স্পোর্টস ডেস্ক:
আলভারো মোরাতার শট দিয়োগো কস্তা ফিরিয়ে দেওয়ার পর সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় পর্তুগালের। রুবেন নেভেসের শট জালে যেতেই চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে উদযাপনে মাতেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোরা। জমজমাট ফাইনালে স্পেনকে টাইব্রেকারে নেশন্স লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেন তারা।
আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় রোববার মূল ম্যাচ ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হয় ২-২ সমতায়। টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জিতে যায় পর্তুগাল।
পর্তুগালের হয়ে নেভেসের আগে জালের দেখা পান গন্সালো রামোস, ভিতিনিয়া, ব্রুনো ফের্নান্দেস ও নুনো মেন্দেস।
স্পেনের হয়ে প্রথম তিন শটে জালে দেখা পান মিকেল মেরিনো, আলেক্স বায়েনা ও ইসকো। অধিনায়ক আলভারো ব্যর্থ হন ঠিকানা খুঁজে নিতে।
এর আগে মূল ম্যাচে মার্তিন জুবিমেন্দি ও মিকেল ওয়াইরসাবালের গোলে দুইবার এগিয়ে যায় স্পেন। নুনো মেন্দেস ও রোনালদোর গোলে দুইবারই সমতা ফেরায় পর্তুগাল।
ম্যাচে বল দখল, গোলের জন্য শট ও লক্ষ্যে রাখা- এই সব সূচকে এগিয়ে ছিল স্পেন। ৬১ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১৬টি শট নিয়েছিল তারা, এর ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। অন্য দিকে পর্তুগালের সাত শটে জালে যাওয়া দুটি শটই ছিল কেবল লক্ষ্যে।
ম্যাচে চারটি দারুণ সেভ করা কস্তা টাইব্রেকারে মেলে ধরলেন নিজেকে। তার বীরত্বে নেশন্স লিগে প্রথম দল হিসেবে একাধিক শিরোপা জিতল পর্তুগাল। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রথম আসরে শিরোপা জিতেছিল পর্তুগাল।
বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে পঞ্চম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় পর্তুগাল। ব্রুনো ফের্নান্দেসের কর্নারে অরক্ষিত জোয়াও নেভেস ভলি রাখতে পারেননি লক্ষ্যে।
স্পেন নিজেদের প্রথম ভালো সুযোগ পায় পঞ্চদশ মিনিটে। নিকো উইলিয়ামসের কাট ব্যাকে ডি বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়ে যান পেদ্রি। বার্সেলোনার তারকা মিডফিল্ডার শট রাখতে পারেননি লক্ষ্যে।
দুই মিনিট পর প্রায় একই জায়গা থেকে উইলিয়ামসের শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। নষ্ট হয় স্পেনের আরেকটি সুযোগ।
গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। লামিনে ইয়ামালের ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেননি রুবেন দিয়াস। উইলিয়ামসের চ্যালেঞ্জের মুখে বল ধরতে পারেননি পর্তুগাল গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা। অনায়াসে জাল খুঁজে নেন অরিক্ষত জুবিমেন্দি।
পাঁচ মিনিট পর নুনো মেন্দেসের নৈপুণ্যে সমতা ফেরায় পর্তুগাল। পেদ্রো নেতোর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন পিএসজি ডিফেন্ডার।
২৯তম মিনিটে ফের এগিয়ে যেতে পারত স্পেন। ইয়ামালের দারুণ ক্রসে উইলিয়ামসের চ্যালেঞ্জের মুখে বলের নাগাল পাননি কস্তা। কিন্তু বলের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তরুণ স্প্যানিশ উইঙ্গার।
এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় স্পেন। ৪৫তম মিনিটে পেদ্রির দুর্দান্ত রক্ষণ চেরা পাস ধরে ঠাণ্ডা মাথায় জাল খুঁজে নেন ওইয়ারসাবাল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্পেনের জালে বল পাঠান ব্রুনো ফের্নান্দেস। কিন্তু ৪৯তম মিনিটে পেদ্রো নেতো অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল।
পাঁচ মিনিট পর ডি বক্সের বাইরে থেকে ফাবিয়ান রুইসের গতিময় শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান কস্তা।
৬১তম মিনিটে সমতা ফেরান রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতার এটি ১৩৮তম গোল। মেন্দেসের ক্রস একজনের পায়ে লাগলে পেয়ে যান পর্তুগিজ অধিনায়ক। সহজ সুযোগ কাজে লাগান তিনি।
আট মিনিট পর পেদ্রির কাছ থেকে বল পেয়ে একটুর জন্য শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি উইলিয়ামস।
ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমে জালের দেখা প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন ইসকো। তবে ৮৩তম মিনিটে তার গতিময় শট ঝাপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান পর্তুগিজ গোলরক্ষক।
৮৭তম মিনিটে হুট করে মাঝ মাঠে বসে পড়েন রোনালদো। ইশারায় জানিয়ে দেন তার পক্ষে আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরের মিনিটে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক, বদলি নামেন গন্সালো রামোস।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ফের্নান্দেসের দারুণ ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমোন। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। রোনালদোর গোলের পর লম্বা সময়ের মধ্যে এটাই ছিল গোলের জন্য পর্তুগালের প্রথম শট।
অতিরিক্তি সময়ের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত রোনালদো। নেলসন সেমেদোর কাছ থেকে বল পেয়ে একটুর জন্য শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেন্দেস। নষ্ট হয় সুবর্ণ সুযোগ।
শুরুতে বেশ কিছুক্ষণ পর্তুগিজদের আক্রমণ সামাল দিয়ে পাল্টা আক্রমণে যায় স্পেন। তৈরি করে বেশ কিছু সুযোগ। কিন্তু জালের দেখা পায়নি তারা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ইসকো, মোরাতাদের হৃদয় ভেঙে শিরোপা জিতল পর্তুগাল। ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে রোনালদোর হাতে ধরা দিল আরেকটি দারুণ অর্জন।