাকরি প্রত্যাশী নয়, বরং চাকরি দাতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন কারণে তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। এবং ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের আরও প্রয়োজন রয়েছে, যা চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, "আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু গ্র্যাজুয়েট নয়, বরং দক্ষ ও নেতৃত্বদানে সক্ষম ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্যে ল্যাব আধুনিকায়ন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক চুক্তি এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সহযোগিতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তারা আরো বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু সার্টিফিকেটধারী গ্রাজুয়েট না হয়ে হোক দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং আত্মবিশ্বাসী।
বর্তমান বিশ্বের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। এজন্য হাবিপ্রবিতে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ইনকিউবেশন সেন্টার ও স্টার্টআপ সহায়তা প্ল্যাটফর্ম চালু করা হলে শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী প্রকল্পে অংশ নিতে উৎসাহিত হবে।
এমআই