মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বৈবিছাআ-হাবিপ্রবি) শাখার আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন তপু; বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ; গত ১২ জুন ১৯ তম বার রক্ত দিয়েছেন।
১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। রক্তদান শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং মানবতার সর্বোচ্চ নিদর্শন—এই মন্ত্রে বিশ্বাসী যুবক তোফাজ্জল হোসেন তপু ২০১৬ সালে সিজারিয়ান এক মা'কে রক্তদানের মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু, আজ পর্যন্ত তিনি ১৯ বার রক্তদান করে ছুঁয়ে গেছেন এক অসাধারণ মানবিক উচ্চতা। যখনই কারও রক্তের প্রয়োজন হয়েছে, নিজের ক্লাস, পরীক্ষার তোয়াক্কা না করে ছুটে গেছেন হাসপাতালে।
তোফাজ্জল হোসেন তপু আর্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত প্রাণ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যায় মানবতার নজির রেখেছেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যবস্থা, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, সর্বপরি হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করছেন তিনি এবং তার সহযোগীবৃন্দেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, "তপু ভাই প্রমাণ করেছেন, মানবতার জন্য কাজ করতে রাজনীতি বা পদ-পদবির প্রয়োজন নেই—প্রয়োজন শুধু একটি সচেতন মন আর উদার হৃদয়ের।"
তপুর এই মানবিক ভূমিকা প্রসঙ্গে ৭৫ বার রক্তদানের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান খোকন বলেন, “তপুর মতো শিক্ষার্থীরা সমাজের জন্য আলোর পথ দেখায়। তার এই ভূমিকা অনুকরণীয়।”
তপু বলেন, "কুলি, মজুর, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সবার ভ্যাটের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, অনেক সুযোগ সুবিধা পাই। তাই তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করতে না পারলেও রক্তদান কিংবা অন্যভাবে তাদের পাশে দাড়াতে পারিই। আর সবকিছু মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য।" অনেকেই রক্তদানে ভয় পান। তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, যারা রক্ত দিতে ভয় পায় তাদের কে বলবো আপনারা সাহস নিয়ে রক্ত দেয়া শুরু করুন, এতে শরীরের যেমন উপকার তেমনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি ও আসে।
দানেশ ব্লাড ব্যাংকের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, "এই গল্প শুধু এক ছাত্রের রক্তদানের কাহিনি নয়—এটি আশার, ভালোবাসার, এবং দায়িত্ববোধের গল্প। আমরা চাই, প্রতিটি তরুণ তার মতো এগিয়ে আসুক রক্তদানে, কারণ ‘রক্তদাতা মানেই জীবনদাতা’।”
ওই সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. খালেদ হোসেন বলেন, "রক্ত দিয়ে কারও জীবন বাঁচানো একটি অত্যন্ত মহত কাজ। এই মহত কাজে যাঁরা নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে তাঁদের জীবন সাফল্যে ভরে উঠুক, এই প্রার্থনা করি।"
এমআই